লাবনী বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে।পড়ালেখায় মেধাবী। লাবনীকে নিয়ে লাবনীর বাবা-মায়ের স্বপ্ন যেন আকাশ ছোঁয়া।লাবনীর বাবা সরকারী চাকুরীজীবী ।লাবনীর মা গৃহিণী ।ছোট সংসার অভাব নেই বললেই চলে ।ভালোই চলে লাবনীকে নিয়ে লাবনীর বাবা মায়ের ছোট সংসার।লাবনীর বাবার সরকারি চাকুরির সুবাধে সরকারী বাসায় থাকে তারা।লাবনী ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার্থী । লাবনীর মায়ের ইচ্ছে লাবনী একজন ভালো ডাক্তার হবে, আর লাবনীর বাবা সবসময় বলে মেয়ে যেটা নিয়ে পড়তে চায় পড়বে তাতেই আমি খুশি ।লাবনীর বাবার সাথে চাকুরী করে শহীদ সাহেব। মাস খানিক আগে অন্য জেলা থেকে বদলি হয়ে এসেছে।লাবনীর বাবা আর শহীদ সাহেবের চাকুরির পোস্ট একই ।বেতনও পায় একই।শহীদ সাহেব খুব হাসিখুশি স্বভাবের মানুষ। অল্পতে অন্যের সাথে ভালো সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।অন্যদিকে লাবনীর বাবা একদম শান্ত ও চুপচাপ স্বভাবের।একদিন লাবনীর বাবার সাথে শহীদ সাহেব লাবনীদের বাসায় নিজ ইচ্ছাতে বেড়াতে আসে। লাবনীর সাথে, লাবনীর মায়ের সাথে পরিচয় হয়। চা নাস্তা খেয়ে যাওয়ার সময় শহীদ সাহেব খুব করে লাবনীর বাবাকে বলে যায় লাবনী এবং লাবনীর মাকে নিয়ে যেন বাসায় আসে।
শহীদ সাহেব যাওয়ার পর লাবনীর মা লাবনীর বাবাকে বলে, সামনের শুক্রবারে চলো আমরা শহীদ সাহেবের বাসায় বেড়াতে যাই, উনি তো অনেক জোর করে বলে গেলো। লাবনীর বাবা অনেকক্ষণ চুপ থেকে বলে দেখা যাক।অবশেষে শুক্রবার আসলো, লাবনী বাবাকে বলে, বাবা শুনো মা তো খুব শহীদ চাচার বাসায় যেতে চাচ্ছে চলো যায় আমরা। মা তো সারাদিন বাসায় থাকে, একটু বেড়িয়ে আসলে মায়ের মনটাও ভালো হয়ে যাবে ।লাবনীর কথা শুনে বাবা রাজী হলো শহীদ সাহেবের বাসায় যাওয়ার জন্য ।লাবনী বাবা-মায়ের সাথে গেলো শহীদ সাহেবের বাসায় । এক বিল্ডিংয়ে বাসা ,লাবনীদের বাসা দোতলায় আর শহীদ সাহেবের বাসা চার তলায় ।শহীদ সাহেব খুব খুশি হলো মেহমানদের দেখে ।শহীদ সাহেব বউ আর ছেলেমেয়েদের ডেকে মেহমানদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো ।শহীদ সাহেবের এক ছেলে ও দুই মেয়ে ।শহীদ সাহেবের ছেলেমেয়েরা বাবার মতো মিশুক ও হাসিখুশি। শহীদ সাহেবের বউ একটু গম্ভীর, অনেকটা অহংকারী ।লাবনীর মায়ের সাথে গল্পে গল্পে শহীদ সাহেবের বউ নিজের বিশ ভরী স্বর্ন, ঢাকাতে জায়গা আছে, এটা আছে ওটা আছে এসব এবং নানান রকম কথা বলে।শহীদ সাহেবের ছেলেমেয়েও ভালো স্কুল কলেজে পড়ালেখা করে ।শহীদ সাহেবের বাসায় রাতের খাবারের আয়োজন করলো, সবায় একসাথে খাওয়া-দাওয়া করলো ।লাবনী ও লাবনীর বাবা-মা শহীদ সাহেবের পরিবারের সবাইকে বাসায় আসতে বলে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে এলো।বাসায় এসে লাবনীর মায়ের কেমন যেন মন খারাপ দেখে লাবনীর বাবা জানতে চাইলো কি হয়েছে তোমার? লাবনীর মা শহীদ সাহেবের বউয়ের সাথে হওয়া কথাগুলো লাবনীর বাবাকে সব বললো। শুনে লাবনীর বাবা কিছুক্ষণ চুপ থেকে লাবনীর মাকে বললো,দেখো অন্যের কি আছে সেটা নিয়ে চিন্তা না করে নিজেদের যা আছে তা নিয়ে কিভাবে ভালো করে সৎ ভাবে চলবো সে চিন্তা করো ।