কণা চট্টগ্রাম শহরের বেশ ধনী লোকের কন্যা। তার উপরে সুন্দরী। লেখা পড়ায়ও বেশে ভাল। গত দু সেমিস্টারের চমৎকার রেজাল্ট ক্লাসের বন্ধুদের বেশ চমকে দিয়েছিল। ছেলেরা বন্ধু হওয়ার জন্য পাগল, ফেজবুকে শত শত ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট লটকে আছে। একসেপ্ট করছেনা। তবে দেখতে শুনতে স্মার্ট দেখালেও ভেতরে ভেতরে বেশ রক্ষণশীল। যে দু তিন জন বন্ধু আছে বটে, তবে তারা সবাই মেয়ে বন্ধু,এর সবটুকু দায় কণার উপর চাপিয়ে দেয়া যায়না কণার মা কণা কে নিয়ে দিনরাত যে প্রকার উদ্বিঘ্নতার মধ্যে থাকেন তাতে নিজেকে জেকে সমঝে চলার পথ বেচে নেয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকেনা। তাছাড়া দিনকাল যা পড়েছে, পত্রিকায়, টিভি আর সোসাল মাডিয়ায় সে সকল, আতংকজনক ঘটনার ছড়াছড়ি তাতে তাবৎ ছেলেদের উপর অবিশ্বাসের এক বড় দেয়াল কণার মনের ভেতরে গেড়ে বসেছে ক্রমে ক্রমে।
আর সেই মেয়েই কি না গোপনে গোপনে প্রেমে পড়ে গেছে জুয়েল নামক এক ছেলের উপরে।ব্যাপারটা বুঝতে ঝাড়া তিন চার মাস লেগে গেল।প্রেমে পড়ার সেই সব কমন উপসর্গ -হঠাৎ করে তার সব কিছু ভাল লাগে, কবিতা পড়তে ভাল লাগে, গান শুনতে ভাল লাগে, সাজতে ভালোলাগে আয়নায় নিজের সৌন্দর্য্য আবিষ্কার করাটা ইত্যাদি যেন নেশায় পরিণত হয়েছিল সে সব দিনগুলিতে। সব কিছুর মূলেই ছিল জুয়েল ভাই। জুয়েল একই ইউনিভার্সিটির দুই বছরের সিনিয়ার। ইকোমিক্সে পড়ে। দেখতে হিরোর মতো নয় বটে,তবে আর্ট ফ্লিমের নায়ক হিসাবে বেশ মানিয়ে যাবে সহজেই।মাঝারি উচ্চতা, মাথায় চিরুনি স্পর্স না পাওয়া ঝাঁকড়া চুল, সহজে পড়তে না পারা এক জোড়া চোখ।পায়ে কেডস,ছোট ছোট চেকের ফুলহাতা ফতুয়া, ডেনিম জিনস্ যেন ফ্যাসন আইকন এবং বেশ মানিয়ে যায়। কিন্তু কিছু একটা তো থাকতে হবে যা কণাকে প্রবল ভাবে আকর্ষন করেছিল। হতে পারে তার নিস্পাপ হাসি। সিম্লিসিটি,বন্ধুদের সাথে যখন আড্ডাতে মশগুল থাকে কণা তখন দূর থেকে গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে আর ক্রমেই এক অন্যধারার আকর্ষণে নিমর্জিত হতে থাকে, যখন পাশ দিয়ে হেঁটে যায়, কণা লক্ষ্য করে দলের অন্য সবার চোখ তেরছা এবং ঘাড় বাঁকা হয়ে গেলেও জুয়েলে চোখ জোড়া কেমন জানি মনে হয় অন্য কোন লক্ষ্যমুখী।
জুয়েল কি করো সাথে প্রেম করে? সে মেয়েকি তাকে শপথ দিয়ে রেখেছে যে,সে অন্য কোন মেয়ের দিকে তাকাতে পারবেনা?কণা ভীষণ ভাবনায় পড়ে যায়।
