Site icon Shaili Tv

মহীবুল আজিজ-এর কবিতা ‘শেষকৃত্য’

বেয়াদবির আর জায়গা পাস না!
গেস্টাপো সৈন্যের ধমকে কেঁপে ওঠে পিপিলীকারাও
অথচ তখনও লোকটার চোখেমুখে দুর্বোধ্য বিস্ময়,
একটু আগেই যে চোয়াঁড়েমত লোকটা কব্জিতে
সংখ্যার উল্কি নিয়ে গেছে তার সঙ্গেও
যথেষ্ট ভদ্র আচরণ করেছিল তারা।
কি নাম তোর?
মিনমিনে স্বরে বলে—এডল্ফ্ লাইবনিৎজ।
তখন ‘পৃথিবী যেখানে’র কবি বাম ‘দ্রোগা’র লিখিয়ে
তাদেউস বোরোভস্কির হৃদপিণ্ডের দেয়ালে দুর্জ্ঞেয় টোকা পড়ে—
ভয়ংকর একনায়ক আর শ্রেষ্ঠ গণিতবিদকে একসঙ্গে বয়ে
লোকটা দিনমান জুতোর কাজ করে ভারসাভার ইয়েনাশের চত্বরে।
একটা ইতর ছোটলোক তুই!
আজ্ঞে, নামটা আমার বাবার দেওয়া।
মরে বেঁচেছে, নইলে আজ পুড়িয়ে মারতাম ব্যাটাকে!
ফ্যালফেলেচোখ লোকটা তখনও জানে না তার ধৃষ্টতার হেতু—
দুই গেস্টাপো পরস্পর কীসব আলাপ করে সংকেতে,
অপেক্ষমান তাদেউস বোঝে,
বোঝে তার অন্তর্গত সংবেদনা ও কবিমন দিয়ে
যে-মন নিয়ে অইহুদি তাঁর ঠাঁই হয়েছে আউশভিচে।
গেস্টাপোটা ভেবেছিল জয়িফিংগার বা চ্যাপলিনবার্ট
কিংবা টুথব্রাশ মুশটাশের মালিক পৃথিবীতে কেবল দু’জনই,
কিন্তু দ্বিতীয় জনকে যায় নি পাওয়া হাতের নাগালে।
এখন এই তৃতীয় আগমনে চ্যাপলিনের ওপরকার
সমস্ত বিরক্তি ক্ষোভ ক্রোধ গিয়ে পড়ে বেচারা জুতোঅলাটার ওপর।
দশ সেকেন্ডের মধ্যে একটা গেস্টাপো খুরটা হাতে তুলে নিলে
অন্যজন হ্যাঁচকা টানে লোকটাকে পরিপূর্ণ গোঁফশূন্য করে দিলে
তাদেউস দেখে, পৃথিবী থেকে সম্ভাব্য তৃতীয় জনের,
এতক্ষণ যে তার সামান্য সম্বল গোঁফটুকুর আশ্রয়ে
পৃথিবীর ভয়ংকরতম একনায়কের দ্বিত্ব সৃষ্টি করে রেখেছিল,
গেস্টাপোদের মুহূর্তের কৃত্যে টুটে গেছে
সমস্ত সাদৃশ্য সমস্ত বিরক্তি ক্ষোভ ও ক্রোধের উৎস।
কব্জিতে সিল মারতে মারতে গেস্টাপো হাঁকে—
সেভেন সেভেন সেভেন ট্রিপল সেভেন,
বড় ভাল সংখ্যা পেয়েছিস তুই!
এক ধাক্কায় লোকটা ছিটকে পড়ে পরের কামরায়,
আমরণ গোঁফবাহী জীবনের উপান্তে এসে রেখে যায় শেষ চিহ্ন।
ভারসাভার এডল্ফ্ ঢোকে গ্যাসচেম্বারে,
গোঁফে তা দেয় বার্লিনের এডল্ফ্।

Exit mobile version