কিছুদিন পূর্বে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে বসবাসরত আমার বড় ভাই বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ ও গবেষক ফরিদ আহমদ এর সাথে দেখা করতে গিয়েছিলাম। বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার রেশ ধরে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে আলাপ হয়। সে আলাপচারিতার আলোকে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা তাঁর মৌলিক পরিবর্তন বিষয় কিছু পরামর্শ এখানে তুলে ধরছি। আশা করি বাস্তব ভিত্তিক এ শিক্ষা ব্যবস্থা আমাদেরকে উপকৃত করবে।
আমাদের দেশে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা দুই প্রকার এবং তা ভিন্ন এবং সম্পূর্ণ ভিন্ন ধারায় প্রবাহমান যেমনঃ
প্রধান ধারা শিক্ষা ব্যবস্থা হল- স্কুল,কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি ভিত্তিক সাধারণ বা অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থা, অপর ধারাটি হলো মাদ্রাসা নামে কথিত শিক্ষা ব্যবস্থা বা মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা এবং তা শুধু মাত্র মুসলিমদের জন্য। মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা তিনটি শাখায় বিভক্ত যেমনঃ
(ক) আলিয়া বা সুন্নিয়া মাদ্রাসা,
(খ) আহলে হাদিস বা ওহাবী মাদ্রাসা,
(গ) কওমী মাদ্রাসা।
মানুষের মাঝে শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্দেশ্য হলো ইতর বা পশুস্তরের মানুষকে সাধারণ জ্ঞান ও বুদ্ধিসম্পন ও বিবেকবান মানুষে পরিণত করা। যার মাধ্যমে আমাদের মাঝে বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, উকিল, প্রফেসর, শিক্ষক, মৌলভী, মেকানিক মিস্ত্রি, নার্স, ধাত্রী অর্থাৎ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ তৈরী হয়। ফলে তাদের নিজ নিজ জিবীকা অর্জনের মাধ্য দিয়ে স্ব স্ব পেশার মাধ্যমে সমাজ সেবা বা দেশকে স্বাধীন রাখার কর্মে অংশ নেয়। এক কথায় বলতে গেলে সবাই সমবেতভাবে স্ব স্ব পেশায় নিয়োজিত থাকার মধ্য দিয়ে দেশের উৎপাদনশীল অর্থাৎ অর্থনৈতিক উন্নতিতে অংশ গ্রহণ করে। সেই সূত্রে মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলভীদেরকেও পেশাজীবী শ্রেণীতে গণ্য করা যায়। কিন্তু আশ্চার্য্যের বিষয় মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থার মাঝে বিভিন্ন সমস্যা বিদ্যমান।
মাদ্রাসা শিক্ষিত মৌলভী নামে পরিচিতজন অন্যান্য পেশাজীবির মত প্রধান শিক্ষা ব্যবস্থায় Schooling নয়। ফলে তাঁদের মাঝে সামাজিক দায়িত্ববোধ গড়ে উঠেনা। বিভিন্ন পেশার জন্য ইচ্ছুক ছাত্ররা সবাই একই রকম সাধারণ বা অসাম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থায় ১০ম অথবা ১২তম শ্রেণী পর্যন্ত সাধারণ বা অসম্প্রদায়িক শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষা লাভ করে। পরবর্তীতে তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী মেডিকেল, ইঞ্জিনিয়ারিং, নার্সিং, পলিটেকনিক্যাল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন পেশায় শিক্ষিত হয়। সেখান হতে প্রফেসর, আইনজীবী, শিক্ষক, ইঞ্জিনিয়ার ইত্যাদি পেশার মানুষ তৈরী হয়। কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থায় সর্বস্তরের শিক্ষা মাদ্রাসাতেই সম্পন্ন হয় যেমন প্রাথমিক শিক্ষা, কলেজ বা ইউনির্ভাসিটি শিক্ষা