Site icon Shaili Tv

এমন বছর যেন আর না আসে / পিংকু দাশ

বিষে ভরা ২০২০। পুরো বছরব্যাপী সারা পৃথিবীর মানুষ কাটিয়েছে আতংক এবং অনিশ্চয়তায়। চীনে উহানে ডিসেম্বর, ২০১৯ এ প্রথম করোনা ভাইরাস দেখা দেয়।এরপর আস্তে আস্তে পুরো বিশ্বে এটা ছড়িয়ে পড়ে।অভিশপ্ত এই বছরে করোনার ভয়াল থাবায় মানুষ দিশেহারা। প্রাণঘাতী ছোঁয়াছে রোগের কারণে মানুষ গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে। করোনার তাণ্ডবে আমরা হারিয়েছি জাতীয় অধ্যাপক, খ্যাতিমান ডাক্তার,মেধাবী পুলিশ সদস্য, গুণী রাজিনীতিবিদ, দেশবরেণ্য অভিনেতা অভিনেত্রী এবং প্রিয় বন্ধু বান্ধব।
বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাস ধরা পড়ে ৮ মার্চ,২০১৯। চট্টগ্রামে প্রথম ধরা পড়ে ৩ এপ্রিল। ধরা পড়ার কিছুদিন পর বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশে ও লকডাউন শুরু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায় ১৭ মার্চ থেকে। ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস আধালত বন্ধ করে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।এর ফলে ১৭ কোটি মানুষ গৃহবন্দি হয়ে যায়।১৫ জুন থেকে লকডাউন শিথিল করা হয়।১ জুলাই থেকে লকডাউন উঠে যায়। মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য কঠোর নির্দেশ জারি করা হয়।
করোনা রোগী বাড়ার সাথে সাথে চিকিৎসা ব্যবস্থার সীমাহীন দুরবস্থা সবার কাছে স্পষ্ট হতে থাকে। হাসপাতাল থেকে হাসপাতালে ঘুরেও মানুষ বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে। এমনকি এন ৯৫ মাস্ক এবং ভুয়া করোনাভাইরাসের রিপোর্ট তৈরির মত দুর্নীতি ও মানুষকে দেখতে হয়েছে।
এরমধ্যেই প্রাণহীন কেটেছে বাঙালীর প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। কাকডাকা ভোরে কেউ আর ডি সি হিল কিংবা সি আর বির শিরীষতলায় ভীড় করেনি। হয়নি চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ও। বৃহত্তর ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর এবং দুর্গাপূজা অনাড়ম্বরভাবে কেটেছে।

করোনা ভাইরাসের কারনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। ২০২০ সালের এইচএসসি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতে পারেনি।যেটা হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলে।বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ছাড়া পরের ক্লাসে প্রমোশন দিতে হচ্ছে। ২০২১ সালের এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষাও পিছিয়ে দেয়া হয়েছে। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। ঘরে বসে শিক্ষা গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
করোনার তান্ডবে হাজার হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছে। অনেকের মাসিক ইনকাম কমে গিয়েছে। বাধ্য হয়ে শত শত মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছে।
করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে করোনা রোগীদের নিয়ে টানাটানি কম হয়নি।অনেক চিকিৎসক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। মৃত বাবার লাশ রেখে সন্তানের পালিয়ে যাবার মত ঘটনা ও ঘটেছে। এরকম পরিস্থিতিতে পুলিশ সদস্যরাই সন্তানের দায়িত্ব পালন করে মৃত ব্যক্তির সৎকার এবং দাফনের ব্যবস্থা করেন। করোনায় আমরা অনেক সম্মুখ সারির যোদ্ধা, চিকিৎসক এবং পুলিশকে হারিয়েছি।
করোনার গৃহবন্দি জীবন যাত্রায় সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছে আমাদের মা বোনেরা। গৃহকর্তারা যাতে সন্তুষ্টচিত্তে গৃহে অবস্থান করেনল তার জন্য তাঁদের চেষ্টার ত্রুটি নেই। বিভিন্ন উপাদেয় রান্নার পাশাপাশি নতুন নতুন রান্না শিখার চেষ্টা ও আমরা দেখেছি। এপ্রসঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কতরকম জিলাপির নমুনা যে দেখেছি। ঘরের ছুটা বুয়ার অনুপস্থিতিতে অনেক গৃহকর্তা গৃহকর্মে হাত লাগিয়ে গিন্নীকে সাহায্য করেন বটে। এতে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে রম্য রচনার জোয়ার বয়ে যায়। গৃহ ব্যবস্থাপনা বিষয়টি যে শুধুমাত্র মেয়েদের নয়, একথাটি আমাদের দেশের মানুষ এখনো বুঝতে চেষ্টা করে না। অদূর ভবিষ্যতে ও যে বুঝবে সেরকম কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
মহামারীর এই দুঃসময়ে যখন অর্থনীতির সব খাত নড়বড়ে তখন একটি খাত অর্থনীতির সব চাকা সচল করে রেখেছে, তা হলো রেমিট্যান্স। গত অর্থবছরে প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন, তা বিগত অর্থবছরের তুলনায় সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্স এর উপর ভর করে পদ্মা সেতু সহ আর ও বড় বড় প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।করোনা মহামারির মধ্যে বিজয়ের মাসে বসানো হলো পদ্মাসেতুর সর্বশেষ স্প্যান।এখন দৃশ্যমান হচ্ছে পুরো পদ্মা সেতু।
করোনা মহামারি ব্যস্ত পৃথিবীকে হঠাৎ থমকে দিয়েছে।নতুন ভোর নিয়ে আসুক ২০২১। নতুন বছরে দীপ্ত আলোয় সব অন্ধকার কেটে গিয়ে চারিদিক ঝলমল করে উঠুক এই প্রত্যাশা সকলের । বাংলাদেশ এবং বিশ্ব করোনা মুক্ত হোক।

Exit mobile version