আজ রবিবার।
গির্জায় কতশত মানুষের আনাগোনা। সমস্যার সমাধান, পাপমোচন,সন্তান কামনা।গির্জাতে হাজার প্রদীপ জ্বলে। সানডের প্রার্থনায় কার মানত পূর্ণ হবে কে জানে?হোলি ওয়াটার দিয়ে শিশুদের ব্যাপটাইজডও করানো হয়েছে। প্রার্থনা শেষে প্রায় সবাই যার যার মতো চলে গেছে।অনতিদূরে একটি মেয়ে অঝোর ধারায় কাঁদছিলো।ফাদার গোমেজ মাথায় হাত রেখে বললেন-কাঁদছো কেন মা’?
পেছন থেকে একজন বলে ওঠে-‘মেয়েটি কনফেশন করতে চাইছে ফাদার’।
‘তথাস্তু’ বলে তিনি সেই বিশেষ কক্ষে প্রবেশ করলেন।বাধাধরা সময়ের বাইরে বিপদগ্রস্ত একজন মানুষের কথা শুনতে তিনি অনুমতি দিলেন।
রুমালে চোখ মুছে সে তার কথা বলতে শুরু করে’আমি রোজালিন।আঠারোর ঘরে পা দেবার আগেই রবার্টকে ভালোবেসে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করব।ওদের পরিবার ছিলো গোড়া ক্যাথলিক।ক্যাথলিক নই বলে প্রথম থেকে আমাকে ওরা সহজভাবে মেনে নবতে পারেনি। শ্বশুরমশাই ছিলেন আমাদের এলাকার চার্চের প্রধাস কনভেনার।সুযোগ পেলে বাবাকে তিনি দু’কথা শোনাতে ছাড়তেন না।প্রাপ্ত বয়স্ক হবার আগে বিয়ে করায় মামলা অনায়াসে আমারবিপক্ষে যেতো।কিন্তু, আইনজীবী হয়েও একমাত্র মেয়ের জেদের কাছে বাবাকে শেষ পর্যন্ত হার মানতে হয়।আদালতে সবার সামনে পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলতেও আমার বুক এতটুকুও কাঁপলোনা।থর থর করে কাঁপতে কাঁপতে বাবা সেদিন মাথা ঘুরে পড়ে যান।অপমানে তিনি সাথে সাথে ওকালতি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন।
দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ওরা আমার ওপর নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।সদ্যপ্রসূত শিশুকে পর্যন্ত ওদের কুক্ষিগত করে ফেলে।ওরা অনেকটা একঘরে করে ফেলে আমায়।
রবার্টও আমার সাথে এমন আচরণ শুরু করলো মনে হতো আমার ছায়ামাড়ানো যেন পাপ।
নতুন ব্যবসায় ইনভেস্ট করার জন্য আমার পরিবার থেকে টাকা আনার জন্য চাপ দিতে থাকে।ইতোমধ্যে এক শুভাকাঙ্ক্ষী এসে আমাকে রবার্টের গোপন প্রণয়ের কথা জানায়।কান কথা বলে প্রথমে আমি তা উড়িয়েও দিই।
সশরীরে সেদিন নগরীর অভিজাত হোটেলে একান্তে দুজনকে তেখলাম।নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।কিন্তু কেন জানি তখন থেকে মনে হচ্ছিলো বাবাকে কষ্ট দেওয়ার ফলে আমার এ শাস্তিভোগ করতে হচ্ছে।স্বামীর বিম্বাসঘাতকতা আমার কাছে কর্মফলই মনে হলো।
রবার্টকে এক বিন্দু কিছু বুঝতে দিলাম না।
চাইতেই অনায়াসে ডিভোর্স ওকে করে দিলাম খোরপোষ দেওয়ার ক্ষমতা না থাকায় আদালতও আমার সন্তাকে আমার হেফাজতে দিলোনা অবশ্য ইতোমধ্যে ওরা বাচ্চার মনেও
আমার সম্পর্কে একপেশে খারাপ মনোভাব তৈরি করে ফেলেছে। শেষ পর্যন্ত বাবার বাড়িতে আমাকে ফেরত আসতে হয়েছে।কিছুদিন আগে আমার বাবা স্বর্গারোহণ করেছেন,আমার ভুলের জন্য বাবার মনে যে কষ্ট দিয়েচি তা কখনো ক্ষমার যোগ্য নয় জানি।তবু,পাদার আজ আমি কনফেশনের মাধ্যমে বাবার আত্মার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।ঈশ্বর কি আমায় ক্ষমা করবেন?