সব। তাই বাস্তব ক্ষেত্রে এখান হতে পাশ করে তাঁরা বাস্তব ভিত্তিক কোন কাজে অংশ নিতে পারেনা। তাদের পেশা বা কর্মসংস্থান একমাত্র মসজিদ-মাজারের খতিব, মুয়াজ্জেম ছাড়া অন্য কিছু হতে পারেনা। আমাদের হাই স্কুলে বা কলেজে বা ইউনির্ভাসিটিতে আরবীর শিক্ষক, মৌলভী সাহেব বা প্রফেসর সাহেব আছেন। তাঁরা আরবী ভাষার শিক্ষক বা প্রফেসর তা সবাই প্রাথমিকভাবে আধুনিক শিক্ষাধারায় শিক্ষিত এবং তারা আরবী বা ধর্ম শিক্ষা লাভ করেছে College level বা University level হতে। তাই তাঁরা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারিং, প্রফেসরদের মত দক্ষ workforce এর একজন।
কিন্তু মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা হতে পাশ করা একজন মৌলভীর এরকম কোন শিক্ষা না থাকায় তারা দেশের দক্ষ কর্মশক্তির অংশ হতে পারেনা। ফলে দেশের উন্নয়ন কর্মক্ষেত্রে তাঁদের কোন অংশ গ্রহণ তৈরী হয়না। যার কারণে তাদের মাঝে দেশপ্রেম বোধ জাগরিত হয়না। এমন কি তাঁরা দেশের জীবনী শক্তিতে একটি বাধা হিসেবে কাজ করে।
তারা বাংলা ভাষা জানেনা বা পড়তে পারেনা, বিশেষত আহলে হাদিস বা ওয়াহাবী মাদ্রাসার মৌলভী ছাত্ররা। কারণ তাদেরকে এ বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হয় না। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কি কি বিষয়ে শিক্ষা দেয় তাও সকলের অজানা, তাদের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা কিভাবে হয় সে বিষয়ে রাষ্ট্র বা সরকার জানে কিনা সন্দেহ।
এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সব রকম মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা সমাজের অর্থনৈতিক ও সামাজিক সর্বনিম্ন স্তর থেকে আসে এবং তারা ‘লিল্লাহ’ বোর্ডিং নামক মাদ্রাসা ঘরের মধ্যে অবস্থিত ব্যবস্থাপনায় খাওয়া শোয়ার ব্যবস্থা করে। এই সব লিল্লাহ বোর্ডিং মুসলমান বিত্তশালী লোকদের সদকা খয়রাতের বা অর্থানুকুলে চলে এবং হয়ত গোপনে কোন রাজনৈতিক দলের অর্থ ও স্বার্থে বা দেশ বহির্ভূত বিদেশীর স্বার্থে এবং পৃষ্ঠপোষকতায় নির্বাহ হয়। এসব মাদ্রাসার শিক্ষক ছাত্ররা দলে দলে কাফেলা কাফেলায় শবেররাতের রাত্রে ও দিন রমজান মাসে অফিসে, আদালতে, হাটে-বাজার, মাঠে-ঘাটে, লঞ্চ, ট্রেনে ও বাসে দলে দলে সদকা জারিয়ার আহাজারী করে সাধারণ মানুষের কাছ হতে ধর্মের লোভ দেখিয়ে অর্থ সংগ্রহ করে। তাদের সংখ্যা হাজারে হাজার। বিগত ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার পর্দায় তথাকথিত ঢাকা লংমার্চ হেফাজতে ইসলাম নামক দলের লাখো লাখো লাঠিসোটাধারী তালেবে এলম দেখেছি। তারপর দেখেছি এক বৃদ্ধ মৌলভী শফি, মৌলানা বাবুনগরী বজ্রকন্ঠে ১৩ দফা দাবীনামা পেশ করেন এবং ১৩ দফা দাবী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে না মানলে সরকারের পতনের ঘোষণা। এরি মাঝে দেখা গেল কিছু পেন্ট শার্ট পরিহিত যুবক তাদেরকে বরফের শরবৎ খাওয়াচ্ছে। তারপর শুরু হলো ভাংগচুর, জ্বালাও পোড়াও। জনগণ ও সরকার বোকার ন্যায় চেয়ে চেয়ে দেখলো বাংলাদেশের মানুষের পরিশ্রমলব্ধ অর্থ সম্পত্তির ধ্বংস ও অপচয়।
বাংলাদেশের ন্যায় সম্পূর্ণ ভিন্ন ভিন্ন খাতে প্রবাহিত দুই-তিন বা চার ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা পৃথিবীর আর কোথাও আছে কিনা আমাদের জানা নেই। থাকলেও হয়ত এরকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ধ্বংসযজ্ঞে অংশ গ্রহণ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত ।
