ছড়া নিছক ছন্দোবদ্ধ পদের সঙ্গে পদের মিল?
নদের সঙ্গে বদের মিল?
নাকি এটা অন্যরকম? নদী এবং হ্রদের মিল?
দু’টোই জলের আধার বটে কিন্তু ওরা ভিন্ন যে
চলবে ছুটে, থাকবে সাথে জল ও স্রোতের চিহ্ন যে…

পদের সঙ্গে পদ মেলালেই সেইটা বাপু ছড়া না।
পদ্য ছড়া আর কবিতার আলাদা রঙ, ঘরানা।

ছড়া তো নয় নিছক কোনো ধানের সঙ্গে পানের মিল
মিলতে হবে কানের সাথে, থাকতে হবে প্রাণের মিল।

ছড়া কোনো অংক তো নয় মিলিয়ে দেবে মাত্রাতে
লিখতে ছড়া ছন্দ-মিলের সমুদ্রে হয় সাঁতরাতে।

ছড়া শুধু ছোট্ট শিশুর মন ভোলানো গল্প না
ছড়া শুধুই ফ্যান্টাসি নয়, নয় উদ্ভট কল্পনা।

ছড়া তো নয় জটিল-কুটিল, ভীষণ সাদা-সিধে সে
ছড়ার পাঠক সব বয়েসী, স্বদেশে বা বিদেশে।

ছড়ায় থাকে কষ্ট বিষাদ ছড়ায় থাকে হাসিও
মুখে মুখে লিখতো আগে মা দিদি আর মাসীও।

অতীতকালের ছড়া ছিলো মুখে মুখেই রচিত
অশিক্ষিতের পটুত্বটাই নানান বিভায় খচিত।

নাম ছিলো না রচয়িতার হারিয়ে গেছেন তাঁহারা,
বাংলা ছড়ার আকাশটাকে তাঁরাই তো দেন পাহারা!

লোকছড়ায় সমাজচিত্র-ঐতিহাসিক বর্ণনা
অমূল্য সেই রতœগুলো হীরকদ্যুতির স্বর্ণ না?

ছড়ায় থাকে বাস্তবতার অপ্রিয় সব কাহিনি
ছড়াকে ভয় পায় সামরিক স্বৈরশাসক বাহিনি!

ছড়া ছোটে টগবগিয়ে দুরন্ত এক অশ্ব সে
কোনো ছড়ায় অগ্নি থাকে দেয় করে দেয় ভষ্ম সে।

ঘুম পাড়ানো ঘুম তাড়ানো সবই ছড়ার চরিত্র
ছড়ার ছন্দে নৃত্য করে প্রাণ-প্রকৃতি-ধরিত্র।

ছোট্ট, কিন্তু লক্ষ্যভেদী। ছড়ার দারুণ ক্ষমতা
ছড়ায় থাকে অশ্রু-সোহাগ-প্রতিবাদ আর মমতা।

কোনো ছড়ায় হিমেল পরশ, মন করে দেয় শীতল সে
তাল-লয়-সুর সম্মিলনে সাংগীতিক ও গীতল সে।

ছড়ার সুরে নৃত্য থাকে তাকতা তাধিন তাধিন তা
ব্যাকরণের ছকে বাঁধা থাকার পরেও স্বাধীন তা।

মিল থাকলেই ছড়া হবে এমন কোনো কথা নেই
ছন্দ ছাড়া লিখবে ছড়া? তেমন স্বাধীনতা নেই।

ছন্দ ছাড়া হয় না ছড়া, হয় না হয় না হয় না রে
ছন্দ হলো ছড়ার গতির গানের পাখি ময়না রে…।

ছন্দ, ছড়ার প্রাণ ভোমোরা, থাকতে হবেই ছন্দ যে
ছড়ার সঙ্গে কবিতা ও পদ্যের নেই দ্বন্দ্ব যে।

সকল কিছু থাকার পরও একটা ম্যাজিক থাকতে হয়
ইরেগুলার ইমেজ দিয়ে নিটোল ছবি আঁকতে হয়।

নানান কেতাব ঘেঁটে ঘেঁটে ছড়ার সংজ্ঞা খুঁজলে কি?
ছড়া হচ্ছে কবিতারই আরেকটা রূপ, বুঝলে কি?

রচনাকাল/ অটোয়া ১৭ নভেম্বর ২০১৯