হরিহর হাবাগোবা প্রকৃতির ছেলে। গ্রামের মানুষের এ কাজ সে কাজ করে দেয়। মানুষ তাকে এজন্য দু’একটাকা দেয়, সে এতেই খুশি। টাকা দিয়ে এটা সেটা কিনে খায়। সে একবারে হাবাগোবা আবার সে রকমও নয়। সামান্য বুদ্ধি প্রতিবন্ধী বলা যায়। এ নিয়ে পাড়ার ছেলেরা তার সাথে বিভিন্ন সময় নানা রকম মশকরাও করে। এতে সে কখনো কখনো ভীষণ রাগান্বিতও হয়, আবার কখনও কখনো সে ব্যাপারটিকে বেশ উপভোগও করে। পাড়ার স্কুল মাঠে যখন ফুটবল খেলা হয় তখন হরিহর মাঠে একপাশে বসে খেলা দেখে, আর সমস্ত ছেলেরা তার কাছে কাপড় চোপড়, ঘড়ি, জুতা চশমা ইত্যাদি জমা রাখে। ফুটবল দূরে কোথাও গেলে কুড়িয়ে আনে হরিহর। খেলাশেষে সবাই যে যার জিনিস হরিহরের কাছ থেকে বুঝে নেয়। এতে হরিহরের আনন্দের সীমা ধরে না। বাড়িতে হরিরহরের একমাত্র মা ছাড়া আর কেউ নেই। মা মানুষের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে সংসার চালায়। হরিহরের এই ঘরের খেয়ে পরের মোষ তাড়ানোকে মা মোটেই পছন্দ করে না। এ নিয়ে হরিহরের সাথে তার মায়ের প্রতিদিনই ছোটকাটো তর্কবির্তক লেগেই থাকে। তার মায়ের বিশ্বাস সবাই তার ছেলেকে ব্যবহার করে এবং ঠকায়। কাজ করিয়ে নিয়ে টাকা পয়সা কিছু দেয় না। দিলেও দশ টাকার কাজ করিয়ে দুই টাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়। এই দুই টাকা পেয়েও হরিহর খুশি থাকে। এইতো সেদিন পাশের বাড়ির যোগেশ বাবুর ছেলে বাড়ির অদূরে ধান কেটে মাড়াই করে রেখেছে। দুই বস্তা ধান দুইবার মাথায় করে এনে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। টাকা দিয়েছে মাত্র দশ টাকা। পাশের বাড়ির চণ্ডীচরণের বউ সেখানে কাজ করেছিলো। খবর জেনে হরিহরের মাকে এটা জানিয়েছিলো। সেদিন বিকেলে হরিহর বাড়ি বাড়ি এলে মা বলেছিলো ‘দূর হয়ে যা হতচ্ছাড়া আমার সামনে থেকে। ধানগুলো আনতে যেখানে পঞ্চাশ টাকা রিক্সা ভাড়া নিতো সেই জায়গায় দশটাকা দিয়ে তুই দুইবস্তা ধান কাঁধে করে দিয়ে এলি! তোর মত অপদার্থ কে আছে? দূর হয়ে যা আমার সামনে থেকে।’ মায়ের কথায় হরিহরের কোন রাগ নেই। তার অন্য চিন্তা। তা সবাই জানে। বাড়ির নিকটের বাজার রনজুর হাটের ফজর আলীর দোকানের নানরুটি। ঐ নানরুটি খেতে পারলেই তার পরম তৃপ্তি। এই নানরুটির লোভ দেখিয়ে কতজন তাকে বাজার নিয়ে যায়। দোকানের নানরুটি খাইয়ে দিয়ে বাজারের থলে তার কাঁধে চড়িয়ে দেয়। দু’চার টাকা এমনি করে জমা করতে পারলেই সে ছুট দেবে রনজুর হাটের ফজর আলীর চায়ের দোকানে। সেদিন তার মাকে তাকে বলে, ‘এই ধর বাজারে লিস্ট করে দিলাম। ঠিক ঠিক সব কিনে নিয়ে আসবি।’ হরিহর বাজার যেতে যেতে হিসাব করে কোন কোন জিনিসের দাম দু’একটা বেশি হিসাব ধরে মাকে হিসাবটা বুঝিয়ে দেবে। যেই ভাবা সেই কাজ। একশত ত্রিশটাকার বাজার হিসাবে ধরলো একশত চল্লিশ টাকা। দশটাকা দিয়ে ফজর আলীর দোকানে একটি নানরুটি দিয়ে চা খেয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ালো হরিহর। তার কী আনন্দ! মায়ের কাছে গিয়ে ঠিকই হিসাব বুঝিয়ে দিলো। মা কিন্তু তার এমনি দু’চার দশটাকা এদিক সেদিক করা বুঝতেই পারে না। এভাবে মা প্রতিবার বাজার করতে দিলেই সে খুশি। কারণ সে ফজর আলীর দোকানের নানরুটি খেতে পারে। সেদিন মা বলে, বাবা হরিহর ‘অনেকদিন নানরুটি খাই নি। আজ বাজার করে আসার সময় বাজার থেকে দুটি নানরুটি নিয়ে আসিস। অনেকদিন হয়, নানরুটি খাই নি। একটি তোর আরেকটি আমার। হরিহরের খুশি আর ধরে না। সে ভাবে বাজারের হিসাবে একটু এদিক সেদিক করে প্রতিদিনকার মত নানরুটি দিয়ে চা খেয়ে বাড়ির জন্য দুটো নিয়ে আসবে। মা তো আর তার চালাকি ধরতে পারবে না। মায়ের এই ছেলেই ভরসা। করবে টা কী। তাকে দিয়েই তো বাজার করাতে হয়। হরিহর ফজর আলীর দোকানে নানরুটি দিয়ে চা খেয়ে বাড়ির জন্য আরো দুটো নানরুটি নিলো। ফজর আলী বলে ‘কী হে হরিহর আইজক্যা আরো দুইট্যা নিলি কেন?’- ‘মা কইছে, তার জন্য নিলাম।’ -‘ভালা কথা মায়ের খেদমত করা ভালা। খুব ছোঁয়াবের কাজ। মায়ের কথামত কাজ করবা সবসময়, বুঝলা।’ -‘জ্বি চাচা।’ বলেই কাগজে বেঁধে হাতে করে দুটো রুটি নিয়ে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিলো হরিহর। হাঁটতে হাঁটতে চৌধুরী বাড়ির সামনে গেলো হরিহর। পড়লো চৌধুরী বাড়ির সামনে গেইটে ওদের কুকুরের সামনে। কাগজে ফাঁক দিয়ে রুটি দেখা যাচ্ছে। কুকুর তো নাছোরবান্দা। ঘেউ ঘেউ করে করে রুটি নিতে চাচ্ছে হরিহর থেকে। হরিহরের একহাতে থলে আরেক হাতে নানরুটি। হাত উপরে তুললে কুকুর লাফ দিতে চাচ্ছে। বাঁচার উপায় নেই। কখন জানি কামড় দিয়ে বসে। অনেক চিৎকার করলো হরিহর। কেউ এগিয়ে এলো না। অগত্যা কুকুররকে রুটি দুটো দিয়ে বাঁচলো হরিহর। বাড়ি গিয়ে হরিহর মাকে ঠিক বুঝােেত পারলো না ঘটনাটা। মা বলে ‘হতচ্ছাড়া কুকুর শুধু তোকেই দেখলো আর কাউকেই দেখলো না। আমার কপালে কিছু নাই।’ হরিহর মনে মনে ভাবে আসলে ভাগ্যটাই খারাপ। হরিহরের মা ঠিক আরেকদিন হরিহরকে বাজার করতে দিলে সে চিন্তা করে মা না বললেও আজ বাজার থেকে সে মায়ের জন্য নানরুটি নিয়ে যাবে। দরকার হলে সে আজ নানরুটি খাবে না। কিন্তু বাজারে যাবার পথে গরম গরম নানরুটি বানাতে দেখে তার পরাণ আর বাঁধ মানে না। বাজারে যখন আসছে সে নানরুটি না খেয়ে যেতে পারে না। বরাবরেরর মতই হিসাবে গোঁজামিল করে নিজে একটা নানরুটি খেয়ে আরেকটি মায়ের জন্য নিলো। দোকানদার ফজর আলী বলে, ‘কাইল নিলা মার আজ কার জন্য নিলা?’ -‘আজও মার জন্য। ঐদিন চৌধুরী বাড়ির কুকুর আমার হাত থেকে নানরুটি দুটো নিয়ে গিলো।’ -‘ভাগ্য ভালো তোরে কামড় দেয় নাই। যা গেছে নানরুটির ওপর গেছে, জানের ওপর দিয়ে যায় নাই, শোকর কর। আর কুকুরের ইনজেকশনের দাম কত জানস? দিতে না পারলে জান শেষ। আজ ঐ দিক দিয়া যাবি না, জমিনের কোনাকুনি দিয়ে চলে যা।’ নানরুটি নিয়ে জমির কোনাকুনি পথ ধরে বাড়ির চললো হরিহর। পথ পেরিয়ে রাস্তার ওপর ওঠে হরিহর। কতদূর হাঁটলেই রাস্তার ওপর একটি পুরানো সেতু। সেতুর পাশে আছে বসার জায়গা। হরিহর দেখতে পেলো সেখানে দুটো ছেলে আড্ডা মারছে বসে বসে। কাছে এসে দেখে ওরাতো পাড়ার দুষ্টু রুবেল আর রতন। ওদের হাতে পড়লে আর রেহাই নেই। প্রত্যেক দিন হরিহর কে পেলে ওরা এটা সেটা বলে নাস্তানাবুদ করে ছাড়ে। হরিহর তাড়াতাড়ি নানরুটিটি থলের ভিতর ভরে নিল। কিন্তু দুষ্টু রুবেলের তা চোখ এড়ায় নি। কাছে এলে রুবেল বলে, ‘হরিহর দাঁড়া। হাতের থেকে থলেতে কি ভরলি?’ -‘কই কিছু না।’ -‘মিথ্যা বলিস না।’ হরিহর ভাবে এ আবার কোন কুকুরে পাইলো। -‘কী ভরেছিস বের কর।’- ‘কিছু নাই বললাম তো।’ -‘এদিকে আন থলে।’ বলেই রুবেল থলেটি নিয়ে নিলো। বের করলো নানরুটিটি। -‘এই রুটিই তো রেখেছিস?’ হরিহর চুপ করে রইলো। কিছুক্ষণ পর বললো ‘মার জন্য নিছি।’ -‘হাসালি তুইও আবার মার জন্য নানরুটি নিস! নানরুটি পাগলা তুই বাজার থেকে খেয়ে এসেছিস, আর এটা কতদূর গেলেই খেতে শুরু করবি।’ বলেই নানরুটিটা দুইভাগে ছিঁড়ে রুবেল ও রতন খেয়ে ফেললো। হরিহর মনে দু:খ পেলো মায়ের জন্য আজও রুটি নিতে পারলো না। কী আর করা থলে নিয়ে বাড়ির দিকে চললো। যাবার সময় তাদের উদ্দেশ্যে বললো ‘আমার কথা বিশ্বাস করলি না।’। হরিহরের মাকে যেহেতু নানরুটি আনবে বলা হয়নি সেহেতু মায়ের কাছে বকা খাবার সুযোগ নাই। কপাল খারাপ হয়তো। বাড়িতে গিয়ে বাজার তুলে দিলো মায়ের হাতে। এই হরিহরের নানরুটি খুব প্রিয়। এ কথা গ্রামের ছোট বড় সবাই জানে। সেজন্য মাঝে মধ্যে গ্রামের ছোট বড় অনেকেই নানরুটির লোভ দেখিয়ে বাজারে নিয়ে যায়। নানরুটি খাইয়ে বাজারের থলেটা তার কাঁধে তুলে দেয়। দেশের পরিস্থিতি এখন খুব ভিন্ন। করোনা ভাইরাস নামক এক গুপ্ত ঘাতক জেঁকে বসেছে চারিদিকে। অফিস আদালত বন্ধ। কাজকর্মও বন্ধ। সাধারণ মানুষের কষ্টের সীমা নেই। যারা মানুষের বাড়িতে কাজ করতো তাদেরও একই অবস্থা। হরিহরের মায়েরও একই অবস্থা। কাজকর্ম তেমন নাই। সঞ্চয়ের কিছু টাকা দিয়ে এতদিন চলেছে। কিন্তু এখন যেনো আর চলতে চায় না। অনেক দিন হরিহরের ফজর আলীর দোকানের নানরুটি খাওয়া হয় নি। সে কথা মনে করে তার মন বিষন্ন হয়ে ওঠে। ফজর আলীর চায়ের দোকানও বন্ধ। করোনার এই সময়ে সে বাজার করতে সে দু’একবার রনজুর হাটে গিয়েছিলো। হরিহর এখন মুখে মাস্ক পড়ে। মাস্কটা দিয়েছিলো এলাকার মেম্বার হামিদ আংকেল। বাজার করে আসার সময় ফজর আলীর দোকানের সামনে কিছুক্ষণ নিরবে দাঁড়িয়ে থেকেছে। আহা কতদিন ফজর আলীর নানরুটি খাওয়া হয় নি। বাড়িতে বসে আছে হরিহর। মাঝে মাঝে একটু এদিক সেদিক বের হয়। এই তো সেদিন বাড়ির রাস্তায় বের হলে পাড়ার ছেলে জমির তাকে বলে, ‘বাজারে যাবি চল, ফজর আলীর দোকান খুলেছে, নানরুটি খাওয়ামু।’ -‘আমার সাথে চালাকি কর? আমি জানি ফজর আলীর দোকান বন্ধ। গত কয়েকদিন আগের বাজারে গিয়ে দেখে আমি দেখছি। তুমি আমার সাথে মশকরা কর।’ জমির বলে ‘হ তুই তাইলে খবর রাখস।’ বলেই চলে গেলো জমির। করোনার প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের কষ্ট হবে ভেবে সরকার ধীরে ধীরে দোকানপাট সীমিত আকারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খুলে দেয়ার চেষ্টা করছে। বাজারে কিছু দোকানপাট খুলেছে বলে খবর পেয়েছে হরিহর। কিন্তু বাজারে যাওয়া হয় নি। সত্য যে কিছু দোকনপাট খুলেছে। কয়েকজনের কাছে খবর পেয়েছে ফজর আলীর দোকানও খুলেছে। কিন্তু হাতে টাকা নাই। গেলেও নানরুটি খাওয়া যাবে না। মাও এখন বাজার করতে বাজারে যেতে বলছে না। জীবনটা যেনো দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বিকেলে রাস্তায় বের হেয়েছে হরিহর। পথিমধ্যে রুবেলের সাথে সাথে দেখা। রুবেলকে এড়িয়ে যেতে চাইলো হরিহর। কারণ ঐদিন তার নানরুটি খেয়ে ফেলেছিলে রুবেল। দুষ্টু ছেলের থেকে দূরে থাকা ভাল। কিন্তু রুবেল আগ বাড়িয়ে বলে, ‘কী রে হরিহর রাগ করেছিস, সেদিন নানরুটি খেয়ে ফেলেছিলাম বলে? শোন বাজারে যাচ্ছি। ফজর আলীর দোকান খুলেছে। চল নানরুটি খেয়ে আসি। সত্যি বলছি কিন্তু মিথ্যা না। ঐ দিনের রুটিটা পুষিয়ে দেবো, তোর মায়ের জন্যও একটা কিনে দেবো।’ হরিহর একটু হাসলো। কারণ সে জানে ফজর আলীর দোকান খুলেছে। কথা কিন্তু মিথ্যা না। অনেক ভেবে চিন্তে রবেলের সাথে বাজারে রওনা দিলো হরিহর। রুবেলও চিন্তা করলো তাকে নানরুটি খাওয়ানো দরকার। ঐ দিন এভাবে তার নানরুটি খেয়ে ফেলা ঠিক হয় নি। আর নানরুটিটা যদি তার মায়ের জন্য হয়ে থাকে তাহলে কাজটা মোটেও ঠিক হয় নি। এ সুযোগে অপরাধটা ঘুচিয়ে নেয়া যাবে। হরিহরও যেতে যেতে চিন্তা করে তার মায়ের জন্য দুদিন চেষ্টা করেও রুটি আনতে পারে নি, আজ নিতে পারলে মন্দ হয় না। তারপর সে অনেকদিন পর আবার নানরুটি খেতে পারবে। প্রয়োজনে রুবেলের বাজারের থলে কাঁধে করে নিয়ে আসবে। দুজনেই দুজনের চিন্তাভাবনা ধরে এগিয়ে যায় বাজারে। বাজারে ঢুকেই প্রথমে ফজর আলীর দোকানে ঢুকে দুজন। হরিহরকে দেখে ফজর আলী বলে, ‘হরিহর অনেক দিন পর আইলি। দোকান খুলছি।’ রুবেল দোকানের কর্মচারীকে বলে ‘দুইটা নানরুটি আর দুইটা চা আন।’ -‘ভাইজান নানরুটি নাই, পরোটা দিমু?’ হরিহরের মাথা গরম হয়ে উঠেছে। হরিহর একটু হাবাগোবা। এধরনের মানুষগুলো যখন যেটা বোঝে সেটা, অন্য কিছু সহজে বুঝতে চায় না। ভীষণ একরোখা প্রকৃতির। রুবেল বলে, ‘হরিহর পরোটা দিতে বলি।’ -‘না আমি পরোটা খাই না। তুমি আমারে নানরুটির কথা বইলা আমারে আনছ। আমি নানরুটিই খামু। কর্মচারী বলে ‘নানরুটির কারিগর আসে নাই। সেজন্য নানরুটি বানানো যায় নি।’ হরিহরের উত্তেজিত হয়ে রুবেলকে বলে ‘তুমি নানরুটি বানাচ্ছে কিনা খবর না নিয়ে আমারে আনলা কেন?’- ‘নানরুটি আর পরোটা একই কথা।’ -‘আমার কাছে একই কথা না। নানরুটি নাই জানলে আমি তোমার লগে আসতাম না।’ রুবেল উত্তেজিত হয়ে বলে ‘না খাইলে না খাও, এই আমারে পরাটা দাও।’ হরিহর উত্তেজিত হয়ে টেবিলে হাত দিয়ে আঘাত করে। টেবিলের গ্লাস নিচে পড়ে ভেঙ্গে যায়। ক্যাশ থেকে দৌড়ে আসে ফজর আলী। -‘কী হয়েছে?’ হরিহর বলে ‘আমাকে নানরুটি খাওয়ানোর কথা বলে নিয়ে এসেছে। ব্যাটা নানরুটি বানাচ্ছে কিনা খবর না নিয়ে আমাকে নিয়ে এসেছে। চাচা সেদিন যে নানরুটি নিয়েছিলাম একদিন কুকুরে খেলো, আরেকদিন এই কুকুরে খেলো। বাড়িতে নানরুটি নিতে পারি নাই।’ হরিহরের এমন কথায় উঠে দাঁড়ালো রুবেল, ‘তুই আমারে কুকুরের সাথে তুলনা করলি?’ শার্টের কলার চেপে ধরে হরিহরের। হরিহরও কম যায় না। সেও কলার চেপে ধরলো রুবেলের। দু‘জনের ধস্তাধস্তি। ফজর আলী দুজনের ঝগড়া থামিয়ে পারছে না। পানি ভর্তি আরো দুটো গ্লাস পড়ে ভেঙে গেলো। তাদের ঝগড়া দেখে বাহির থেকে ছুটে আসলো আরো চারপাঁচ জন। কোনমতে দু‘জনকে ধরে দুইদিকে সরিয়ে ঝগড়া সামলালো সবাই। ফজর আলী কোনমতে হরিহরকে বুঝিয়ে-সুজিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলো। দোকানে বসে রুবেল পরোটা দিয়ে চা খেলো। ফজর আলীকে রুবেল বলে ‘চাচা গ্লাসের ক্ষতিপূরণ আমি দেবো। চিন্তা করিয়েন না।’ বাজার করে রুবেল বাড়ি চলে গেলো। কয়দিন ধরে রুবেল আর হরিহর দু’জনেরই দেখা নাই। বাজারে আসে না। গ্রামেও তারা বের হয় না। হরিহরের কয় দিন ধরে জ্বর, গা ব্যথা, শ্বাস কষ্ট। মেম্বারের কানে পৌঁছলে সে কথা। মেম্বার করোনার হেল্প লাইনে ফোন করেছে। লোকজন এসে নমুনা নিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে খবর এলো রুবেলের একই অবস্থা। নমুনা নেয়া হলো রুবেলেরও। দুদিন পর রিপোর্ট এলো দুজনেরই করোনা পজেটিভ। তাদের হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। পুলিশ খবর নিলো কোথায় গিয়েছিলো তারা। ফজর আলীরও নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তার রিপোর্টও এসেছে পজেটিভ। দোকান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেদিন দোকানে আর কারা ছিলো, কারা ঝগড়া থামাতে গিয়েছিলো পুলিশ ফজর আলীর থেকে খবর নিয়ে তাদের ব্যাপারেও খোঁজ খবর নিচ্ছে।