তবুও লাবনীর মায়ের মধ্যে হতাশা বাসা বেঁধে গেছে, একই চাকুরী করে শহীদ সাহেবের এতো সম্পদ আর লাবনীর বাবা তো কিছুই করতে পারলো না তা ভেবে ভেবে লাবনীর মা অস্থির।লাবনীর বাবার তো যা আয় তা খরচ করে চলা।পেনশনে গেলে কিছু টাকা একসাথে পাবে এটাই জীবনের শেষ ভরসা।লাবনীর মা প্রতিদিন এ সব নিয়ে লাবনীর বাবার সাথে রাগারাগি করে । ছোট সুখের সংসারে যেন অশান্তি দেখা দিলো। লাবনী মাকে বুঝায়, মা আমরা তো ভালোই আছি, সুখে আছি, দয়া করে অন্যেরটা দেখে তুমি বাবার সাথে অশান্তি করিও না ।লাবনীর কথা শুনে লাবনীর মা নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করে।একদিন রাত একটার দিকে লাবনীর বাবা-মা ঘুম , লাবনী তখনো পড়ার টেবিলে ।বাইরে হঠাৎ অনেক আওয়াজ শুনে লাবনী জানালা দিয়ে দেখে বাহিরে অনেক পুলিশ। লাবনী দৌঁড়ে গিয়ে বাবা-মাকে ঘুম থেকে উঠালো। লাবনী এবং লাবনীর বাবা-মা দোতালার জানালা দিয়ে দেখে শহীদ সাহেবকে পুলিশ ধরে নিয়ে যাচ্ছে ।শহীদ সাহেবের বউ এবং ছলেমেয়েরা অনেক চেষ্টা করছে বাঁধা দেয়ার, পুলিশকে বোঝানোর, কিন্তু পুলিশ কারো কথা শুনছে না।শহীদ সাহেবকে পুলিশ নিয়েই গেলো।
মূহূর্তেই যেন অন্ধকার নেমে এলো শহীদ সাহেবের পরিবারে।
লাবনীর মা লাবনীর বাবাকে বললো, তুমি কি জানো কি হয়েছে? লাবনীর বাবা মাথা নিচু করে বললো, এমন কিছু হবে তো বুঝতে পেরেছিলাম।
সাথে সাথে লাবনীর মা আবার বলে উঠলো, তুমি কি এ ব্যাপারে আগে থেকে কিছু জানতে? লাবনীর বাবা বললো, শহীদ সাহেব আগে যে শহরে চাকুরী করতো সেখানে অনেক লোকজন থেকে সরকারী চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটি কোটি টাকা নিয়েছে।কাউকে তো চাকুরী দিতে পারে নাই, চালাকি করে বদলী নিয়ে এখানে চলে এসেছে। ওখানকার লোকজন শহীদ সাহেবের বিরুদ্ধে মামলা করেছে।কালকে অফিসে পুলিশ এসেছিল, শহীদ সাহেব টের পেয়ে পালিয়েছিল। আজকে তো আর পালাতে পারলো না, ধরা পড়ে গেলো ঠিকই ।চাকুরিটাও হয়তো চলে যাবে। লাবনীর বাবা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো, মানুষের এতো লোভ কেন বুঝি না।লাবনীর মায়ের আর বুঝতে বাকী রইলো না শহীদ সাহেব এতো সম্পদ কি ভাবে করলো? লাবনীর বাবা লাবনীর মা এবং লাবনীকে উদ্দেশ্য করে বললো ,লোভ অনেক খারাপ মানুষকে ধ্বংস করে ফেলে। আমি লোভ করলে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম, কিন্তু তা কখনো করিনি। ন্যায় নীতি মেনে চলার চেষ্টা করে আসছি সবসময়, তোমরাও আশাকরি আমাকে অণুসরণ করে চলবে। কারো সম্পদ দেখে হতাশ হবে না, নিজের সাধ্য যতটুকু তাতেই সন্তুষ্ট থাকার চেষ্টা করবে।লাবনীর মা লাবনীর বাবাকে হাত ধরে বলে, আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি ভুল করে ফেলেছি। লাবনী মা-বাবা দু’জনকে জড়িয়ে ধরে বললো, তোমরা দোয়া করবে সবসময় আমি যেন সৎ পথে চলতে পারি, ভালো কাজ করতে পারি, মানুষের উপকার করতে পারি এবং তোমাদের সম্মান রাখতে পারি।সৎ উপার্জন, মায়ায় ও ভালোবাসায় চলতে থাকে লাবনীকে নিয়ে লাবনীর বাবা-মায়ের ছোট সোনার সংসার।