যার জন্য মনোজগতের এত আলোড়ন, তার যেন কোন খবরই নাই।জুয়েলের কমন বন্ধু সবার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট আসার আর কাররো বাকি নাই, শুধু জুয়েলেরটা ছাড়া। বন্ধুুদের সাথে আড্ডা, হঠাৎ কোন ফোন আসার পর মাঝ পথে আড্ডা ছেড়ে চলে যাওয়া ইত্যাদি নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। মাঝে মধ্যে চোখাচোখি হয় বটে,তাতে কোন মুগ্ধার রেশ থাকেনা কিন্তু সেই দৃষ্টিতে কোনো অশোভনতা থাকেনা সেটি কণা প্রকৃতিপ্রদত্ত ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দিয়ে বুঝে ফেলে।
ইউনিভার্সিটির ক্যাফেটেরিয়াতে তাদের প্রথম দুইজনের কথাবার্তা হয়। সেদিন কোথাও কোন সিট খালি না থাকাতে ধুম করে এসে কণার সামনের সিটে এসে বসে জুয়েল।কোন প্রকার ভনিতা না করেই বল্ল
-হাই কণা! আমি জুয়েল তোমাদের দু’ব্যাচ সিনিয়ার! ইকোনোমিক্স পড়ি।
-ওমা আপনি আমাকে চেনেন? একটু না জানার ভান করে উত্তর দিল কণা।
-কেন চিনবো না, আমার বন্ধুরাতো সবাই তোমার কথা বলো, সবাই তোমার রূপ ও গুনে মুগ্ধ।
ভেতরে ভেতরে খুশি হতে থাকে কনা, প্রাণে পণে সে মনোভাব গোপন করার দুরুহ চেষ্টা করে বলে -শুধু আপনি ছাড়া?
-তা কি করে সম্ভব আমিও সে দলের মধ্যে অন্যতম নীরব সদস্য, জুয়েল উত্তর দেন।
-কিন্ত সেটা দেখে তো একদম বুঝা যায়না। আপনার দলের সবাই আমার ফ্রেন্ড লিস্টে আছে,শুধু আপনি ছাড়া।
-ওহ্ তাই বলো। আমার এমনিতে ফ্রেন্ড লিস্ট খুবই টাইনি, তাছাড়া খুব সুন্দরী মেয়েদের আমি ফেন্ড রিকোস্ট পাঠাইনা, আর খুব পরিচিত কেউ না হলে তো নয়ই -গড়গড় করে বলে যায় জুয়েল।
-ঠিক তো! সুন্দরী মেয়েরাতো সহজে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায় না -বলে কণা খিল খিল করে হেসে উঠলো।
হাসি এত সুন্দর, এত পবিত্র আর হৃদয় সঞ্চারী হয়, সেটা ভেবে জুয়েল হতবিহবল থাকে কিছুক্ষন।লেখাপড়া আর নানা কাজ নিয়ে জুয়েলকে এত ব্যস্ত থাকতে হয়, এই বয়সে যে কারো মন ভালো করা হাসি,বন্ধুত্বের আহ্বান কিংবা টেলিফোন কলের অপেক্ষায় থাকতে হয় -সে সব ইমোশনাল ব্যাপার গুলো প্রায় ভুলতে বসেছিল।
-যাক্ নিয়ম ভেঙে আমিই আপনাকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছি, ঝটপট এক্সেপ্ট করে ফেলুন, আশা করি আপনাকে রীতির ভাঙার অপরাধে ভুগতে হবেনা”
কণার কথাগুলি শুনে জুয়েলের সম্বিত ফিরে আসে।
-তাতো বটেই, এমন গুনী আর সুন্দর মানুষের ফ্রেন্ডস রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট না করে বোকার সর্দার বনতে চাই না – বলে হো হো করে হেসে উঠে জুয়েল।এবার কনার মুগ্ধ হওয়ার পালা। পুরুষ মানুষের হাসি কি ভাবে এত সুন্দর হয়?
