Site icon Shaili Tv

১০১ তম জন্মদিনে স্মরণ :কবি শেখর আবুল হোসেন মিয়া / ইসমাইল জসীম

বাংলা সাহিত্যে যে ক’জন শিশুসাহিত্যিক সাধারণ মানুষের মনে বিশেষ স্থান করে নিয়েছেন, আবুল হোসেন মিয়া তাদের অন্যতম। আজ তাঁর ১০১তম জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে শৈলী টিভি অনলাইন পেপারের পক্ষ থেকে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।

‘একটু খানি স্নেহের কথা একটু ভালবাসা,
গড়তে পরে এ দুনিয়ায় শান্তি সুখের বাসা।
একটু খানি অনাদর আর একটু অবহেলা,
গুছিয়ে দিতে পারে মোদের সকল লীলা খেলা।
একটু খানি ভুলের তরে অনেক বিপদ ঘটে,
ভুল করেছেন যারা সবাই ভুক্তভোগী বটে।
একটু খানি বিষের ছোঁয়া মরণ ডেকে আনে,
এই দুনিয়ার ভুক্তভোগী সকল মানুষ জানে।
একটু খানি ছোট্ট শিশুর একটু মুখের হাসি,
মায়ের প্রাণে সবার কানে বাজায় সুখের বাঁশি’।

এ কবিতাটি সাহিত্যের পাঠকদের মনে যেমন, তেমনই সাধারণ পাঠকদের মনেও স্থায়ি আসন করে নিয়েছে। একটু খানি কবিতাটি কবি আবুল হোসেন মিয়ার এক উল্লেখযোগ্য সৃষ্টি। কবি আবুল হোসেন মিয়া ছিলেন একজন ছোটদের প্রিয় মানুষ। তিনি শিশু-কিশোরদের খুব ভালোবাসতেন, কাছে ডেকে আদর করতেন। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন একজন শিক্ষক। কলেজে অধ্যাপনা করলেও তিনি ছিলেন শিশুদের পাঠদানে বেশ আগ্রহী। যা কিনা শিশুদের জন্য সাহিত্য চর্চায় তাকে অনুপ্রেরণা যোগাতো। বিনা পয়সায় তিনি ছোটদের ডেকে নিয়ে পড়াতেন। আবুল হোসেন মিয়া ১৯২০ সালের ১ অক্টোবর মাদারিপুর জেলার রাজৈরের কুঠিবাড়ি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩৮ সালে ম্যাট্রিক পাস করে তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি বরিশাল বি.এম. কলেজ থেকে বি.এ. এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন।
আবুল হোসেন মিয়া ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান, বি.এ. পাস করেই সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার পেশায় যোগদান করেন। ১৯৫০ সালে বরিশাল জেলা স্কুল, গভ: ল্যাবরেটরি স্কুল ও পরবর্তীতে ঢাকা আরমানিটোলা গভর্নমেন্ট হাই স্কুলে বদলি হয়ে আসেন। পরবর্তীতে এম.এ. পাস করে প্রথমে তেজগাঁও কলেজ, পরে ১৯৭২ সালে নটরডেম কলেজে বাংলার অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।
ছড়াকার আবুল হোসেন মিয়া লেখালেখির শুরু সেই শৈশব থেকেই। তিনি যখন রাজৈর স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্র তখন তাঁর প্রথম লেখা ‘ভরাভাদরে’ প্রকাশিত হয়। ১৯৩২ সালে কোলকাতার ‘শিশু সাথী’ পত্রিকার ভাদ্র সংখ্যায় লেখাটি প্রকাশিত হলে সাহিত্যপাড়ার আলোচনায় আসেন তিনি। ফরিদপুরের বিশিষ্ট কবি সুফী মোতাহার হোসেনের অনুপ্রেরণায় সনেট লেখা শুরু করেন এবং তার রচিত একটি সনেট কলেজ ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়। বাংলা বাজার থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার প্রথম ছড়ার বই ‘তালবেতালের ছড়া’। তৎকালিন মাসিক কচি-কাঁচা, টাপুর-টুপুর, মাসিক মুকুল, খেলাঘর, সবুজ পাতা ছাড়াও সকল পত্রিকায় শিশু-কিশোরদের জন্য তিনি নিয়মিত লিখেছেন। আবুল হোসেন মিয়ার লেখার তুলনায় প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা অনেক কম। ‘সবুজ গাঁয়ে সবুজ’ ও ‘তালবেতালের ছড়া’ এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ‘একটু খানি’ শিরোনামে তাঁর একটি ছড়া-কবিতার বই প্রকাশ করে। ছোটদের জন্য লেখা এসব বই ছাড়াও স্কুল-কলেজের পাঠ্য বইয়ে কবি আবুল হোসেন মিয়া’র বেশ কয়েকটি লেখা তালিকাভুক্ত ছিলো।
সাহিত্যে অবদানের জন্য তিনি অবনী স্মৃতি পদক-কোলকাতা (১৯৩৮), শিশুসাথী পুরস্কার (১৯৪০), যশোর সাহিত্য সংসদ কর্তৃক ‘কবি শেখর’ উপাধি লাভ (১৯৫২), গৌরবঙ্গ সাহিত্য পরিষদ, কোলকাতা কর্তৃক পুনরায় ‘কবি শেখর’ উপাধি লাভ (১৯৫৪), মরণোত্তর মাদারীপুর জেলা শিশু একাডেমি কর্তৃক সম্মাননা (২০১৬) লাভ করেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২ ফেব্রুয়ারি ২০০০ সালে মৃত্যুবরণ করেন।

Exit mobile version