অনিশ্চিত এক অপেক্ষায় !
এক মগ লেবু চা নিয়ে পূবালি জানালায় …
সন্ধ্যের আলো-আঁধারির মায়া জানালার ফ্রেমে বসে
একাকিতা আমি জীবন বুননের প্রতীক্ষায়।
গ্রীলের ওপাশে আবছায়া বাঁশঝাড়ের নড়ন-চড়ন
জানান দেয়, মাথার ওপর চাঁদ উঠছে ধীরে ধীরে
ঝলসানো রুটির মতো বিশাল চাঁদের উঁকি
তা ও আবার বাঁশ বাগানের মাথার ওপর…
কিন্তু আমার যে কোনো কাজলা দিদি নেই গো!
তবু ইদানীং অপেক্ষা করি,
অপেক্ষা করি আঁধার কেটে ভোর হওয়ার !
অপেক্ষা — ভয়কে পরাজিত করে জয়ী হওয়ার।
ঐ গ্রীল পেরিয়ে হিমেল হাওয়ায়
পুরো ঘর জুড়ে লুটিয়ে পড়া জোছনা দেখতে
অন্ধকারে বসে আছি আমি নিজের মুখোমুখি,
পৃথিবীর ক্রান্তিলগ্নে চৈত্র শেষের চাঁদ অন্তত জানুক
কি ভয়ংকর উদ্বিগ্নতার ঢেউ এর উথাল-পাতালে
স্থবির হৃদয় নিয়ে স্তব্ধ পৃথিবীর মানচিত্র দেখছি !
বিবর্তনের পথ বেয়ে সভ্যতার চূড়ান্ত ধাপে
পৌঁছানো উচ্ছৃঙ্খল বেহিসেবী মানবজাতি আজ
লক্ষ লক্ষ নির্বাক নিস্পাপ লাশের কাছে
জবাবদিহির জন্য দায়ী,
দায়ী শোকার্ত পাথর বিমূঢ় স্বজনের কাছে !
ভ্রুক্ষেপহীন সভ্যতার চূড়ান্ত বৃথা আস্ফালন
সাত আসমান ভেদ করে পৌঁছোয় স্রষ্টার আরশে,
তাঁর মৃদু হাসিতে অদৃশ্য শত্রুর বেড়াজালে আবদ্ধ
অবুঝ মানব- মানবী বোঝেনা কৃতকর্মের ফল !
হাতের জুড়িয়ে যাওয়া শীতল লেমন টির মতো
মানব জীবন ও সুশীতল হোক খোলস ছেড়ে,
বেঁচে থাকার প্রচেষ্টায় বিজয়ী হয়ে।
চৈতালি জোছনায় সিক্ত আমি বেঁচে থাকতে চাই,
আরো অনেক অনেক পথ আমি হাঁটতে চাই তোমাদের হাত ছ্ুঁয়ে !
বড্ড সাধ আমার,
বৈশাখী ভোর পেরিয়ে,
কাঠফাটা রোদ্দুর এড়িয়ে
বর্ষার নির্মল ঝরঝর বারিধারায় ভিজে
আঁজলা ভরে জীবনকে ছোঁব,
কুয়াশা ভেজা ঘাসের শিশিরে উদোম পা ডুবিয়ে,
মুক্ত প্রকৃতির আদরে নীল- সবুজের স্পর্শে
নিজেদের হারায়ে বসন্তে ফিরবো আবার !
প্রিয় মুখগুলোর আদরে – আব্দারে – ভালোবাসায়
অনুভবের হাসির মুগ্ধতায় কোলাহল শেষে
ঘুমপরী নেমে আসে ওদের চোখ জুড়ে।
আর আমি?
কষ্ট আড়াল করা নিশাচর পাখির মতো
ঘুমহীন চোখে স্বপ্ন দেখি
এক পরিপূর্ণ জীবন শেষে পরিতৃপ্ত শেষ ঘুমের !
সত্যিই আমার জানা নেই,
এমন মায়াময় মুহূর্ত কতবার ফিরে আসে
মানব জন্মের একজনমে।
তাই নির্ঘুম বসে আছি স্বপ্ন নিয়ে দুচোখে
ঘোর নিরাশায় আশার প্রদীপ জ্বালিয়ে
আলো আর আলোয় উদ্ভাসিত করে নিজেকে,
রাত গভীরের আঁধার শেষে –
ভোরের সোনালি সূর্যোদয় দেখবো বলে,
সূর্যের কোমল পিঙ্গল আভায়
সিক্ত পৃথিবী দেখবো বলে।