এ্যানা,
চিলেকোঠার চারদেয়ালের আড়ালে
অবরুদ্ধ সময়টা ছিল স্থির,অচঞ্চল
রোদ্রতপ্ত দুপুরে নির্জন পুকুর পাড়ের মত।
জানালার গরাদ গলে তোমার চঞ্চল
মন ছুটে যেত রাজপথে পড়ে থাকা
রক্তরঞ্জিত যুবকের লাশের কাছে।
নিষ্ঠুর নাৎসির বর্বর বুলেট যার
বুকে বিঁধে আছে;সেদিন ভোরের
আলো ফুটতেই তুমি জেগে উঠেছিলে।
নরম সরু রোদের দুটো রেখা ভারী
পর্দায় ঢেকে দেয়া জানালার এপাশে
সরু পথে এসে তোমার ডাগর
চোখে চুমো দিয়েছিলো।
ঠিক,
ঠিক তখনই বজ্রপাতের মত কার্তুজ
যুবকের বুকে বিঁধেছিল, সাথে তোমারও।
নাৎসি বুনোদানবের তান্ডবে নেদারল্যান্ড
যখন এক মৃত্যুপুরী ; বাতাসে বারুদ
আর লাশের গন্ধ,ভোরের শহর
অথচ দরজা জানালা বন্ধ। তুমিও
জীবন বাচাঁতে চিলেকোঠায় অবরুদ্ধ।
অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তায় তুমি হাঁপিয়ে উঠেছিলে
দিন-মাস-বছর ফি বছর ঘুরে
রাত ও দিন অভিন্ন অন্ধকারে আসে ফিরে
পলায়নপর জীবনের আতঙ্কে, উৎকন্ঠায়
বাব-মা ওদিদির সাথে নিঃশব্দ আলোহীন
দিন গুলোতে কেঁপে কেঁপে উঠেছিলে দুঃস্বপ্নের ঘোরে
ঠিক,
ঠিক তখনই কিটি এসেছিলো
জীবনে একরাশ সজিব নিঃশ্বাস হয়ে।
দূর দ্বীপ থেকে উড়ে আসা এ্যালবার্টার
প্রসস্ত ডানার ছোঁয়ায় প্যাসিফিকের বুকে
ঢেউগুলো যেভাবে আলিঙ্গনের আশায় উদ্বেলিত হয়
দিশেহারা নাবিকের ম্লান চোখের ক্লান্তি মুছে যায়
ঠিক,
ঠিক তেমন।
আজ তুমি নেই। মাঝে কেটে গেছে
সময় নিরন্তর; যুগ যুগান্তর!
কিন্তু এখনও নিষ্ঠুর নগর,বিশ্ব বিবেক নিরুত্তর!
হিরোশিমা, নাগাসাকির পারমানবিক নিপীড়ন–
ইথিওপিয়া, সোমালিয়ার হাড্ডিসার শিশুর ক্রন্দন
বিজ্ঞানের নন্দনতত্ব চর্চায় প্রতিনিয়ত প্রকৃতির ধর্ষন
যেন বেগবান সভ্যতার অসভ্য আস্ফাালন।
অস্থির পৃথিবী আজ স্থির,
বিষাক্ত করোনা জীবানু জালে আটকে গেছে
নগর জীবন,থমকে গেছে কলের চাকা,
বাতাসে নেই কালো টাকা,খেলার মাঠও
ফাঁকা ফাঁকা।ভোরের শহর অথচ
দরজা জানালা বন্ধ,
বাতাসে লাশের গন্ধ।
আমরাও তোমারই মত জীবন বাঁচাতে
আত্মগোপনে অবরুদ্ধ।
অবরুদ্ধ নিষ্ক্রিয়তায় হাঁপিয়ে উঠেছি
কেঁপে কেঁপে উঠছি দুঃস্বপ্নের ঘোরে
কখন মৃত্যু এসে হানা দেয় ঘরে;
কেন এ মৃত্যু ফাঁদ? আর কত
এ যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা? আর কতকাল
সইবে ধরণী খাণ্ডব দাহনের জ্বালা।
ইতি – তোমার বন্ধু ইসাবেলা।