মাথাটা বেজায় চটে আছে শিহাবের! আজ গুনে গুনে পঁয়তাল্লিশ দিন হলো সুমনার সাথে দেখা হয় না। ফোনে যদিও প্রতিদিন কথা হয়, কিন্ত ওভার ফোনে কি প্রেম জমে? তাছাড়া, বাড়িতে বাবা-মাকে আড়াল করে কতক্ষণই বা আর প্রেমের কথা বলা যায়!
এখন একবার সুমনাকে ভিডিও কল দিতেই হবে। খুব যখন দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে তখন দুধের স্বাদ ঘোলেই মেটাই! ভাবলো শিহাব। বাসার পরিবেশও অনুকূলেই আছে। বাবা ভাতঘুম দিচ্ছে আর মা বসেছে সেলাই নিয়ে। ব্যাস! এই সুযোগ। দরজাটা একটু হালকা ভেজিয়ে দিয়ে বেশ আয়েশ করে বিছানায় বসে ল্যাপটপটা খুলে সুমনাকে কল দিল।
কল রিসিভ হতেই দেখলো, সুমনা রান্নাঘরে রান্না করছে। সুমনাকে ব্যস্ত দেখে মনটা একটুখানি দমে গেল শিহাবের। পরক্ষণেই ভাবলো প্রেমিকা ব্যস্ত হলেও আড্ডাতে তো আর বাধা নেই!
মিনিট-দু’মিনিট এটা সেটা বলার পর দুজনের মধ্যে প্রেমালাপ যখন বেশ জমে উঠেছে ঠিক তখন বাবা হঠাত করে শিহাবের নাম ধরে ডেকে উঠলেন। কিন্ত শিহাবের কানে হেডফোন ছিল বলে সে তার বাবার ডাক শুনতে পায়নি।
শিহাব সাড়া না দেওয়ায় অগত্যা বাবা নিজে উঠেই শিহাবের রুমে চলে আসলেন।
শিহাবতো তখন প্রেমিকার সাথে মাখোমাখো প্রেমালাপে মজে আছে! কিন্ত বেচারা! বুঝতেই পারলো না তার ঠিক পেছনে বাবা দাঁড়িয়ে আছেন।
ভিডিওর ওপাড় থেকে শিহাবের বাবাকে দেখতে পেয়ে সুমনা পড়ে গেল মহা ফাঁপড়ে! কলটা নিজেও কাটতে পারছে না আবার কেটে দেওয়ার জন্য শিহাবকেও বলতে পারছে না, পাছে তার বাবার কোনরকম সন্দেহ হয়! কি করি! কি করি! ভাবতে ভাবতে হঠাত এ পরিস্থিতি থেকে বেরনোর একটা ঝটপট উপায় বুদ্ধিমতী সুমনার মাথায় খেলে গেল! ব্যাস!শুরু করলো সে নতুন কথোপকথন!
সুমনা : বন্ধুরা, রান্না শেখার লাইভ প্রোগ্রামে আপনাদের স্বাগতম! তাহলে শুরু করছি আজকের ঝটপট রেসিপি।
‘এ আবার কি ধরনের কথা বলছো জান?’ থতমত শিহাবের জিজ্ঞাসা।
সুমনা : আমি জাহানারা খান বলছি।
‘তার মানে? কি সব পাগলের মত বলছো? প্রায় তেতে উঠল শিহাব!
সুমনা : আজ আমরা শিখবো ডালগোনা কফির রেসিপি, তবে হাতে-কলমে নয়। জাস্ট মুখে মুখে। দর্শক, লকডাউনের সময় বলে রেসিপির উপকরণ কিছু যোগাড় করা হয়নি বলেই এই অপারগতা! সরি!
‘আর ইউ ম্যাড সুমনা’? প্রায় চিৎকার করে উঠল শিহাব!
সুমনা : প্রথমে একটা বাটির মধ্যে কফি আর চিনি নিয়ে ভালোভাবে মেশাবেন। এবার এর মধ্যে অল্প পানি দিয়ে কফি আর চিনির মিশ্রণটা যতক্ষণ না একটা স্মুথ ব্যাটারের মত রূপ নিচ্ছে ততক্ষণ এটাকে ফেটিয়ে যাবেন।
‘এই এমন করলে কিন্ত হবে না। আমি এসব কিছুতেই সহ্য করবো না বলে দিচ্ছি!’ চিৎকার করে উঠে শিহাব!
সুমনা : এবার গ্লাসে কিছু বরফের টুকরো দিয়ে তার উপরে ফ্রীজে রাখা ঠান্ডা দুধ ঢেলে দিন। বরফ দুধের উপর এবার তৈরি করা কফি আর চিনির ব্যাটারটা ঢেলে দিন। ব্যাস! তৈরি হয়ে গেল মজাদার ডালগোনা কফি!
‘আরে দুত্তোরি!’ শিহাবের বিরক্তি এবার চরমে!
সুমনা : দর্শক, আজ এ পর্যন্তই! আগামীকাল হাজির হবো আবার নতুন রেসিপি নিয়ে। ততক্ষন ভালো থাকুন। স্টে হোম! গুড বাই!
এই বলে সুমনা কলটা কেটে দিল।
সুমনার কাজকারবার কিছু বুঝতে না পেরে রাগে গজগজ করতে করতে যেই না পেছন ফিরলো শিহাব, অমনি হকচকিয়ে গেল! এই রে! এ যে মূর্তিমান আতংক উপস্থিত! এতক্ষনে শিহাব সুমনার এই উদ্ভট পারফরমেন্স এর কারণটা বুঝতে পারলো!
একটু ঢোক গিলে, ধাতস্থ হয়ে বললো, ‘ বাবা তুমি এখানে?’
‘ডালগোনা কফি বানানো দেখছিলাম’। উত্তর দিলেন বাবা।
‘ও আচ্ছা। আসলে কোন কাজ নেই তো তাই ভাবলাম, ঘরে বসে কি করবো? একটু রান্নাবান্নার রেসিপি শিখে নিই’। মুখে হাসি টেনে বললো শিহাব।
‘ভালো, শেখা ভালো।এখন যা।’
‘কোথায় যাবো’? বাবাকে প্রশ্ন করলো শিহাব।
‘রান্নাঘরে। আমার জন্য ডালগোনা কফি বানাবি’!