Site icon Shaili Tv

সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধ হোক / শায়েলা আহমেদ

আমরা সামাজিক জীব। এ সমাজে সব ধর্মের লোকের বসবাস। এখানে সকল ধর্মের মানুষ আমরা সমাজবদ্ধ হয়ে বাস করছি। এই মাত্র কিছুদিন পূর্বে দুর্গাপূজায় যে ধরনের কর্মকাণ্ড হল তা কখনোই সুস্থ একটি সমাজের চিত্র হতে পারে না। ধর্ম নিয়ে দাঙ্গাহাঙ্গামা কারোই কাম্য নয়। এবার বিভিন্ন পূজা মণ্ডপে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটেছে তা একাধারে নিন্দনীয় ও ঘৃণিতও বটে। কেনো জানি মানুষের মধ্যে আজকাল হিংস্রতা বেড়ে গিয়েছে। মানুষ ক্রমেই তার মানবিক মূল্যবোধ হারিয়ে নিজেকে একেবারে পশুস্তরে নিয়ে যাচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আজ যেনো অন্ধকারে নিমজ্জিত। ধর্মের অহেতুক দোহাই দিয়ে আধুনিকতার নামে মানুষ ক্রমেই যেন মনুষ্যত্ব থেকে নিজেকে বিলীন করে দিচ্ছে। ধর্ম নিয়ে, ধর্মমত নিয়ে কেন এত বিভেদ, মারামারি, হানাহানি! এ দেশ তো আমরা চাইনি? এদেশে আজ ঘৃণিত, নিষ্ঠুরতা ও বিবেকবর্জিত কাজগুলো মানুষ নির্দ্বিধায় করে যাচ্ছে।

অথচ আজ যেন আমরা ভুলেই যাচ্ছি সকল ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধাশীল ও নমনীয় হওয়াটাই মনুষ্যত্ব আর মানবতার পরিচায়ক। এমন অসুন্দর, সংঘাতময় দুর্গাপূজা হিন্দু মুসলিম কেউ তো চাইনি আমরা! যার যার ধর্ম সে পালন করবে এটাই তো নিয়ম হওয়ার কথা ছিল। ‘ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি কোর না।’ আমাদের ইসলাম ধর্মেও একথা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। এবারের পুজোয় কিছু মানুষ তার হিংস্রতা ও বিদ্বেষ নিয়ে এমন হীন কাজ নির্বিঘ্নে করে গেছে। অবশ্য এটা রাজনৈতিক চালও হতে পারে, বলা যায় না কিছুই! মানবতা, মনুষ্যত্ব, দয়া, মায়া ও ভালবাসা নামক ঈশ্বর প্রদত্ত এই সমস্ত মানবিক অনুভূতি মানুষের মাঝে আজ খুঁজে পাওয়া বড়ই দুষ্কর! কেবল হিংসা আর হিংস্রতা যেন মানুষকে পেয়ে বসেছে। পাপের অতলে তলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে! এ বুঝি মানবিক অবক্ষয়।

আমি কায়মনে চাইছি সাম্প্রদায়িকতার বিনাশ হোক। ধর্মান্ধতা কখনোই সুস্থ মানসিকতার জন্ম দেয় না। দিতে পারে না। শুধু তাই নয়, ধর্মীয় উগ্রতায় কখনো শান্তি প্রতিষ্ঠাও লাভ হয় না! আজ আমাদের গর্বিত সভ্যতা, সমাজ আর সমাজের ন্যায়নিষ্ঠা যেন মানুষরূপী কিছু পশুত্বের কাছে ভূলুণ্ঠিত, অবনমিত। এভাবে হানাহানি, হিংসা দ্বেষ চলতে থাকলে মানবতার বিপর্যয় অনিবার্য।
আসলে মানুষের ভেতরের মনুষ্যত্ব জাগ্রত না হলে সেখানে কেবলমাত্র আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কী করে একটি জাতিকে বাঁচাবে?
তা কী আদৌ সম্ভব? প্রশ্নটি রেখে গেলাম।

Exit mobile version