“রাগ অভিমান ভাললাগা ভালবাসার তো একটাই জায়গা সেটা তোমার কাছে।”
একটা অফিসিয়াল কাজেই মোহন কল করে নুসরাত জাহান কে। মোহন একটু অবাকই হয় কন্ঠস্বর শুনে।হ্যালো বলার ধরন টা একেবারেই আলাদা।বয়সের তুলনায় কন্ঠ অনেক মোলায়েম।মিষ্টি ভয়েস যাকে বলে। কেমন একটা ঘোর লাগে মোহনের।
পরদিন আবার কল করে একই সময়ে।সকাল ৯:১৫।নানা ভাবে কথা বলে নুসরাতের সাথে। ব্যস্ত অফিস সময়ে নুসরাত আচ্ছা রাখি বলে কাজে মন দেয়।
নুসরাতের কেমন একটা আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে সারা অবয়ব জুড়ে।শাড়ী পড়ে নিজস্ব একটা স্টাইলে। সব কিছুই ম্যাচিং করা যেন।সমসাময়িক সব বিষয়ে জ্ঞান রাখে। কথায় হাস্যরসের জুড়ি নাই। মার্জিন রেখে কথা বলে। মোহন আবিষ্ট হয়ে যায়।অস্থির এক সময়ে নিজের ভালোলাগার কথা প্রকাশ করে। সরাসরি কথা বলা তার জন্মগত অভ্যাস। কোন রাখ ঢাক নেই। রাজনীতির একটা ইমেজ ও লালন করে।
– নুসরাত, আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি মনে হয়।
-এটা আমার কোন অপরাধ না
– আপনাকে ভালো লাগে
– দেখতে ইচ্ছে করে
-কফি খাবেন?
– সারাক্ষন বরের সাথে লেগে থাকেন কেন?
-আমার সাথে বন্ধুত্ব করলে মান যাবে? অসম্মান করবোনা।
এমনি হাজারো কথায় মোহন নুসরাত কে বিব্রত করে। নুসরাত সিদ্ধান্ত নেয়, আর আগানো ঠিক না। সে এই প্রহসনের সমাপ্তি ঘটায়।
মোহন একদিন সারা বেলা নুসরাত কে অফ লাইনে পায়।একটু অস্থির হয়! অসুস্থ হয়ে গেল না তো! গত কাল রাতে বেশ কিছু বিষয়ে তর্ক হয়েছিল দুজনের। নুসরাত ব্লক করার হুমকি ও দিয়েছিল।
দুদিন অপেক্ষা করে মোহন সরাসরি কল করে।
– কি হয়েছে?
এটা ঠিক না।যা ইচ্ছা করতে পারেন না।আমার আত্মসম্মান বোধ আছে। আপনাকে ভালো লাগার মানে এই নয় যে আমি আপনাকে চাই!
অফিসের কাজে ব্যস্ত নুসরাত। কিন্তু কিছুতেই মন স্থির হচ্ছে না।
কিছু খুনসুটি, তর্ক, রাগ, ঝগড়া, অভিমান, আপোষ তার ভিতরটা কে নাড়া দিয়ে যায়।
মোহন পর পর তিনবার অপেক্ষা করে। ওদের লাঞ্চ করার কথা এক সাথে। না,আসেনি নুসরাত। নানান অজুহাতে এড়িয়ে গেছে।
কি হবে দেখা করে! বিবেকের সাথে আপোষ করতে পারেনি।বার বার নিজ কে শাসন করেছে।
যে সম্পর্কের কোন পরিনতি নেই,কোন নাম,সম্বোধন নেই,নেই কোন শিরোনাম।
তারপরও বেহিসেবী হয়ে যায় মন। সময়ের আবর্তনে কেউ একজন খুনসুটি সম্পর্ক তৈরি করে রাখছে,ভালো রাখার চেষ্টা করছে। কি হবে এত কি ভেবে।এই জগৎ সংসারে কে কার! কে মনের বয়স কষে! হৃদয়ের জলের রং ক্ষনে বদল হয়,ক্ষনে শুকিয়ে যায়।
মোহন অপেক্ষা করে। অস্থির হয় না। জানে একদিন নুসরাত বলবে,”আজ বাগানে অনেক পাখী কিচিরমিচির করছে। আমার শাল টা গায়ে জড়িয়ে দাও”।
অফিসের কাজে নুসরাত হেড় অফিসে যায়।মোহন কি জানতো? শপিং মলের আলো ঝলমল ফাষ্ট ফুডের দোকানে বোনের ছেলের সাথে শর্মা খেতে যায়। মোহনের কি সব খবর জানা ছিল?
না হলে কাকতলীয় ভাবে কেন আলো আঁধারিতে ওদের দেখা হয়ে যায়! সে দিন কি লগন,কি তিথি ওরা কেউ জানে না। শুধু কিছু সময় পাশাপাশি হেঁটেছে বিশ্বস্ত বন্ধুর মত।কথা হয়েছে একেবারেই মৃদুস্বরে। একটা ভালো লাগার রেশ নিয়ে ফিরে যায় মোহন।
এখন ওরা ভালো বন্ধু। নিজ সংসারে এই বন্ধুত্বের নির্যাস ছড়িয়ে দেয়। কিছু অপ্রাপ্তি যা ওদের কে হতাশার দিকে নিয়ে যাচ্ছিল,তা থেকে দুজনেই মুক্তি পায়। কি হবে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করে। ত্রিমিতি জীবন আমাদের।