মাস আটেক আগে একটি নামী দৈনিকের প্রথম পাতার খবরটা ছিল এরকম..
‘রাতে কর্মস্থল থেকে বাড়ি ফেরার পথে ধর্ষিত তরুণী”।
অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে পুলিশের গাড়ি সেই তরুণীকে নিকটবর্তী এক নার্সিংহোমে ভর্তি করে। বর্তমানে তরুণীর শারীরিক অবস্থা শংকামুক্ত। তরুণীটির পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, আগামী মাসে তার নাকি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা। পুলিশ অপরাধীদের ধরতে তৎপর, তবে এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি।’

শহরের নামজাদা একটি ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারের বাইরে উত্তেজনায় পায়চারি করছে শিহাব। ভিজিটর্স চেয়ারে বসে আছেন শিহাবের বাবা-মা। সবার চোখেমুখে চাপা উত্তেজনা! আর ভেতরে অপারেশন থিয়েটারের টেবিলে শুয়ে আছে শিহাবের স্ত্রী সুমি। গতরাতে ক্লিনিক থেকে ফোন করে জানানো হয়েছে যে, সুমির কিছুটা শারীরিক অসুবিধা দেখা দেওয়ায় ডাক্তার পরেরদিন সকালেই সিজার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অপারেশন থিয়েটারের বাইরে জ্বলা লাল আলো নিভে গেল। দরজা খুলে ভেতর থেকে একজন সিস্টার বেরিয়ে এসে জিজ্ঞেস করলেন, ‘পেশেন্টের বাড়ির লোক কে আছেন?’
শিহাব এগিয়ে গিয়ে নিজের পরিচয় দিলে হাসিমুখে সিস্টার জানালেন, আপনার মেয়ে হয়েছে। মা আর মেয়ে দুজনেই ভালো আছে। বাকীটা ডক্টর জানাবেন।’
এই বলে সিস্টার আবার অপারেশন থিয়েটারের ভেতরে ঢুকে গেলেন।
বাবা হওয়ার আনন্দে লাফিয়ে উঠলো শিহাব। ততোধিক হাসি তার বাবা-মায়ের মুখে! দাদা-দাদী হবার আনন্দ কি কম?
প্রবাদ তো আছেই যে, আসলের চেয়ে সুদ বেশি প্রিয় হয়।
অপারেশন থিয়েটারের বাইরের চেয়ারগুলোতে আরোও দুজন মানুষ একটু দূরে বসে ছিলেন। সুমির বাবা আর মা। মেয়ের সন্তান হয়েছে শুনে মনে খুব আনন্দ হলেও সেটা তেমনভাবে প্রকাশ করতে পারছিলেন না।
বছরখানেক আগেও তাঁরা শিহাবের সাথে সুমির বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না। শিহাব আর সুমির মধ্যে যখন বিয়ের প্রাথমিক কথাবার্তা হচ্ছিল তখন শিহাবের মা সুমির বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁর বর্তমান স্বামী শিহাবের জন্মদাতা পিতা নন। শিহাব তাঁর যৌবনের ভালোবাসার চিহ্ন। তাঁর বর্তমান স্বামী ছিলেন তাঁর প্রেমিকের বন্ধু। কাপুরুষ বন্ধুকে নিজের দায়িত্ব এড়িয়ে পালিয়ে যেতে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন! সব জেনেশুনেই শিহাবের পিতৃত্ব তিনি স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আর শিহাবের কাছেও কিছুই গোপন করেন নি তাঁরা। শিহাব নিজের প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে তার আব্বুকে।

শিহাবের পিতৃপরিচয়ের কথা শুনে তার সাথে নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ের কথা ভাবতেও পারেননি সুমির পিতামাতা। দ্রুতই তারা অন্য এক যোগ্য পাত্রের সাথে সুমির বিয়ে ঠিক করে ফেলেন।

অথচ ভাগ্যের নিদারুণ পরিহাসে তার কিছুদিন পরেই অফিস থেকে ফেরার পথে একদল দুর্বৃত্তের হাতে শারীরিকভাবে চরম লাঞ্চিত হয় সুমি। খবরটা জানাজানি হতেই, যে পরিবারের সাথে সুমির বিয়ের পাকাকথা হয়েছিল, তারা বিয়ে ভেঙ্গে দেয়।
আর অন্তঃসত্ত্বা সুমিকে পুত্রবধূরূপে সাদরে বরণ করে নিয়ে যান শিহাবের পিতামাতা।