বাংলাদেশ হেফাজতের কর্মকাণ্ড হতে শিক্ষা নিয়ে দেশের ভবিষ্যৎ সুন্দর ও ভালো মানুষ তৈরীর জন্য সঠিক ইতিহাস প্রণয়নের জন্য বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থার সংস্কার প্রয়োজন। পৃথিবীর অন্যান্য সভ্য দেশের মত এমন কি মধ্যপ্রাচ্যের আরব মুসলিম দেশের মত ও বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যবস্থা হওয়া উচিত মাত্র একটি। এ বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো দেশের সকল শ্রেণীর সকল ধর্মের মানুষেরা মাত্র একটি শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে শিক্ষা লাভ করবে। সকল শ্রেণীর ছেলেমেয়রা ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে একই সিস্টেমে প্রাথমিক ভাবে লেখাপড়া করবে সাধারণ স্কুলে, ১০ম বা ১২ তম ক্লাস পর্যন্ত। অর্থাৎ একটি পদ্ধতি শিক্ষা ব্যবস্থা পরিচালিত হবে। এরপর বর্তমানে প্রচলিত শিক্ষার ধারাবাহিকতায় ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, প্রফেসর, কেরানী ইত্যাদি শিক্ষার মত ধর্মীয় শিক্ষা কলেজ ও ইউনির্ভাসিটি লেভেল থেকে শুরু হবে এবং সবরকমের শিক্ষা ও বিষয়বস্তু সরকারের নিয়ন্ত্রণের আওতায় থাকবে। তবে ধর্মীয় শিক্ষা বা ইসলামী শিক্ষার নামে যে ব্যবস্থা বর্তমানে বিদ্যমান তাঁর সম্পূর্ণ সরকারী ব্যবস্থাপনায় ও নজরদারী করতে হবে। ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই থাকবে তবে এটি মাদ্রাসা নামক এ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে নয় তা হতে হবে সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্রীয় সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমেই।
অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ খৃষ্টান চারটি সম্প্রদায়ের বসবাস। হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃষ্টান সম্প্রদায়ের লোকেরা ও তাদের স্ব স্ব ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। তারা সবাই সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে লেখা পড়া করে। কিন্তু মুসলমানরা এখানে একটু ভিন্ন। তাঁরা ধর্মীয় শিক্ষার জন্য প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে সর্বস্তরে মাদ্রাসা শিক্ষায় শিক্ষিত করে আলাদা একটি সম্প্রদায় সৃষ্টি করে।
হিন্দু ছেলেরা ধর্ম শিক্ষা নেয়। তাঁরা তাদের স্থানীয় মন্দির ভিত্তিক টোলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ধর্ম শিক্ষা নেয়। যেহেতু জন্মসূত্রে একমাত্র ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের লোকেরাই পুজা পাঠ এর অধিকার রাখে তাই তাঁরাই একমাত্র পুজা পদ্ধতি শিখে। সম্প্রদায়ের বাকী ছেলে মেয়েরা শুধু তাঁদের ধর্ম সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান অর্জন করে।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের লোকেরা জীবনের যে কোন একটা সময়ের জন্য গেরোয়া কাপড় পরে কিছুদিন মন্দিরে অবস্থান করে ধর্ম শিক্ষা নেয়। এতে তাদের সাধারণ শিক্ষায় স্কুলে লেখা পড়াতে কোন অসুবিধা হয়না। মন্দির থেকে বেরিয়ে আসলেই তাঁরা আবার সাধারণ সামাজিক অবস্থানে থেকে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করে। তবে তাদের মধ্যে সামান্য সংখ্যক হলেও কিছু লোক জীবন উৎসর্গ করে চিরকুমার অবস্থায় মন্দিরে অবস্থান করে শাস্ত্র শিক্ষা করে তারা শ্রমন বা পুজাপাঠকারী পুরোহীতের মর্যদায় সমাসীন হয়।
