আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো কমিশন খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের পুরোপুরি সন্তুষ্ট করা যাবে না। অভিযোগ তো করতেই পারে, অভিযোগের ভিত্তি আছে কিনা দেখতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। সিইসি বলেন, ইভিএমে আপত্তির কোনো কারণ নেই। ইভিএমই একমাত্র উপায় যেখানে জাল ভোট দেয়ার সুযোগ নেই। অন্য কোনো কেন্দ্রের লোক এসে এখানে ভোট দিতে পারবে না। ইভিএমের মাধ্যমে একজনের ভোট আরেকজন দিতে পারবেন না। একবার একজন ভোট দিলে তিনি দ্বিতীয়বার দিতে পারবেন না। নির্বাচন যাতে সুষ্ঠু হয়, কারচুপি যাতে না হয়, ব্যালট ছিনতাই না হয় এবং যারা নির্বাচন পরিচালনা করবেন, তাদের পরিশ্রম যাতে লাঘব হয়, সেই চিন্তা করেই আমরা ইভিএম করেছি।
সিইসি আরও বলেন, ইভিএমে নির্বাচন হলে আশঙ্কার কোনো কারণ নেই। এটা যদি চালু থাকে, তাহলে একসময় নির্বাচন নিয়ে আর কোনো অভিযোগও আসবে না। ৮৬ সালে আমরা দেখেছি, নির্বাচন হওয়ার পর একজনকে প্রার্থী ঘোষণা করা হলো, রাতে টেলিভিশনে আরেকজনকে ঘোষণা করা হলো। পরদিন গেজেটে দেখা গেল আবার আরেকজনের নাম। নির্বাচনি সংস্কৃতি নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ছিল। আমরা যদি ইভিএম চালু করতে পারি, এই সংস্কৃতি থেকে আমরা বেরিয়ে আসতে পারব। প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যৌক্তিকভাবে রাখা হবে, অতিরিক্ত রাখা হবে না। বিজিবি থেকে বলা হয়েছে, যা রিকুইজিশন দেয়া হয়েছে তা দরকার নেই, কমানো হবে। পুলিশের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, যৌক্তিকভাবে কমানো হবে।
সভায় নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব মো. মোখলেসুর রহমান, বিভাগীয় কমিশনার মো. আব্দুল মান্নান, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন, সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার আমেনা বেগম, চট্টগ্রাামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খান, শফিকুল ইসলাম, বোয়ালাখালীর নির্বাহী কর্মকর্তা আছিয়া খাতুন, ওসি নেয়ামত উল্লাহসহ নির্বাচনী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সার্কিট হাউজে মতবিনিময় : সার্কিট হাউজে সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম-৮ আসনের প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী, প্রতিদ্বন্দ্বী রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের সাথে মতবিনিময় করেন সিইসি নূরুল হুদা। মতবিনিময়কালে নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেনের ইভিএমে প্রিজাইডিং অফিসারের হাতে ২৫ শতাংশ ভোট দেয়ার সুযোগ আছে-এমন বক্তব্যের প্রেক্ষিতে সিইসি বলেন, একবার চাঁদে ছবি দেখার গুজব ছড়ানো হয়েছিল। এই আলোচনাটা সেই রকম। এসব কথার কোনো ভিত্তিই নেই। ইভিএম পরিচালনার যে বিধি, তার কোথাও ১ শতাংশ, ২ শতাংশ, ৪ শতাংশ কিংবা ২৫ শতাংশের কথা উল্লেখ নেই। অনেক অভিযোগ আসে, যেগুলোর কোনো ভিত্তি নেই। তারপরও আমাদের এসব অভিযোগ শুনতে হয়। আমি চ্যালেঞ্জ করলাম, আপনারা বিধিটা দেখেন, সেখানে এরকম কিছু লেখা নেই।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোছলেম উদ্দিন আহমদ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, বিএনপি প্রার্থী আবু সুফিয়ান, নগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, দক্ষিণ জেলার সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ, ন্যাপ প্রার্থী বাপন দাশগুপ্ত, বিএনএফ চেয়ারম্যান এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ।
এসময় রিটার্নিং অফিসার মো. হাসানুজ্জামান, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মুনীর হোসাইন খানসহ জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ডা: শাহাদাত হোসেন বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে আমাদের এজেন্টকে গ্রেফতার করে নিয়ে গেছে কেন্দ্র থেকে। ভোটারকে এরেস্ট করে নিয়ে গেছে পুলিশ। ইভিএম অরক্ষিত। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম -৯ আসনে ইভিএম বিকল ছিল। ঢাকা থেকে মেশিন আনতে আনতে ভোট শেষ হয়ে যায়। অনেকে ভোট দিতে পারেননি। ইভিএম দিয়ে আমাকে হারানো হয়েছে।
আমাদের অনেক কর্মীকে প্রতিদিন আদালতে দৌঁড়াতে হয় জামিনের জন্য। যারা জামিন নিতে যাচ্ছে বর্তমানে তাদের জামিন বাতিল করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত ৩৫ জনের জামিন বাতিল করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জবাবে সিইসি বলেছেন, সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করবে বলে আমাদের কথা দিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে কারো দল পছন্দ থাকতে পারে। আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচন। কেউ আচরণবিধি লঙ্ঘন করা যাবে না। হাইকোর্ট কারো জামিন বাতিল করলে আমাদের করার কিছু থাকে না।
সিইসি বলেন, দলীয়ভাবে নির্বাচন হবে, সেখানে একই দলের আরেক জনপ্রতিনিধি প্রচারণায় যেতে পারবে না তা আমি ব্যক্তিগতভাবে পছন্দ করি না। সংসদে আরো বেশি বিরোধী দল থাকলে আমি এই আইন পরিবর্তনের প্রস্তাব করতাম। এখন আইন অনুযায়ী সকল জনপ্রতিনিধিকে মানতে হবে।
এসময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মোছলেম উদ্দিন বলেছেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে নির্বাচন করছি। আমার নির্বাচনী এলাকায় কোন ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হতে দেইনি। এলাকার সাধারণ জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে।
নির্বাচনী এলাকায় ধানের শীষের প্রতীক ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগ করেন বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, আমার কর্মীদের নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা বন্ধ করার জন্য হুমকি দেয়া হচ্ছে।
এর জবাবে সিইসি বলেন, কোন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হলে মাঠ পর্যায়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের নেতৃত্বে মোবাইল টিম রয়েছে। তাদের শরণাপন্ন হবেন।
সভায় বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ, ইসলামিক ফ্রন্টের সৈয়দ মোহাম্মদ ফরিদ আহমদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ এমদাদুল হকসহ সকলেই বলেন, ইভিএম এর মাধ্যমে নির্বাচনে আস্থার সংকট রয়েছে।