বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যে উৎপলকান্তি বড়ুয়া উজ্জ্বল এক নাম।সাহিত্যের নানা শাখায় তাঁর সাবলীল বিচরণ হলেও শিশুসাহিত্যিক হিসাবে তিনি সমধিক পরিচিত।ছোটদের জন্য লিখেছেন প্রচুর ছড়া,কবিতা ও গল্প। দেশের পত্র- পত্রিকায় প্রতিনিয়ত তাঁর লেখা প্রকাশিত হয়।ছড়াকার হিসাবে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য এক উচ্চতায়। উৎপলকান্তি বড়ুয়ার জন্ম ১৯৫৯ সালের ১৯ মার্চ চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলার সিলোনিয়া নামক গ্রামে। পিতা : ডা. প্রবোধ চন্দ্র বড়ুয়া মাতা : গৌরিশ্রী বড়ুয়া লক্ষ্মী ওস্ত্রী : জবা বড়ুয়া। পেশাগতভাবে তিনি সাংবাদিকতা ও লেখালেখির সাথে জড়িত আছেন । চট্টগ্রামের দৈনিক পূর্বদেশের শিশুতোষ পাতা ডানপিটে তিনি সম্পাদনা করেন। সংবাদের খেলাঘর-এর পাতায় ৬ মে ১৯৭৬ইং তাঁর প্রথম লেখা প্রকাশিত হয়।এ পর্যন্ত তাঁর ছড়া, কিশোরকবিতা, গল্পগ্রন্থ মিলে মোট ২২ টি (বাইশটি) গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। লেখালেখির জন্য তিনি অনেক পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্য পুরস্কার: ১. সবুজ আসর শ্রেষ্ঠ পুরস্কার (১৯৮২) ২. আমরা দশজনা সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৫) ৩. গাঙচিল শ্রেষ্ঠ পুরস্কার (২০০৪) ৪. কথন শিশুসাহিত্য পুরস্কার (২০১২) ৫. আমাদের পাঠশালা শিশুসাহিত্য সম্মাননা (২০১৫) ৬. কিডস্ শিশুসাহিত্য সম্মাননা (২০১৫) ৭. সাংবাদিক হাবিবুর রহমান স্মারক সম্মাননা (২০১৭) ৮. বাংলাদেশ শিশুসাহিত্য একাডেমি সম্মাননা (২০১) ৯. স্বকাল শিশুসাহিত্য পুরস্কার (আমার স্বপ্ন আমার দেশ কিশোরকাব্যগ্রন্থের জন্য) (২০১৯) ১০.সৈয়দ শামসুল হক স্মৃতি সম্মাননা (২০২০)। ছড়াকার উৎপলকান্তি বড়ুয়া শৈলী টিভি অন লাইন পেপারের প্রখম মুখোমুখি হয়েছেন এবং এবং প্রকাশ করেছেন ছড়া সাহিত্য ও লেখালেখি সম্পর্কে তাঁর একান্ত কিছু ভাবনা। সাক্ষাৎকার গ্রহণে : বাসুদেব খাস্তগীর।
প্রশ্নমালাঃ ১.শৈলী অনলাইন পেপারে আপনার প্রথম সাক্ষাৎকার। এ সম্পর্কে আপনার অনুভূতি কী?
উত্তরঃ আমার জানামতে বাংলাদেশে শৈলী অনলাইন পেপার এমন গুরুত্বপূর্ণ এবং যুগোপযোগী কার্যক্রম শুরু করেছে সর্বপ্রথম। এই কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে পেরে অবশ্যই ভালো লাগছে আমার এবং নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি।
২.দেশের একজন খ্যাতিমান ছড়াকার আপনি। বাংলাদেশে ছড়া সাহিত্যের চর্চা সম্পর্কে বলুন।
উত্তরঃ বাংলাদেশের ছড়া চর্চা সম্পর্কে অনেককে ইদানিং বেশ হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায়। ছড়া লেখক বেড়েছে ইদানিং উল্লেখযোগ্য হারে। সবার ছড়া যে সে হারে ছড়া হয়ে হয়ে উঠছে তা বলছি না। তবে তাদের মধ্যে যে বেশ ভালো ছড়াও লেখা হচ্ছে এ কথা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। এই যে ছড়া নিয়ে কাজ, লেখালেখি, চর্চা- এটাও মন্দ কি! ছড়া সাহিত্যের জন্য আমি বলবো, এটা উজ্জ্বল রঙিন সুবর্ণ সময়। বাংলাদেশের ছড়াসাহিত্য শ্রেষ্ঠ সময় অতিক্রম করছে এখন।
৩.সাহিত্যে ছড়ার অবস্থানকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করেন?