খৃষ্টান সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েরা আমেরিকা ইউরোপে কেবলমাত্র রবিবারে সকালে Sunday School এ যায়। পাদরী বা ধর্মযাজকদের দ্বারা পরিচালিত মহল্লা ভিত্তিক Parochial স্কুলে যায়। এদের মধ্যে যাদের পাদরী বা ধর্ম যাজক হবার ইচ্ছা থাকে তাঁদের মধ্যে হতে ২/৪ জন লোক ১২ তম শ্রেণীর পর আনক্ল্যায়েজুয়েশন (Underproduction) লেভেল থেকে কলেজ বা ইউনির্ভাসিটি লেভেলে Seminary নামক বিদ্যালয়ে ধর্ম শিক্ষা করে। এখানে আমি উদাহারণগুলো এজন্যই বর্ণনা করেছি যাতে আমার বক্তব্য সহজে বোঝা যায়।
আমার মতে পৃথিবীর অন্যান্য সভ্যদেশের মত বাংলাদেশেও একটি মাত্র শিক্ষা পদ্ধতি বা Institutionalized schooling system থাকবে। ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই থাকবে মুসলিম ধর্মীয় শিক্ষা অবশ্যই থাকবে এবং সবার জন্য থাকবে। তবে এ শিক্ষা ব্যবস্থা হবে প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার অনুরূপ ১২ তম বা এইচ এস সি পাশ করার পর যেমন বিভিন্ন বিভাগে ছাত্র/ছাত্রীরা ভর্তি হন যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, এম.বি.এ ইত্যাদি সেভাবে যারা ধর্মীয় শিক্ষা নিতে ইচ্ছুক তাঁদের জন্য সাধারণ ব্যবস্থা থাকবে। এখানে আমি তা উদাহরণ সহকারে বুঝানোর চেষ্টা করছি।
প্রাথমিক শিক্ষা : প্রাথমিকভাবে এ শিক্ষা ব্যবস্থার নাম হবে মকতব। ৫ বছর থেকে ৭ বছর বয়স পর্যন্ত ছেলে মেয়েরা এতে ভর্তি হবে। আরবী অক্ষর জ্ঞান, আরবী বানান শিক্ষা, আমপারা ও সুরা বাকারা চালু পড়া। এর সময়সীমা নির্ধারিত হবে সাপ্তাহিক দুদিন ছুটির প্রথম দিন সকালে ৭ টা থেকে ১০ টা পর্যন্ত।
দ্বিতীয় পর্যায়ে মকতব কুরআন পড়া ও বানান শিক্ষা তার সাথে ২ ঘন্টা কুরআন, ১ ঘন্টা দিনীয়াত ৮ থেকে ১০ বছর বয়সের অর্থাৎ ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত বা যেভাবে শিক্ষাবিদদের বিজ্ঞ বিবেচনা মোতাবেক সঠিক হয়। তারপর থেকে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত কুরআন ও দিনীয়াত ঐভাবে ১ ঘন্টা করে ২ ঘন্টা প্রত্যেক শুক্রবার সকালে মক্তবে বাংলা অর্থসহ কুরআন পাঠ করা।
এইচ. এস. সি পাশ করার পর প্রতিযোগীতার মাধ্যমে মেডিকেল বা ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলে যেভাবে ভর্তি পরীক্ষা হয় সে পদ্ধতিতে পরীক্ষার পর বাছাই এর মাধ্যমে কলেজ বা ইউনির্ভারসিটির বিভিন্ন লেভেলে নির্ধারিত কলেজ বা ইউনির্ভাসিটিতে তারা পড়বে ৩ বছরের অনার্স এবং ৫ বছরের এম. এ অর্থাৎ ধর্মীয় ডিগ্রীধারী।
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার স্কুল ঘর ও নির্বাহ :
১। গ্রামেগঞ্জে পাড়ায় পাড়ায় আর্থিক সংগতিপূর্ণ লোকদের বাড়ীর বাহিরের ঘরে জনসংখ্যা হিসাবে প্রত্যেক পাড়ায় ২ বা ততোধিক ঘরে ছেলে-মেয়ে একত্রে অবশ্য পৃথকভাবে বসার ব্যবস্থায় এ স্কুল স্থাপনা করা যায়। এ সব ধর্মীয় স্কুলে মৌলভী সাহেবদের তাদের লেখাপড়ার মান অনুযায়ী হিসাব করে শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দেয়া যেতে পারে। স্থান বিশেষে মহিলারাও নিয়োগ পেতে পারে।
