Site icon Shaili Tv

সজল / সৈয়দা সেলিমা আক্তার

বর্ষা এলে সজলটা ভিজে একাকার হয়ে যায়। এক গোসল…. দুই গোসল…. তিন গোসল…এভাবে ক্রমাগত ক্ষেপাতে ক্ষেপাতে ওর পেছন পেছন ছোটে।আমরা যেখানে থাকি সেটা শহরের এক প্রান্তে হলেও দেখতে অবিকল পাড়াগাঁ।আমাদের বাড়ি অনেক দূরে, আমরা বাড়ি ছেড়ে একেবারে পাড়াটাতেই ঘর তৈরি করে থাকছি।বলতে গেলে এখানেই আমাদের বেড়ে ওঠা।যেখানে শিশুর জন্ম হয় নাড়ি পোঁতাও হয় সেখানে।তবু ভূমিষ্ট শিশুর পিতৃকুল -মাতৃকুলের মধ্যে এ নিয়ে অনেক সময় টানা হেঁচড়া চলে।রেওয়াজ আছে সন্তান মাতুলালয়ে জন্মাবে।আজকাল যদিওবা নার্সিং হোমে জন্মে শিশু।আমাদের সজল এ টানা হেঁচড়ার মধ্যে পিত্রালয়ে জন্মেছে,ওর নাড়ি পোঁতা নিয়ে প্রচন্ড বিবাদ হয়েছিলো।তেমনি ওর জীবনে আরেকবার টানা হেঁচড়া হয়েছিলো,সুরভির সঙ্গে ওর বিয়ে হবে কি হবেনা এ নিয়ে।
সজল হঠাৎই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলো মেজবৌদির দূর সম্পর্কের পিসতুতো বোন সুরভির। সিরিয়ালে আমাদের সজলই ছিলো অবিবাহিত। ধারণা করেছিলাম মা ছোড়দা’র পছন্দের বিয়ে যেভাবে মেনে নিয়েছেন,ওর পছন্দে মত দেবেন।প্রথম দিকে সম্মতিও দিয়েছিলেন।পরে অসম্মতিসূচক মনোভাব পোষণ করলেন।
আমি বরাবরই সবকিছুতে চুপ থেকেছি কিন্তু, পর্যবেক্ষণ করেছি গভীরভাবে। মেজবৌদিটা স্পষ্টবাদী আর স্পষ্টবাদীদের শত্রুর অভাব থাকেনা।মেজবৌদির পেছনে লেগেছিলো ছোটবৈদি।স্বভাবে মিনমিনে, লোক দেখানো কারসাজিতে পক্ক ছোট বৌদিকে দেখে কিংবা তার সাথে কথা বলে কেউ বুঝতে পারবেনাযে ষড়যন্ত্রে তিনি পয়লা নম্বর। ছোটবৌদি চাইতেন না মেজবৌদি’র আত্মীয় সুরভি এ বাড়ির বৌ হোক।তিনি সব সময় ফন্দি করতেন।প্রথমেতো কেউ এ কথা বিশ্বাস করেনি।সবাই ভেবেছে আত্মীয় বলে মা সুরভিকে পুত্রবধূ করতে চান না।
আমাদের যৌথ পরিবারে মা,ভাই, বৌদি,বাচ্চাদের পাশাপাশি আরো কিছু লোক, নিত্য থাকতো যাদের বেশিরভাগই ছোট বৌদির আত্মীয় স্বজন।হয় মামা নয় বোন। ছোটবৌদির বাবার বাড়ির আত্মীয়রা এভাবে মাসের পর মাস থেকে যেতো।এক হালি ছেলে পুলে। সে সাথে অতিথিতে আমাদের ঘরটা গিজগিজ করতো!
ছোটবৌদি’র ষড়যন্ত্রে পার্শ্ব সাহায্যকারী ছিলো বৌদির এক বোন,যে মাকে মা ডেকে মন গলিয়ে ফেলেছিলো।সে সাথে বড় বৌদিরাও জোট বেঁধেছিলো। সংসারে জোটবদ্ধ হয়ে একজন মানুষের স্বপ্নকে যে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়া যায়।তা আমাদের বাড়ির অভ্যন্তরে না ঢুকলে কেউ বুঝতে পারবেনা।
মেজবৌদি একটু রাগী ছিলেন। তবু এ ব্যাপার নিয়ে কোনো উচ্চ বাচ্য করেন নি নীরবে আলাদা হয়ে গিয়েছিলেন।জোটবদ্ধ বৌদিরা তাকে এ নিয়ে কম খোঁটা দেয়নি, মায়ের সামনে রং চড়িয়ে প্রায় নানা কথা শোনাতেন বৌদিরা।
সুরভি এ বাড়ির পুত্রবধূ হলোনা তা নয়।বরং ওকে ষড়যন্ত্রকারীরা এ বাড়ির পুত্রবধূ হতে দিলোনা।কিন্তু,সজলের মন থেকে সুরভি মোছেনি। এক বরষা বাদলের দিনে সুরভির বিয়ে হয়েছিলো। সজল ভিজে ভিজে হাঁটতে হাঁটতে চলে গিয়েছিলো কোথায়।সেদিন কেউ ওকে খুঁজে পায় নি। সচরাচর ভাদ্রে-শীতে পাগলদের উন্মাদনা বাড়ে।আমাদের সজলেরই কেবল বরষাতে পাগলামি বেড়ে যায়, কেউ থামাতে পারেনা। জোটবদ্ধ বৌদিরা মুখ টিপে টিপে হাসে।হাসতে পারেনা শুধু একজন সে মেজবৌদি।

Exit mobile version