উত্তরঃ সবাই জানি, ছড়া -সাহিত্যের আদিমাতা। এই অঙ্গনে প্রবেশের প্রথম প্রহরে জেনেছি তা। ঠিক তখন থেকে বর্তমান সময় এমনকি ভবিষ্যৎ-আজীবনকালও ছড়ার মূল্যায়ন আমার কাছে অত্যন্ত সম্মানের এবং সর্বাগ্রে। যিনি ছড়া লিখেন, ছড়া সাথে জড়িয়ে আছেন তিনি আমার কাছে সাহিত্যের অগ্র- অনন্যজন।
৪. সাম্প্রতিককালে আমাদের দেশে ছড়া সাহিত্যের অগ্রগতি ও সাম্প্রতিক কালের ছড়াকারদের নিয়ে আপনার বক্তব্য কী?
উত্তরঃ আগেই বলেছি, বর্তমান সময়টা ছড়া চর্চার সর্বোৎকৃষ্ট সময়কাল অতিক্রম করছে। সঙ্গতকারণেই সাম্প্রতিক কালের ছড়াকাররা অনেক পরিশ্রমী, চিন্তাশীল, কৌশলী এবং সচেতন। সবার বেলায় যে একইরকম বক্তব্য তা হয়তো নয়। তবে বেশিরভাগ ছড়াকাররাই সচেষ্ট তাদের দায়িত্ব পালনে।
৫. লেখালেখির শুরুটা কীভাবে?
উত্তরঃ স্কুলের দেয়ালিকায় ছোট বোনের জন্য, তার পীড়াপিড়িতে কবিতা বা ছড়া যা-ই বলি, লিখে দিতে গিয়েই প্রথম লেখার সূচনা। এ ছাড়া, এর আগে থেকেই জানতাম, সুজন বড়ুয়া (কিশোর কবিতার বরপুত্র, ছড়াকার, শিশুসাহিত্যে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত) লেখালেখি করেন, পত্রিকায় তাঁর লেখা ছাপা হয়। অবস্থানগতভাবে একই গ্রাম-বাড়ি, কাছাকাছি হওয়াতে তাঁর দেখাদেখি তাঁর সহযোগিতা এবং অনুপ্রেরণায় সে সময়টা থেকে বেশ উৎসাহী হয়েই উঠি লেখালেখির জন্যে। সেই সুবর্ণ সময়ের হাত ধরেই লেখালেখির শুরু বলতে পারি।
৬.লেখালেখির অনেক শাখায় আপনার পদাচারণা। কোন শাখায় আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেন এবং কেনো?
উত্তরঃ লেখালেখির অনেক শাখায় আমার পদাচারণা ঠিক নয়, তা শুধু হাতে গোনা কয়েকটা শাখায়-ই শুধু হবে হয়তো। লেখালেখির যতগুলো শাখায় চর্চা করি তার প্রত্যেকটা শাখায়-ই আমি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি। প্রয়োজনের তাগিদে প্রত্যেকটা শাখা-ই আমার কাছে স্বচ্ছন্দ মনে হয়। যা আমার কাছে দুরুহ বা কষ্টের অথবা স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করি না, সে বিষয়ে আমি লেখার চেষ্টা করি না সাধারণত! তবে ছড়া কবিতা গল্প আমার চর্চার প্রধান বিষয়।
৭. বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যের ভবিষ্যতকে আপনি কীভাবে দেখেন?
উত্তরঃ এক কথায় বলি, বাংলাদেশের ছড়া সাহিত্যের ভবিষ্যৎ অত্যন্ত আনন্দময় এবং উজ্জ্বল।
৮.শৈলী অনলাইন পেপার সম্পর্কে আপনার প্রত্যাশা কী?
উত্তরঃ শৈলী অনলাইন পেপার সময়কে ধারণ করে যথাপোযোগী কার্যক্রম-পদক্ষেপকে সঙ্গে করে তার পথ চলা শুরু করেছে। সে জন্য অবশ্যই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য শৈলী অনলাইন পেপার। ঠিক তেমনি ভবিষ্যতেও বিষয়,সময়, কার্যাদিকে গুরুত্ব দিয়ে তার পথ চলা অব্যাহত রাখবে শৈলী অনলাইন পেপার, এই প্রত্যাশা করি।
৯. নতুন লেখকদের প্রতি আপনার পরামর্শ সংক্ষেপ বলুন।
উত্তরঃ নতুন লেখকদের জন্য আমার অশেষ শুভকামনা। তারা অবশ্যই অনেক অনেক লিখবেন। ভালো লিখবেন। সুষ্ট, গঠনমূলক, পরিমার্জিত, রুচিশীল, রীতি-নীতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সৌন্দর্যকে সামনে রেখে তাদের চর্চা অব্যাহত রাখবেন, এই প্রত্যাশা তাদের প্রতি। তারও আগে, নতুন লেখকদের অবশ্যই অনেক অনেক বেশি পড়তে হবে। ভালো ভালো লেখা পড়ার কোনো বিকল্প নেই। লেখার পূর্বশর্তই হলো পড়া পড়া এবং পড়া।
১০. শৈলী টিভিতে সাক্ষাৎকার প্রদানের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
উত্তর : আপনাকেও ধন্যবাদ।