Site icon Shaili Tv

বৈশাখী মেলা / শিরিন আফরোজ

প্রতিবছর চৈতির বাসার কাছেই পহেলা বৈশাখে বসে বৈশাখী মেলা। গরীব ঘরের মেয়ে চৈতি। নবম শ্রেণীতে পড়ে সে। কিন্তু স্বভাবে এখনও ছোট ছোট ভাব। যে কোনো মেলা হলেই মেলায় যাওয়ার জন্য চৈতির মন আনচান করে, তার মধ্যে বৈশাখী মেলার প্রতি আকর্ষণ অন্যরকম। সামনে আসছে বৈশাখী মেলা, বান্ধবীদের সাথে মেলায় যাবে, মেলা থেকে রঙ বেরঙের চুড়ি কিনবে, আইসক্রিম খাবে, নাগরদোলায় চড়বে নানান ইচ্ছে চৈতির মনে। বৈশাখী মেলার অনেক আগে থেকেই শুরু হয় চৈতী আর চৈতির বান্ধবীদের বৈশাখী মেলা নিয়ে প্রস্তুতি মূলক কথাবার্তা। চৈতির বান্ধবীরা সবায় মোটামুটি সচ্ছল পরিবারের। বান্ধবীদের মধ্যে কেউ বলে মেলায় দুইশত টাকা নিবে আবার কেউ বলে তিনশত টাকা নিবে আবার কেউ বলে পাঁচশত টাকা নিবে। সবার কথা শুনে চৈতি মুখটা মলিন করে বলল, আমি তো তোদের মত অত টাকা নিয়ে মেলায় যেতে পারবো না রে। চৈতির মুখে এমন মন খারাপের কথা শুনে সাথে সাথে চৈতির বান্ধবীরা চৈতিকে জড়িয়ে ধরলো। বান্ধবীরা চৈতিকে বলে, তুই যা নিতে পারিস নিস তাতে কোন সমস্যা নাই। আমরা যা যা খাবো তুইও তা তা খাবি, আমরা সবাই মিলে তোর টাকা ভাগাভাগি করে দিবো। তোকে নাগরদোলায় চড়ানোর দায়িত্বও আমাদের, এবার তো একটু মুখটা ঠিক কর। বান্ধবীদের কথা শুনে চৈতির ঠোঁটে মিষ্টি মায়াবী হাসির দেখা মিললো। বান্ধবীদের চৈতি বলল, তোরা চাইলে তো আমার সাথে সম্পর্ক না রাখতে পারতি, তোরা সবাই বড় লোক আর আমি তো গরিব, বারেবার তোরা আমাকে বিভিন্ন কিছুতে সহযোগিতা করে আসছিস। তোদের ঋণ আমি কোনদিন শোধ করতে পারবো না, বলতে বলতে চৈতির গাল বেয়ে জল গড়িয়ে গেল। পশ্চিমাকাশে সূর্য প্রায় ডুবু ডুবু সবাইকে বাসায় ফিরতে হবে, প্রাইভেট থেকে যে যার মত বিদায় নিয়ে বাড়ি চলে গেল। চৈতির বান্ধবীদের মধ্যে সবচেয়ে বড়লোক আর নরম মনের হলো নিশী, কারো কষ্টের কথা নিশী সহ্য করতে পারে না। নিশী প্রাইভেট থেকে হোক আর স্কুল থেকে হোক বাসায় ফিরে মায়ের সাথে কোথায় কি হয়েছে না হয়েছে সব কথা বলে, মাও মেয়ের সব কথা মন দিয়ে শুনে। নিশীর মা জানে চৈতির পরিবারের অবস্থা দূর্বল, তাই মেয়েকে সব সময় বলে চৈতির প্রয়োজনে সব সময় সহযোগিতা করতে। নিশীর মা একজন শিক্ষিকা আর বাবা ডাক্তার। নিশী বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে, তাই নিশীর সখ আহ্লাদ কোনটাতেই কখনো কমতি থাকে না। কিন্তু নিশীর মা নিশীকে কখনও অন্যায়ে প্রশ্রয় দেয় না। মেয়েকে সবসময় বলে, নিজে সুন্দর করে ভদ্রভাবে চলবে আর সহপাঠীদের সাথেও সবসময় ভালো ব্যবহার করবে। নিশীর সাথে চৈতি ও অন্য বান্ধবীরাও সুন্দর ও ভদ্র চলাফেরা করে। চৈতী, নিশী ও অন্য বান্ধবীসহ ছয়জন সবসময় একসাথে প্রাইভেট পড়ে এবং বেড়াতে গেলেও এক একজনের বাসায় এক সাথে যায়। ছয় বান্ধবীই পড়ায় ভালো তাই স্কুলের শিক্ষকেরা তাদের খুব ভালোবাসে ।
ক্লাসে একদিন বাংলার শিক্ষিক চৈতিকে ক্লাসে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞেস করে, চৈতি এবার বৈশাখী মেলায় যাবে? চৈতি বলে, যাব স্যার; আমরা ছয় বান্ধবী একসাথে অনেক মজা করবো। চৈতির কথা শুনে স্যার মুচকি হাসে। স্যার বলে, আমিও আমার মেয়েকে নিয়ে মেলায় যাব, আমার মেয়ের সাথে তোমাদের পরিচয় করিয়ে দিব। মেলায় তোমাদের আমি হাওয়ায় মিঠাই খাওয়াব। স্যার ক্লাসে সবার উদ্দেশ্যে বলে, তোমাদের যার সাথেই আমার দেখা হবে সবাইকে হাওয়ায় মিঠাই খাওয়াব। স্যারের কথা শুনে সবায় ভীষণ খুশি। অবশেষে আসলো পহেলা বৈশাখ। ছয় বান্ধবী এক সাথে মেলায় গেল সাজুগুজু করে, দেখতে লাগছে যেন ছয়টি পরি। ইচ্ছে মত আনন্দে শেষ করলো পহেলা বৈশাখ। একজন অন্যজন থেকে বিদায় নিতে নিতে বলে, আগামীর পহেলা বৈশাখে আমরা আরও বেশি আনন্দ করবো একসাথে। সবাই এক জনের হাতের উপর অন্যজন হাত রেখে সারা জীবন বন্ধুত্বের অঙ্গীকার করে ভালোবেসে।
মূলভাব : গল্পে চৈতি গরিবের মেয়ে, কষ্ট করে পড়ালেখা করে। অন্যদিকে চৈতির সাথে বন্ধুত্ব যাদের তারা সবাই সচ্ছল পরিবারের। চৈতির বান্ধবীরা সচ্ছল পরিবারের হলেও চৈতির বান্ধবীরা চৈতিকে কখনো অবহেলা বা তুচ্ছ করে না বরং ভালোবাসে। চৈতির বান্ধবীদের বন্ধুত্বে প্রমাণ হলো বন্ধুত্বের সম্পর্ক টাকা- পয়সা দিয়ে মূল্যায়ন হয় না। সুন্দর মনের মানুষ হতে পারিবারিক শিক্ষা প্রয়োজন, চৈতির বান্ধবীরা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি পারিবারিক শিক্ষায়ও এগুচ্ছে আগামীর পথে।

Exit mobile version