মোবাইল ফোনের ফেইজবুকে লগইন করে সদ্য আসা কণার রিকোয়েস্ট এক্সেপ্ট করে জুয়েল বলে উঠে – চলো!আমাদের বন্ধু হওয়া উপলক্ষটা সেলিব্রেট করি- বলে কনাকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বার্গার,কফি,আর মিনারেল ওয়াটারে অর্ডার দিয়ে এসে কণার মু্খােমুখি এসে আবার বসলো।
বার্গার খেতে খেতে জুয়েল কণার লেখা পড়া, ভবিষৎ ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা ভাবনার জেনে নেয়।তার বড় ভাই সুলভ আচরণ দেখে কণা মনে মনে হাসে,কারণ তার দৃষ্টিতে শহরের সুন্দরতম পুরুষ জুয়েল। যাকে নিয়ে কল্পনায় আদর্শ এক জগতে বসবাস করে অহির্নিশ।
-আমার কথা মোটামুটি জানা হয়ে গেল এবার আপনার কথা শুনতে চাই,যদি আপত্তি না থাকে- বলে কণা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। জুয়েল কিছুক্ষণ চুপ মেরে থাকে। ভাবতে থাকে,প্রথম পরিচয়েই একজন সদ্য পরিচিত হওয়া মেয়েকে সবকিছু বলে ফেলা উচিৎ হবে কি না। তারপরও বলতে থাকে,- কারো কোন কাজে জড়িয়ে পড়াকে যদি তুমি ক্যারিয়ার ধরো,তবে বলা যায় আমার ক্যারিয়ার শুরু হয়ে গেছে।লেখা পড়া শেষ করে যদি চাকুরী বা ব্যবসা বাণিজ্য করতে হয়, তবে তবে সেটা হবে আমার বর্তমানের মূল কাজ কর্মকে সাপোর্ট দেয়া, যদি সময় সুযোগ হয়,তবে তোমাকে আমার কর্মক্ষেত্রে নিয়ে যাবো। তখন বুঝতে খুব একটা অসুবিধা হবেনা। এই বলে হাসতে থাকে।কণা কিছু বলার উদ্যোত হলে বলার সুযোগ না দিয়ে জুয়েল আবার বলে আবার বলতে থাকে,- আমি জানি তুমি ভড়কে গেছ, সবারই তাই হয়।
হ্যা! ভড়কে গেছি ঠিক বলা যাবে না, তবে কৌতুহল বোধ করছি, আফটার অল নাউ অ্যা ডেইজ ইট ইজ সো আন ইউজুয়্যাল – কণা বলে থামে।
-কণা আজ উঠি। ক্লাস মনে হয় শুরুই হয়ে গেল। পরে নিশ্চই কথা হবে’-বলে জুয়েল দাঁড়াল।- হ্যাঁ জুয়েল ভাই, আমারও সময় হলো’-
কণা মনে মনে ভাবে সুন্দর মুহুর্তগুলি এভাবে দ্রুত শেষ হয়। আহামরি কোন কথাবার্তা হলোনা বটে কিন্তু জড়তাবিহিন আর নির্ভরতাগন্ধি সময়টুকুর বদৌলতে মনের গলিপথে জুয়েলকে নিয়ে ভাবনার রেশ আরো গভীর পথে ধাবিত হলো।
এরপর দেখা সাক্ষাত হয়, ফোনে কথাবার্তা হয়, সময় গড়ায়, তারা একে অপরের পরম বন্ধু হয়ে উঠে/তারপরও তাদের উঠাবসায়, চলাফেরায় একধরনের মাত্রাবোধ বজায় থাকে। ফলে ক্যাম্পাসে কোনো মুখরোচক গসিপ দানা বেঁধে উঠেনা, বরং তাদের এমন নির্মল বন্ধুত্বের কেমেস্ট্রি দেখে বন্ধুদের একধরণের ভালো লাগে।
অনেকবার জুয়েলের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার কথা থাকলেও মনের কোনে লালিত চাটগেঁয়ে রক্ষণশীলর বেড়ি ডিঙিয়ে নিজেই গড় হাজিরা থেকেছে বরাবর। জুয়েলের বাড়ি কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায়।বিশাল দোতলা বাড়ী। বাসায় শুধু জুয়েলের বাবা আর কাজের লোকজন। মার প্রসঙ্গ উঠলে জুয়েল কেমন ডিসকমফোর্টের ভুগে,কণা কথায় কথায় জানতে পারে জুয়েলের মা লন্ডন প্রবাসী।কণা ইন্টেলিজেন্ট মেয়ে, সমস্যাটা বুঝতে পারে, এই নিয়ে অতিরিক্ত আগ্রহ প্রকাশ করে জুয়েলকে বিপাকে ফেলতে চায়না।
