তাহার নাম মৌসুমী।আমার সহিত তাহার দেখা হইয়াছে হাতের কড়া গুনিয়া বারোটি বৎসর হিবে।কলেজ ফাংশানে গান গাহিতে উঠিয়াছিলো সে।শুনিলাম তাহার অপূর্ব কন্ঠে -লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনুগো আঁখি খোল….।

ধীরে ধীরে পরিচয় -বন্ধুতা।ক্লাসের ফাঁকে ঝালমুড়ি খাইবার মুহূর্তে আমার চোখ আটকিয়া থাকিতো মাঠে।বাতাসে সবুজ ঘাস বহিয়া যাইতো-ঢেউয়ের মত!
কেন জানি মনে হইতো একটু আধটু লিখিতাম বলিয়া ও বোধকরি আমার জন্য তাহার দুর্বলতা ছিলো।

শুভ্র পোশাকে কলেজে যাওয়া আসা করিতাম বলিয়া আড়ালে আমাদিগকে ফার্মের মুরগি ডাকিতে যাহাদের খুব ভালো লাগিতো।আবার বিবাহের উপযুক্ত পাত্রী হিসাবে তাহারা আমাদিগকে সেরা বিবেচনা করিতে -কার্পণ্য করেন নাই!

কি করিয়া জানি,আগন্তুক দেখিলেই আমরা বুঝিয়া ফেলিতাম “ওই আসে-ওই আসে”!

কাহারো সহিত সম্পর্ক-টম্পর্ক করিবার কোনো চিন্তা মাথায় রাখিয়া নহে।কেন জানিনে,খুব সহসা গাঁটছড়া বাঁধিবার ইচ্ছা কখনোই মনে আসে নাই।

আর একেবারে চিনিনে-জানিনে এমন কাহাকে তো প্রশ্নই আসেনা।কেহ কেহ ভাবিতো বিবাহের সার্টিফিকেটের জন্যই বুঝি কলেজে পড়া।গন্ডি বদ্ধ কথাগুলো একেবারেই ভালো লাগিতো না।

মনে পড়িয়া যায়,আরেক বান্ধবীর কথা গোলাপ লইয়া তাহার কী -অসাধারণ একখানা কবিতা।একজনকে সে ভালোবাসিতো তাহার একখানি ছবি সর্বদা রাখিতো।তাহারা বেশিদূর অগ্রসর হইতে পারিতোনা।” না গেলো বলা একটি কথা/না গেলো বোঝা একটি সুর/আমার মধ্যে তোমার মায়া /কেনো ফেলে এত অন্তঃপুর”।

পরে শুনিয়াছি মধ্যপ্রাচ্য নিবাসী এক ব্যবসায়ীর সহিত তাহার বিবাহ্ হইয়াছে। গোলাপ লইয়া লেখা শুধু নহে,দেখিতে ও সে ছিলো ভারি সুন্দর।যাহার স্ত্রী হইয়াছে সে নিশ্চয়ই “পুতুল বউ” বলিয়াই ডাকিবে।মোকামে মাহমুদা কে মনে পড়িতেছে।

মৌসুমী প্রসঙ্গে ফিরিয়া আসি।আলাপের এক পর্যায়ে জানিলাম- সালাম নামের এক তরুণকে সে ভালোবাসে,একেবারে স্কুল পর্যায়ের প্রেম।যাহাকে শুদ্ধভাবে বলা চলে”বাল্য প্রেম”!

পারিবারিক পর্যায়ে তাহাদের যাতায়াত ছিলো।দুই একটা ব্যক্তিগত আবেগঘন চিঠি পড়িবার সুযোগ আমার ঘটিয়াছিলো।কত শপথ কত কথামালা, সকলি মুখ থুবড়িয়া পড়িয়াছিলো জলে!

পরিবারের ইচ্ছায় সে অন্য আরেকজনকে বিবাহ্ করে।শেষতক বাল্য প্রেমিকাকে বিমুখ হইতে হইয়াছিলো।

মডার্ণ ট্রাজেডি হইতেছে নায়কের ভুল।কিন্তু সে ভুল -সালামের হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করিতো সর্বদা।কতোবার সে মৌসুমী কে ডাকিয়া তাহার নামে জসি(প্লট) লিখিয়া দিতে চাহিয়াছে।মৌসুমী সবিনয়ে প্রত্যাখান করিয়া বলিয়াছে-“আমার ওই সমস্ত কিছু লাগিবেনা সালাম”।

অনেক নিষেধ উপেক্ষা করিয়া সালামের বিবাহ্ অনুষ্ঠানে মৌসুমী উপস্হিত ছিলো।শরৎ উপন্যাস পড়িতে- পড়িতে,সুচিত্রা -উত্তমের ছবি দেখিতে -দেখিতে আমরা ইতোমধ্যে অবগত হইয়াছি”বড়প্রেম শুধু কাছেই টানেনা-দূরে ও ঠেলিয়া দেয়”।

কিন্তু,সে-সময় মৌসুমীর ভেতরকার সৎসাহস আমাদিগকে প্রচন্ডরকম ভাবাইয়াছে। নিখাদ প্রেম সকল চাওয়া পাওয়ার উর্ধ্বে।

ব্যক্তি সংকীর্ণতার গলি ঘুপচি পার করিয়া উদার মানসিকতার আকালপড়া সময়ে।বহু বছর পর আজ হঠাৎ করিয়া স্মৃতির মুকুরে মৌসুমীর মুখখানি ভাসিয়া উঠিলো।সেদিন আমার মনে যাহা রেখাপাত করিয়াছে -পাঠকের উদ্দেশ্যে তাহা লিখিয়া দিলাম।