বাবা,
তুমি কেমন আছো?
মাটির অন্ধকার কোলে শুয়ে আছো।
ভেবে ভেশবে কথা তোমার, অরঞ্জিত সব চুল আমার।
প্রায়ই তোমাকে দেখি স্বপ্নে
ঘুমিয়ে আছো তোমার ঘরে।
পুবের জানালা গোলে সকালের স্নিগ্ধ নরম রোদটা-
তোমার খাটে ছড়িয়ে আছে, তোমাকে জড়িয়ে আছে।
তুমিতো কখনো সকালে ঘুমাতে না ;পত্রিকার পাতায় থাকতো তোমার চোখ।
কৃষ্ণবর্ণ অথচ ব্যক্তিত্বপূর্ণ ধীমান মুখ।
কাজের ব্যস্ততার ফাঁকে মাঝে মাঝে মায়ের কাছে যাই,
তোমার ঘরের সামনে যখন দাঁড়াই ;
আশৈশব অভ্যাস মত পরম শ্রদ্ধায়,
পা থেকে চটি জোড়া খুলে যায়।
আলতো পায়ে ঢুকে ঘরের মাঝে
সবই দেখি আগের সাজে।
সেই টেলিফোন, ইনডেক্সটা,
সোনালি কলমটা আর খাপে রাখা কালো ফ্রেমের চশমাটা।
পরিপাটি বিছানায় পরম মমতায় হাত বুলাই।
বালিশে মুখ রেখে তোমার ঘ্রাণ খুঁজে পাই।
সবই আছে আগের মতই,
শুধু আমার কালো মানিক নাই।
বিকেল থেকেই মা মশারী টাঙ্গিয়ে রাখে- বলি “এখন কেন? ”
“ থাকনা; মনে হয় তোমার বাবা ঘুমিয়ে আছে।
একা লাগে না, লাগে ঘরটা ভরা।”
শুনে জলে ভরে উঠে চোখ জোড়া।
এত মায়ার বাঁধন ছেড়ে নিস্তব্ধ মাটির ঘরে
বাবা, তুমি থাকো কেমন করে?
মন যে বোঝে না তুমি নাই,
মাঝে মাঝে তাই গোরের পাশে যাই।
দেখি,কোমল সবুজ ঘাসে ছেয়ে আছে গোরটা।
গোরের উপর ছড়িয়ে আছে, জড়িয়ে আছে সকালের স্নিগ্ধ নরম রোদটা।
ঠিক আমার স্বপ্নের মত।
তোমার মাথার কাছে
একটা কাটবেলির গাছ জেগেছে।
ডালগুলো সব ছড়িয়ে আছে। পাতায় ফুলে তোমায় জড়িয়ে আছে।
গুনে দেখি আটটি ফুল!
নাকি তোমার এইট জুয়েলস!বিটপীটা মা;
জানি, তোমার হৃদয় জুড়ে আছি আমরা সবাই।
শুধু আমার কালো মানিক নাই।