সেদিন ক্লাস শেষে শহরের নতুন সিনেফ্লেক্স এ ইংলিশ মুভি ‘জোকার’ দেখার কথা। জুয়েলই বলেছিল মুভিটির রিভিয়্যু খুব ভাল।কাহিনি গতানুগতিক জোকার সিরিজের অন্যান্য মুভির মত নয়। কিন্তু ক্লাস শেষে জুয়েলকে যথাস্থানে না দেখে কণা সম্ভাব্য সব খুঁজতে থাকে, ওদিকে মোবাইলেও রিচ করা যাচ্ছেনা।এইদিকে শোএর সময় পার হয়ে এলো/ আরো কিছুক্ষন অপেক্ষা করে মনে মনে ঠিক করলো, বাসায় গিয়ে খোঁজ করে আসতে হবে।
ক্যাম্পাস থেকে বাসা খুব দূরে নয়. রিক্সায় যাওয়া যায়.ঠিকানা ইনবক্স করাই ছিল। কিছুটা উদ্বিগ্নতা নিয়ে রিকশায় করে জুয়েলের বাসার যখন পৌছালো তখন বিকেল চারটা।বিশাল গেটের ছোট দরজাটা হাল্কা ধাক্কা দিতেই খুলে গেল.কোনো সিকিউরিটি গার্ড কে দেখা গেলোনা। বিশাল ঘাসের চত্বর, ডান এবং বাম বাউন্ডারি দেয়াল ঘেঁষে ফুলের বাগান। আর্লি সিক্সটিজের আর্কিটেকচারাল প্যাটার্নের বিশাল দোতালা বাড়ি। উনিশ বিশ ভাবতে ভাবতে নীচে তালার দরজার পাশে কলিং বেল দিলো দুবার,বেল আদৌ বাজলো কিনা বুঝা গেলোনা। আরেক বার বেল দিতে উদ্যোত হতে আয় মতো একজন মহিলা দরজা খুলে জিজ্ঞেস করলেন,
-আসসালামুলাইকুম ! আপনি কার কাছে এসেছেন আপুমনি?
-এটা জুয়েল ভাইদের বাসা না? কণা বললো।
-হ্যা! কিন্তু জুয়েল ভাইজান তো দুইজন মা কে নিয়ে সকাল থেকে হসপিটালে! শুনে কণাতো অবাক, কিছুই মেলাতে পারেনা।
-ফরিদা কে এসেছে রে? ভরাট কণ্ঠ শুনে ডান পাশে ঘাড় ফিরিয়ে দেখলো ষাটোর্ধ এক ভদ্রলোক দোতালার সিঁড়ি ভেঙে ধীরে ধীরে নামছে। বুঝতে অসুবিধা হলোনা,জুয়েল এর বাবা।
কাছে এসে দাঁড়াতেই, কণা সালাম দিয়ে বললো-চাচা আমি কণা , আমরা একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ি। ক্যাম্পাসে যাওয়ার কথা ছিল,মোবাইল ফোন অফ পাচ্ছি। তাই একটু খোঁজ নিতে এলাম।
-আমি কাদের জাফর,জুয়েলের বাবা। তার পর বলে,
-বাহ্ খুব ভালো কথা! আমাকে তো জুয়েল কোনোদিন বলেনি তোমার মতো এত মিষ্টি এক মেয়ে বন্ধু আছে ? বলে হোহো করে হেসে উঠলেন। কণা মনে মনে ভাবতে লাগলো, এতো সুন্দর হাসি জুয়েল বাবার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রেই পেয়েছে। – চাচা আমি আজ তাহলে আসি!” কণার কথা শেষ নাহতেই জুয়লের বাবা বলে উঠলো, -কি যে বলো ? এসেই যখন পড়েছ তখন বুড়োর সাথে একটু আড্ডা না করিয়ে ছাড়ছিনা, চলো উপরে চলো ,চা খেতে খেতে তোমার কথা একটু শুনি। ‘কণা না করতে পারলোনা। জুয়েলের বাবার পেছনে পেছনে দোতালায় গিয়ে বিশাল ড্রয়িং রুমে বসলো।কণাকে বসতে বলে তিনি ঘরের ভেতরে দিকে গেল।কণা চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগলো রুমের চারিপাশ। পুরানো সব দামি আসবাব, দেয়ালে পেইন্টিং, অনেক পারিবারিক ছবি, কোথাও যেন খাপছাড়া ভাব,বুঝা যায় কোনো নারী সদস্যের অনুপুস্থিতি। তবে মনের ভেতরে মা’দের বিষয়টি ঘুরপাক খেতে লাগলেও আগ বাড়িয়ে জিজ্ঞাসাও করা যাচ্ছেনা। একটু পরেই কাদের সাহেব ঘরের ভেতর থেকে এসে বললো, -ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসি, চা পান করতে কথা বলা যাবে।