এ শিক্ষা ব্যবস্থার তদারকি ও কতৃত্ব¡ স্থানীয় ইউনিয়ন কাউন্সিলের হাতে থাকবে। প্রত্যেক পরিষদ সদস্য তার ওয়ার্ড এলাকায় মক্তবের তদারকীতে থাকবে। ইউনিয়ন পরিষদ এর প্রশাসনে একটি ধর্মীয় শিক্ষা বিভাগভুক্ত তদারকী অফিসার তদারকীর মাধ্যমে শিক্ষার উন্নতি অবনতি নিয়ন্ত্রন করবে। পরিষদ চেয়ারম্যান স্থানীয় ওয়ার্ড মেম্বার এর পরামর্শে স্থানীয় জনগণ হতে শিক্ষক নিয়োগ করবে এবং চাকুরীচ্যুত করবে। কোনরূপ স্থানান্তরে বদলী করা চলবেনা। তাদের অর্থাৎ শিক্ষকদের এবং Union Education officer দের বেতন ভাতা ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক দেয়া হবে। এ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ সরকার অর্থের যোগান দিবে।
সকল মাদ্রাসা শিক্ষায়তনগুলি যেমন সুন্নি, ওয়াহাবী ও এবতেদায়ী বা কওমী সব ধরনের শিক্ষায়তনগুলি প্রাথমিক বা মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলে রূপান্তরিত হবে এবং এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের বর্তমান সাধারণ শিক্ষা পদ্ধতির শিক্ষায়তনে রুপান্তরিত হবে।
ইসলামিক উচ্চ শিক্ষা :
১। দেশে আধুনিক অবকাঠামো সম্পন্ন একটি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা যেতে পারে। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ও একটি Faculty of Islamic studies এমন কি Faculty of theologyও স্থাপনা করা যায়। যাতে বিভিন্ন বিভাগ কুরআন, হাদিস, সাহিত্য, ইতিহাস, আইন, অর্থনীতি ও গবেষণাগার সুশিক্ষিত দক্ষ শিক্ষক প্রফেসর ডীন দ্বারা পরিচালিত হবে। আরবী ভাষা শিক্ষা ও কুরআন, হাদিস শিক্ষা এক নয়। দু’টি সম্পূর্ণ ভিন্ন। সেটা মনে রাখতে হবে।
আমার মতে এ শিক্ষা ব্যবস্থার সিলেবাস হবে নিম্নরূপঃ
(১) ভাষা : আরবী, উর্দু ও ফারসী।
(২) ধর্ম : বিভিন্ন ধর্মীয় জ্ঞান, যেমন- ইসলাম, খৃষ্টবাদ, Judlaism বা ইহুদীবাদ, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, শিখ ধর্ম, শিনটো ধর্ম।
(৩) ইসলাম এ বিভিন্ন ফিরকার উৎপত্তি, ছুন্নি, শীয়া, খারেজী, মুতাজিলা, বাহাইয়ী, ওয়াহাবী আহলে হাদিস, ইমামী শীয়া, আগাখানী, কাদিয়ানী বা আহমদীয়া ইত্যাদি।
(৪) ইতিহাসঃ আরব জাতির ইতিহাস ইহুদীর ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস, বিভিন্ন ধর্মের ইতিহাসগুলি পাঠের উপযুক্ত থাকবে ।
(৫) ধর্মীয় প্রবত্তাদের ইতিহাসঃ ইতিহাস প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদদের বিবেচনা মোতাবেক নির্ধারিত হবে।
সর্বপ্রথমে ৫ জন বাঙালি Oriental শিক্ষাবিদ্ সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে কুরআন শরীফ বাংলা অনুবাদ পূর্বক (কোন-তফসিরের প্রয়োজন নাই) শুধু আরবী বাংলা অনুবাদ পূর্বক দেশে ঘরে ঘরে পাঠও চালু করার ব্যবস্থা করতে হবে তাতে ধর্মের নামে সন্ত্রাসবাদ,ধর্মীয় সন্ত্রাস ও মতবাদ দূর করা সম্ভব হবে। বহুদিন আগে কোন এক বিদেশী ইংরেজী সাময়িকীতে পড়ে ছিলাম। যা এখানে তুলে ধরছি।
Religion begins by offering magical aid to the harassed and bewildered human being. However it ends by fighting suicidaly in the lost cause of the past. Men never do evil so completely and cheerfully as and when they do it from religious conviction, and this evil is a direct result of a human perversion of FAITH, through selfish ambition or conceit used by those in power to control the masses for exploitation.
