টুনটুনের মাঝে মাঝে হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। তখন তার আর কারো কথা মনে থাকে না। এই যে মা ছাড়া তার চলে না। সেই মাকেও তার তখন মনে থাকে না। একথা সে অবশ্য মাকে বলেনি। মা শুনলে যদি কষ্ট পায়। মাকে সে কষ্ট দিতে চায় না। এমনিতেই বাবা তার রেগে গেলে মাকে যা মুখে আসে তাই বলে। মা কিছু বলে না। চুপ করে থাকে। অথচ মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে টুনটুন বুঝতে পারে মায়ের যে কি কষ্ট হচ্ছে। টুনটুনের ক্ষমতা থাকলে মন্ত্র পড়ে মায়ের কষ্ট দূর করে দিত সে। মা যে তার পরে লুকিয়ে কাঁদে, তবু কখনও বলেনা কাউকে সেও টুনটুন জানে। কিন্তু ঐ যখন তার হারিয়ে যাবার ইচ্ছে হয় তখন তার আর কিছু মনে থাকেনা, কারো কথা মনে থাকে না। রোজ যে তাদের বাড়ির পাশ দিয়ে ফেরিওয়ালারা কতো রকম জিনিষ নিয়ে সুর করে ডেকে ডেকে বলে চাই কমলা—-। ওদের দেখে টুনটুনের কতোদিন ইচ্ছে হয় পিছু পিছু যেতে। ওরা কতো দূরে দূরে যায়।সেই ভূবন ডাঙার মাঠের পাশ দিয়ে ধূলি উড়ানো রাঙা রাস্তা দিয়ে।টুনটুন কল্পনায় ভাসতে থাকে অদেখা পৃথিবীতে বিভোর হয়ে। তখন তার কেমন যেন কোন কবিতার লাইন এসে ভীড় করে কখনও। এই যেমন আজ শুধু মনে হচ্ছে-
“দুঃখগুলি বেচবো,কেউ নেবে?
কেন মনে হলো তার এমন কথা।
ভাবতে ভাবতেই সে বাড়ি ছেড়ে দেখে তার চেয়ে একটু বড় একজন দুঃখী চেহারার ছেলে মাথায় জলপাই নিয়ে বলছে, “জলপাই আছে, জলপাই”।
টুনটুন ওর পিছু পিছু হাঁটতে থাকে। ও মনে মনে বলছে :
‘দুঃখগুলো বেচবো, কেউ নেবে?’