Site icon Shaili Tv

জন্মদিনে স্মরণ : তারুণ্যের প্রতীক কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ / ইসমাইল জসীম

‘ভালো আছি ভালো থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লেখো’। গান কিম্বা কবিতা ‘বাতাসে লাশের গন্ধ’। গান আর কবিতায় যিনি অল্পতেই মানুষের মন জয় করে নিয়েছেন, স্থান করে নিয়েছেন হৃদয়ের গভীরে, তিনি কবি ও গীতিকার রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। আজ তার ৬৫ তম জন্মবার্ষিকী। প্রতিভাধর এই কবি ও গীতিকারের জন্মদিনে শৈলী টিভি অনলাইন পত্রিকার পক্ষ থেকে জানাই শ্রদ্ধা।
রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর জন্ম বরিশাল জেলার আমানত গঞ্জ রেডক্রস হাসপাতালে। তার মূল বাড়ি বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার মিঠেখালি গ্রামে। তার বাবার নাম ডা. শেখ ওয়ালিউল্লাহ ও মায়ের নাম শিরিয়া বেগম।
পিতার দেয়া নাম ছিলো মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ। ছোটবেলায় এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। লেখালেখির জগতে এসে নামটি তিনি নিজেই বদলে দেন। নামের আগে যোগ করেন ‘রুদ্র’, ‘মোহাম্মদ’-কে করেন ‘মুহম্মদ’ আর ‘শহীদুল্লাহ’-কে ‘শহিদুল্লাহ’।
ঢাকা ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুল থেকে ১৯৭৪ সালে এসএসসি করেন। ছাত্র হিসেবে তিনি মেধাবী ছিলেন। ঢাকা কলেজ থেকে ১৯৭৬ সালে এইচএসসি পাস করেন। অতঃপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ১৯৮০ সালে সম্মানসহ বিএ এবং ১৯৮৩ সালে এমএ ডিগ্রি লাভ।
১৯৭৩ সালে দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশ হয় তার প্রথম কবিতা না ‘আমি ঈশ্বর আমি শয়তান’ কাঁচা হাতের লেখা। আবেগ আর উদ্দীপনায় ভরা, কিন্তু জীবনদর্শন ও চিন্তধারার ধার সুস্পষ্ট। তিনি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্র। ১৯৭১ সালে তার ছিলো যুদ্ধে যাবার খুবই উৎসাহ। মা যেতে দিলেন না । কারণ সে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানীরা তার বাবাকে ধরে নিয়ে যায়। সেই থেকে তার মনে একটি রুদ্রভাবের জন্ম নেয়। তাই হয়তো তিনি তার নামের আগে রুদ্র নামটি ব্যবহাার করেছেন। তার কবিতায়ও তা প্রকাশ পেতে থাকে। তিনি হয়ে ওঠেন দ্রোহের কবি। শুধু দ্রোহ নয় প্রেমও তাকে নিবিড়ভাবে আপন করে নেয় তারুণ্যের ছোঁয়া।
দ্রোহ ও প্রেমের কাব্যভাষা নির্মাণে শ্রেষ্ঠ বাঙালি কবিদের একজন এই রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ। শৈল্পিক পরিশীলন, বিষয়গত বৈচিত্র, প্রাকরণিক বহুমুখিতা আর অঙ্গীকারের সততায় তার রচনাসম্ভার বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে আত্মানুসন্ধানী বাঙালির সৃষ্টি-সংগ্রামেরই এক নান্দনিক দলিল।

‘জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরোনো শকুন’- এই নির্মম সত্য অবলোকনের পাশাপাশি ততোধিক স্পর্ধায় তিনি উচ্চারণ করেছেন- ‘ভুল মানুষের কাছে নতজানু নই’। যাবতীয় অসাম্য, শোষণ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে অনমনীয় অবস্থান তাঁকে পরিণত করেছে ‘তারুণ্যের দীপ্ত প্রতীক’-এ। একই সঙ্গে তাঁর কাব্যের আরেক প্রান্তর জুড়ে রয়েছে স্বপ্ন, প্রেম ও সুন্দরের মগ্নতা। ১৯৯১ সালের ২১ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

Exit mobile version