Site icon Shaili Tv

উনিশশো একাত্তর, একটি মুক্তিযুদ্ধ / রিফাত ফাতিমা তানসি

এই, শোনো না;
আমাকে কেমন লাগছে?
তোমার পছন্দের নীল শাড়ি, নীল চুড়ি, নীল টিপ এবং খোঁপায় জড়ানো বেলিফুলে সেজেছি আমি।
দেখতে পাচ্ছ না!
বলো না, কেমন লাগছে!
কত্তদিন পর তুমি এলে আমাদের দেখতে!

আচ্ছা তোমার পাঞ্জাবিটা পরে দেখো তো একটু, মাপে ঠিক আছে কি না;
অনেক শখ করে বানিয়েছি তোমার জন্য আমার নীল শাড়ির সাথে মিলিয়ে,
আমার জন্মদিন উপলক্ষে!

এই, এই দেখো তো
আমার শাড়ির কুঁচিগুলো ঠিক আছে কি না,
একদম যেমনটি হওয়ার কথা;
ঠিক না থাকলে
তুমি একটু ঠিক করে দাও না লক্ষ্মীটি!

ও শোনো, শোনো;
আগামীকাল আমাদের প্রথম বিবাহবার্ষিকীতে কিন্তু তুমি আর আমি মিলে সারাদিন একসাথে কাটাব,
তুমি পরবে শাদা শেরওয়ানি আর আমি লাল টুকটুকে বেনারসী।
দেখে যেন মনে হয়, আবার বর-বৌ সেজেছি আমরা; ঠিক বিয়ের দিনের মতো!

আচ্ছা, আমাদের অনাগত সন্তানের নাম কী দেবে, ঠিক করেছ?
আমি কিন্তু একটি নাম মনে মনে ঠিক করেই রেখেছি।
তার নাম হবে “পতাকা”!
আমাদের দেশটি যখন স্বাধীন করবে তোমরা পাকি শত্রুদের হাত থেকে,
তখন সে যেন এই স্বাধীনদেশের শক্তিশালী “পতাকা” হয়েই সারা পৃথিবীতে
উড়ে বেড়ায়!
ঘুরে বেড়ায়!

ঠিক তক্ষুনি,
হ্যাঁ ঠিক তক্ষুনি,
দরজায় প্রচন্ড কড়াঘাত!
তারপর একধাক্কায় দরজা ভেঙে ঢুকে পড়ল পাকিস্তানি বাহিনী, সাথে রাজাকারেরা।
আর পরপর কয়েকটি গুলির শব্দ!
তাঁদের গগনবিদারী চিৎকারে চারদিকটা বিদীর্ণ হয়ে গেল মুহূর্তেই!
তারপর সব শূণ্য!

পরদিন সেখানে পাওয়া গেল
রক্তমাখানো একটি নীল শাড়ি, এদিক সেদিক ভাঙা নীল চুড়ি, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চুপসে যাওয়া কিছু বেলিফুল!
আর তার পাশে থাকা লাল রক্তে রঞ্জিত নীল পাঞ্জাবি পরিহিত একজন পুরুষের লাশ!

এমনি করেই তো কত শত ভালোবাসার মাছরাঙা পাখিদের বুক জুড়ে থাকা মিষ্টি স্বপ্নগুলো একনিমিষেই ধূলিষাৎ হয়ে গেল!
এমনি করেই তো সেইসব বিভীষিকাময় দিনগুলোতে জলের ধারার মতো করেই কত শত লক্ষ রক্ত বয়ে গেল!
সে সমস্ত ঋণগুলো কি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে শোধ করতে পারব আমরা!
জানি না তো!
কিছুই জানি না!

Exit mobile version