ডাইনিং টেবিলে মুখোমুখি বসে কণা মুখ ফুটে বলে ফেললো- চাচা! জুয়েলের ফোন বন্ধ কেন? ওর দুই জন মা করা ব্যাপারটা বুঝতে পারলামনা! – আরে ওর কথা বলোনা, সকাল থেকে ওর দু জন মা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন, তাদের কে নিয়ে সিকিউরিটি গার্ড আর ড্রাইভারকে নিয়ে নিরাময় ক্লিনিকে আছে। ফোন চার্জ নাই, তাই করো সাথে যোগাযোগ করতে পারছেনা। ড্রাইভারের সাথে কথা বলে জানলাম ফুড পয়জন হয়ে খুবই খারাপ অবস্থা। এ ব্যাপারে তুমি কিছু জানোনা? প্রশ্ন করে কাদের সাহেব থামলেন।
-না চাচা, কণা ছোট করে উত্তর দিলেন।
-কিছু কিছু ব্যাপারে ছেলেটার ভীষণ রিসারভেশন, ওর দোষই বা কি, বিদেশ ছিলাম দীর্ঘদিন, জুয়েল যখন ছোট তখন দেশে ফিরতে চাইলাম, ওর মা চাইলোনা, নতুন সংসার পেতে থেকে গেল লন্ডনে।জুয়েল কে নিয়ে দেশে ফেরত এলাম। মা কে সে ভীষণ মিস করে, কিন্তু এতো করে বললাম মা’র কাছে গিয়ে লেখাপড়া করতে,সে মোটেই আমাকে ফেলে যেতে চাইলোনা। গত চার পাঁচ বছর যাবো নতুন খেয়াল চাপলো, অসহায় আর ভাগ্য বিড়ম্বিত মহিলাদের জন্য একটি আশ্রয় আর সেবা কেন্দ্র শুরু কবে, সেই থেকে শুরু, পুরো নিচ তোলা তার দশ বারো জন মা, সবাইকে মা বলেই ডাকে। পারলে আমাকেই বের করে দিয়ে দু’তলায় আরো মা নিয়ে আসে- বলে কাদের সাহেব হো হো করে হেসে উঠলেন। -এই নিয়ে তার অনেক বড় পরিকল্পনা। মায়ের আদর বঞ্চিত ছেলে আমার, তার এইসব পাগলামি প্রশ্রয় দেই- চা নাস্তা আসলো, চলে আরো কিছু টুকটাক কথাবার্তা। সূর্য পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে বারান্দার গ্রিল ভেদ করে দু’জনের মুখ জুড়ে শহুরে গোধূলির আলো। কেমন বিষন্নতা লাগে কণাকে।
-চাচা আমি এবার উঠি” বলে কণা উঠে দাঁড়ালো, -হ্যা ,তোমাকে দেরি করিয়েই দিলাম, আমি ড্রাইভার কে ডেকে পাঠাই, তোমাকে পৌঁছে দিক!-কাদের সাহেব বলেন।- না চাচা আমি একাই যেতে পারবো বাসাতো খুব কাছেই-। তারপর একা একা নেমে গেট পেরিয়ে রিকশায় উঠলো।
জুয়েল নিয়ে কণার আটপৌরে ভাবনা এ কয়েক ঘন্টায় ব্যবধানে হঠাৎ বদলে গেল। নিজকে মনে হয় এক অনধিকার প্রবেশকারী।জুয়েলের উপর কোনো রাগ নেই বরং তার মঙ্গল কামনায় মনে মনে প্রার্থনা করতে থাকে।
সার্সন রোডের বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে সন্ধ্যা নেমে যায়। এই নির্জন পাহাড়ী সড়কে অন্ধকার একটু তাড়াতাড়িই নামে। বাসার সামনে লাইট পোস্টে এলইডি বাতি যে এত সিগ্ধ আলো ছড়ায় এত দিন খেয়াল করেনি।
অন্যরকম পাওয়া আর দামী কিছু হারানোর ব্যাথা সে আলোর দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ ভুলে থাকে।