১. বৃক্ষজীবন

বৃক্ষের মত দাঁড়িয়ে অবলোকন করার শক্তির প্রয়োজন
কেউ সুরমা টানা পটলচেরা চোখে তাকিয়ে কিছু পংক্তি জুড়বে।
কেউবা শীতলতার পরশ নিতে দেহ জুড়াবে,
শুধু বৃক্ষ হয়ে নীরবে অন্তঃপুরে নির্যাস সঞ্চয়ণ হবে
হাত বুলাবে ছালে-ডালে, মৌ ঘ্রাণ নেবে মুঠোয় ভরে
বৃক্ষ বাকহীন-শব্দহীন, কেবল অনুভবে চেতন।
ক্রিয়া-বিক্রিয়া নেই, অস্বস্তি নেই,
নেই মগজের খেলা-বেলা
শুধু পিপাসার সজাগ চঞ্চুজোড়
দশে-দশে মিলিয়ে বিশের ডাল
গাঁথুনির শক্ত শিকড়
শত-শত তরুণ পত্র পল্লবের নির্জীবের সজীবতা
কেবলই দর্শনের শক্তির প্রয়োজন
প্রয়োজন ঠায় দাঁড়িয়ে থাকার।

২. অ্যাকুরিয়াম থেকে বলছি

ছোট্ট জলপরী মীন আমি
গোলাকৃতি অ্যাকুরিয়ামে
সাঁতার কেটে ভাসি।
কত আদর, কত সোহাগ
নেই তো কিছুর অভাব।
চোখ বুজে তাই
নিত্য চলি..
এটাই যে আমার স্বভাব।

কত কত মজার খাবার,
লাল, নীলচে পাথর কণা
আরো আছে….
জল-তরঙের রঙ বদলের খেলা…
আমার পিছে ছোট-বড়
আরও ক’টি…
ঘুরে সারাবেলা।

তবুও কেন সমুদ্রটি খুঁজি
দেখিনি তো তার ঢেউ..
শুনেছি কেবল সেথায় নাকি
অবাধ সাঁতার কাটা…..
বৃত্ত বাধা পায়নি না কি কেউ।
নেইতো কোন শাসন-শোষণ
নেই কোনো অযাচিত খোঁটা,
সকাল-বিকাল আপন মনেই
স্বাধীনতার ছোটা।

এত আদর, এত স্নেহ
সবই পরের দয়া;
বাঁচার জন্য
ঘুরতে থাকা
এপার ওপার মায়া।

মাঝে মাঝে শ্বাসে কষ্ট
জীবন স্বাদে আপন ভ্রষ্ট
দোষ হল কি তবে?

জলপরীটি কেবল দেখে…
অবাধ জলের টানে,
কেউ কি নিলো তুলে তাকে
আপন ভুবন প্রাণে!

৩. সিঁড়ি

অভিযোগে কেউ বলে, “চুল দুলিয়ে অমন করে হাঁটো কেন?
চুলের দোলায় হৃদয় ঘড়ি টিক টিক করে বাজতে থাকে।
দিশাহীনের উল্কা হয়ে ভেসে বেড়াই আকাশ পানে।”

অনুযোগেও কেউ বলে, “কেন অতো মিষ্টি করে রিনরিনিয়ে হাসতে থাকো?
ঝরনা ধারায় দেহ-মনের স্নায়ুগুলি
বাক যে হারায় বোবারূপে।”

অভিমানে বলে ওঠা, “কেন তুমি হলে না আমার?
পেলাম না তোমায় এই জীবনে..”

মান- অভিমানের ভীড় ঠেলিয়ে- হৃদয় নিংড়ে দেখা হয়নি,
প্রশ্রয় পায়নি অনুযোগও, পায়নি ঠাঁই ভালোবাসাও।
লুডু ঘরের সাপের মতো- মনপাখিটা গ্রাস করুক কেউ,
তাতো কভু চাওয়া হয়নি!

উঁচু সিঁড়ির লিপ্সাটুকু তীব্রতাতে ছিল ক্ষীণে,
সিঁড়ির খোঁজে মনটা বিভোর
ছিল সদা অবচেতনে।।

জীবনোপলদ্ধির প্রান্তে এসে আজ কেবলই প্রশ্ন জাগে
আহলাদের সিঁড়িটা কি পাওয়া গেল সারবানে?
বিবেকের তাড়নাতে আবেগেরই ধ্বংসাবশেষ……
সার্থকতা পেল কি আর এই জীবনে?

তবুও ভালোবাসার রঙিন ফানুস
উড়তে থাকে মন-মন্দিরে
রোজ না হলেও কদাচিতে
স্মরণ করা পূজোর ছলে।