Site icon Shaili Tv

জন্মদিনে শ্রদ্ধা : বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালাম / ইসমাইল জসীম

‘তুমি যদি সূর্যের মতো আলো ছড়াতে চাও তাহলে আগে সূর্যের মতো জ্বলতে শেখো- এপিজে আবদুল কালাম। উপমহাদেশের প্রখ্যাত পারমানবিক বিজ্ঞানী এপিজে আবদুল কালাম। দায়িত্ব পালন করেছিলেন ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবেও। ভারতের অসামরিক মহাকাশ কর্মসূচি ও সামরিক সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচির সঙ্গে ছিলেন তিনি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নের কাজে তার অবদানের জন্য তাকে ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’ বলা হয়। আজ তাঁর ৯০ তম জন্মবার্ষিকী । শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে তাঁকে জানাই শ্রদ্ধা।
তাঁর পুরো নাম আবুল পাকির জয়নুল-আবেদিন আব্দুল কালাম। তিনি ১৯৩১ সালের ১৫ অক্টোবর ভারতের তামিলনাডু রাজ্যের রামেশ্বরমের এক মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা জয়নুল-আবেদিন ছিলেন একজন নৌকামালিক এবং মাতা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ। শিক্ষাজীবনে তিনি ছিলেন একজন সাধারণ মানের ছাত্র। কিন্তু ছিলেন বুদ্ধিদীপ্ত ও কঠোর পরিশ্রমী। পারিবাবিকভাবে তিনি ছিলেন অত্যন্ত গরীব। লেখাপড়ার পাশাপাশি পত্রিকা বিক্রি এবং পত্রিকায় লেখালেখি শুরু করেন। তার শিক্ষাগ্রহণের তীব্র বাসনা ছিল। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তিনি পড়াশোনা করতেন ও অঙ্ক করতেন। তিনি পদার্থবিদ্যা বিষয়ে সেন্ট জোসেফ’স কলেজ থেকে এবং বিমান প্রযুক্তিবিদ্যা বিষয় নিয়ে মাদ্রাজ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (এম আই টি) থেকে পড়াশোনা করেছিলেন। এরপর চল্লিশ বছর তিনি প্রধানত রক্ষা অনুসন্ধান ও বিকাশ সংগঠন (ডিআরডিও) ও ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থায় (ইসরো) বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান প্রশাসক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৯৮ সালে পোখরান-২ পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি প্রধান সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত ও রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেন। এটি ছিল ১৯৭৪ সালে ‘স্মাইলিং বুদ্ধ’ নামে পরিচিত প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার পর দ্বিতীয় পরমাণু বোমা পরীক্ষা।
এ পি জে আব্দুল কালাম ছিলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের একাদশ রাষ্ট্রপতি (২০০২-২০০৭)। কালাম তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একজন বিজ্ঞানী হিসেবে। পরে ২০০২ সালে কালাম তৎকালীন শাসকদল ভারতীয় জনতা পার্টি ও বিরোধী দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। পাঁচ বছর এই পদে আসীন থাকার পর তিনি শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবকের সাধারণ জীবন বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরতœসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সম্মান ও পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি।
আবদুল কালাম একজন দার্শনিকও বটে। তাঁর প্রতিটি কথা যেন এক একটি নীতিবাক্য, শিক্ষনীয়। তাঁর আত্মজীবনীতে তিনি বলেছিলেন ছোটবেলার কথা। ‘যখন আমি ছোট ছিলাম, আমার মা আমাদের জন্য রান্না করতেন। তিনি সারাদিন প্রচুর পরিশ্রম করার পর রাতের খাবার তৈরি করতেন। এক রাতে তিনি বাবাকে এক প্লেট সবজি আর একেবারে পুড়ে যাওয়া রুটি খেতে দিলেন। আমি অপেক্ষা করছিলাম বাবার প্রতিক্রিয়া কেমন হয় সেটা দেখার জন্য। কিন্তু বাবা চুপচাপ রুটিটা খেয়ে নিলেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন স্কুলে আমার আজকের দিনটা কেমন গেছে। আমার মনে নেই বাবাকে সেদিন আমি কী উত্তর দিয়েছিলাম কিন্তু এটা মনে আছে যে, মা পোড়া রুটি খেতে দেয়ার জন্য বাবার কাছে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এর উত্তরে বাবা মা’কে যা বলেছিলেন সেটা আমি কোনদিন ভুলবো না। বাবা বললেন, ‘প্রিয়তমা, পোড়া রুটিই আমার পছন্দ’। পরবর্তীতে সেদিন রাতে আমি যখন বাবাকে শুভরাত্রি বলে চুমু খেতে গিয়েছিলাম তখন আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম যে তিনি কি আসলেই পোড়া রুটিটা পছন্দ করেছিলেন কিনা। বাবা আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, ‘তোমার মা আজ সারাদিন অনেক পরিশ্রম করেছেন এবং তিনি অনেক ক্লান্ত ছিলেন। তাছাড়া একটা পোড়া রুটি খেয়ে মানুষ কষ্ট পায় না বরং মানুষ কষ্ট পায় কর্কশ ও নিষ্ঠুর কথায়।’ ২৭ জুলাই ২০১৫ তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Exit mobile version