Site icon Shaili Tv

রমজান মাহমুদ : শিশুতোষ ও ব্যঙ্গপ্রবণ সমাজমনস্ক ছড়া রচনায় নিপুণ-কারিগর

যে ক’জন বলিষ্ঠ ও মেধাবী লেখক বর্তমানে বাংলাদেশের শিশুসাহিত্যকে পত্র-পল্লবে ভরিয়ে তোলার ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন, রমজান মাহমুদ তাঁদের অন্যতম। বিশেষত ছড়া ও কিশোরকবিতা রচনায় তিনি যেমন স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বচ্ছন্দ, তেমনি পরিশ্রমী ও নিষ্ঠাবান। বেশ কয়েক বছর ধরে শ্রম, সাধনা ও মেধার সম্মিলন ঘটিয়ে শিশুসাহিত্যকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাঁর প্রচেষ্টা লক্ষ্যণীয়।
শিশুতোষ ছড়া রচনায় যেমন রমজান মাহমুদ অতুলনীয়, তেমনি ব্যঙ্গপ্রবণ সমাজমনস্ক ছড়া রচনাতেও তিনি নিপুণ-কারিগর। তাঁর কিছু কিছু ছড়া শুধু শিশুরঞ্জনি হিসেবে কাজ করে, আবার কিছু ছড়ার চরিত্র্যধর্ম একটু অন্যধরনের। সুরে সুরে শিশুরা আন্দোলিত হলেও এসব ছড়া মূলত বয়স্ক মননের তীব্র মনোযোগ প্রত্যাশা করে। শিশুরা ছন্দের দোলায় আপ্লুত হয় ঠিকই, কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তার রসের ভোক্তা বয়স্কজন। রমজান মাহমুদের একটা ছড়ার উদাহরণ:
যদু চান কলা খায়
মধু কান মলা খায়
হাতিয়ার খুশি রায়
লাথি আর ঘুষি খায়।

বেচারাম ঘেঁটে খায়
পেঁচারাম খেটে খায়।
আবু ঘাটে হাওয়া খায়
বাবু হাটে ধাওয়া খায়
জব্বার আলী খাঁয়
সব্বার গালি খায়।
এখানে দেখা যায় ― এই ছড়ার পরিণতিতে কোনো চমক নেই। কৌতুককর সমাধান নেই। তবু এটি অভিনব ছড়া। একটা পঙক্তির সাথে আরেকটা পঙক্তির অন্ত্যমিলে আমরা অভিনবত্ব দেখলেও, সাধারণত একটা পঙক্তির প্রত্যেক শব্দের সঙ্গে পরের পঙক্তির প্রত্যেক শব্দের মিল খুঁজে পাই না। এই আলাদা বিশেষত্বের জন্য ছড়াটি পেয়েছে বিশেষ মর্যাদা।

রমজান মাহমুদের কিশোর কবিতাও অনন্য। বিষয়-বৈচিত্র্যে, শব্দ-অলংকারে, ছন্দ-নৈপুণ্যে, উপমা-চিত্রকল্পে প্রতিটি কবিতা অসাধারণ। এ পয়ন্ত ১৪টি বই প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। ছড়া ৮টি, লিমেরিক ২টি, কিশোর কবিতা ১টি, ক্লেরিহিউ ১টি, গল্প ২টি। তন্মধ্যে গাছবন্ধু, পিঁপড়া ও শিপরা, যখন যেমন তখন তেমন, ধুমধাম, নূপুর বাজে দুপুর সাঁঝে উল্লেখযোগ্য। সম্পাদনা করেছেন ছড়ার কাগজ, কিশোর কাগজ, লিমেরিক, ম্যাজিক লণ্ঠন, ছড়া পড়ি জীবন গড়ি ( কিন্ডার গার্টেনে পাঠ্য)। লেখালেখির জন্য বেশ কিছু পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আছে অগ্রণী ব্যাংক বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সম্মাননা।
রমজান মাহমুদের জন্ম : ১০ নভেম্বর ১৯৭১, পাইন্দং, ফটিকছড়ি, চট্টগ্রামে। গণিতে এম এসসি, এম এড ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতাকে নিয়েছেন পেশা হিসেবে।
চট্টগ্রাম একাডেমির পরিচালক রমজান মাহমুদ এখন অবস্থান করছেন ঢাকায়।

Exit mobile version