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও বিশেষজ্ঞ মহল এ বিষয়ে নজর দিলে দেশের বর্তমান এ জরুরী বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব বলে আমি মনে করি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান দ্বারা আমি যতটুকু বুঝেছি, আমি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সরকার যদি আন্তরিক হয় তবে এ সুপারিশ বাস্তবায়ন কঠিন কোন বিষয় নয়। আমি আশা করর সরকার এ বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিবেন।
বিঃ দ্রঃ আমার মতে, কুরআন শরীফ এর বাংলা অনুবাদ বা বিশেষ অর্থে অনুবাদ কমিটি গঠন সরকার নিজের হাতে না নিয়ে, বাংলাদেশের বর্তমান মুসলিম ফির্কার, প্রত্যেক ফির্কার মৌলবীদের নিজ দ্বারা মনোনীত পাঁচ জন প্রতিনিধি দ্বারা প্রত্যেক ফির্কারে এক একটি অনুবাদ কমিটি থাকবে। যেমন সুন্নি, ওয়াবী, কওমী, কাদিয়ানী। অর্থাৎ বাংলাদেশের এই চার প্রধান ফির্কায় ৪টা কমিটি (প্রত্যেক ফির্কায় ৫ জন সদস্য) গঠন করবে।
প্রত্যেক ফিরকা তাদের কৃত কুরআন অনুবাদ।
কোন ফিরকা বা নাম উল্লেখ না করে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে জমা দিবে।
ধর্ম মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ করে ০৯ জনের সদস্য বিষ্টি একটি সিলেক্ট কমিটি গঠন করবে। সদস্যদের মধ্যে আহলে হাদিস বা ওয়াহাবী ফির্কার একজন মৌলবী, সুন্নি ফির্কার একজন মৌলবী, আর ০৭ জনের মধ্যে ০৪ জন উচ্চ শিক্ষিত শিক্ষাবিদ্-প্রফেসর, দার্শনিক, বৈজ্ঞানিক ইত্যাদি আর ০৩ জন উচ্চ শিক্ষিত সরকারী অফিসার, একজন উচ্চ পদস্থ সরকারী অফিসার এই কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে থাকবে। এই কমিটি আলোচনা সাপেক্ষে সবচেয়ে উত্তম অনুবাদ Select করবে। এর এটাই সরকারী ভাবে ছাপিয়ে দেশের ঘরে ঘরে পাঠ চালু করবে। Selected অনুবাদের বইতে চার প্রধান ফির্কার চারটি কমিটির মৌলবীদের নাম থাকবে।
এই ব্যাপারে National guidance হিসেবে ধর্ম মন্ত্রণালয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা করতে পারে। তবে এই পর্যায়ে কোন দেশী বা বহির্ভূত কোন ব্যক্তি বা সংস্থা তাদের নিজেদের কোন স্কুলে বা মক্তব প্রতিষ্ঠা করতে না পারে তার ব্যবস্থা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তার জন্য রীতিমত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা সদস্য/সদস্যা মারফৎ তদারককারী অফিসার শিক্ষা বিভাগ ও স্বরাষ্ট্র বিভাগে ত্রৈমাসিক রিপোর্ট পাঠানোর বন্দোবস্ত করতে হবে।