এইতো নিয়তি।
ভাদ্র মাস। ঘর্মাক্ত দুপুর। ঘা থির থির করছে। স্কুল থেকে ফিরে লম্বা ডাটের শরীফ ছাতাটা ঝুলিয়ে রাখলেন দরজার পাশে। অমন কালো ছাতাটা রোদে পুড়ে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। পায়ে বাটা কোম্পানীর প্লাষ্টিকের কালো পামসু, খুলে রাখলেন বারান্দায়। পরনে হালকা সবুজ রঙ্গের বুক কাটা হাফ হাতা পাঞ্জাবী। ওহ! কী যে গরম পড়ছে বলে পাঞ্জাবীটা খুললেন। ভিতরে হাফ হাতা গোল গলা গেঞ্জি। ঘামে ভিজে গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। কয়েক জায়গায় ছেড়া। ভাগ্যিস সবুজ মোটা কাপড়ের পাঞ্জাবী বলে ভিতরেরটা দেখা যায় না। পাঞ্জাবীটা দেওয়ালের সাথে হ্যাংগারে ঝুলিয়ে কাঠের টুলটায় বসলেন। গেঞ্জিটা আর খোলা হয়নি। ওঠা ঘরোয়া পোষাক।
হায়রে সংসার। বুঝলে বৌমা। এ সংসারে সং সেজে থাকাটায় হচ্ছে সার। তার-ই নাম সংসার। এক বুক চাপা কষ্ট নিয়ে বললেন অবিনাশ চ্যাটার্জী।
– ও বৌমা, আজ তো অরু আসার কথা। এখনও আসেনি।
– না বাবা।
– দেরি হবেই তো। আজকাল রাস্তা ঘাটের যা অবস্থা। আর সময়মত গাড়ী পাওয়াটাও মুশকিল।
তারপর গামছাটা কাঁধে ঝুলিয়ে পুকুরের দিকে রওয়ানা দিয়ে বললেন – বৌমা তুমি ভাতটা বেড়ে নাও, আমি হাত মুখ ধুয়ে আসছি।

দুইটা বাজে। এটাই নিয়মিত রুটিন। স্কুল শিক্ষক অবিনাশ চ্যাটার্জী। দুই ছেলে। অরিন্দম আর শুভাগত। ঘরে অসুস্থ বউ নিয়তি চ্যাটার্জী। বছর খানেক আগে ষ্ট্রোক করে এখন প্যারালাইজড। সারাক্ষন বিছানায়। একজন আদর্শ শিক্ষকের আদর্শে মানুষ করেছে ছেলে দু’টোকে। বড় ছেলে অরিন্দম একটা ঔষধ কোম্পানীতে ভালো পজিশনে আছে। ছোট ছেলেও একটা শিপিং কোম্পানীতে ভালোই আছে। দু’ভাইয়ের মধ্যে বছর দু’য়েকের ব্যবধান। শৈশব থেকে দু’ভাইয়ের বেড়ে উঠা। নিবিড় বন্ধুত্ব, পারিবারিক বন্ধন সবকিছুতেই যেন পিতার আদর্শের ছোঁয়া।

পৈতৃক কিছু ধানি জমি আর ভিটে বাড়ি। এই নিয়ে সংসার। মা বাবার শ্রাদ্ধ শান্তিতে আত্মার শান্তির জন্য মেয়েদের চোখের জল ফেলতে হয়। সেই ধারনা থেকে নিয়তি দেবী একটা মেয়ের কথা তুলেছিল। অবিনাশ বাবু সরল সোজা মানুষ। বলে দিলেন-যা দিনকাল পড়েছে তাতে সংসার বাড়িয়ে লাভ কি। ছেলের বউরায় মেয়ের পার্টটা চালিয়ে নেবে। নিয়তি দেবী আর দ্বিমত করেননি।

বড় ছেলের বিয়ে হয়েছে মাস খানেক হতে চললো। একটা ভালো মেয়ের সন্ধান, পারিবারিক স্বচ্ছলতা এবং সর্বোপরি নিজের পায়ে দাঁড়ানো। সব মিলিয়ে বিয়েটা একটু দেরিতেই হয়েছে। মথুর বাবুর মেয়ের খবরটা দিয়েছিল রানু পিসীমা। বলেছিল মেয়ের বয়সটা একটু বেশী। পচিঁশ ছাব্বিশ হবে। মেয়েটা শিক্ষিতা, সুন্দরী। গায়ের রং ফর্সা। হাই স্কুলের শিক্ষিকা। তাছাড়া আমাদের অরুর বয়সও তো কম হলোনা। ঠিক বয়সে বিয়ে থা না করলে ছেলে পুলে মানুষ করবে কখন। আজকাল যে কি হয়েছে। ডাঙ্গর ডাঙ্গর ছেলেমেয়েগুলো খালি স্ট্যাটাস নিয়ে ভাবে। বিয়ে শাদীর ভাবনাটা ভাবে পরে।

মেয়ে দেখার আগে অরিন্দম ভাবছিল, মেয়ে শিক্ষিতা, সুন্দরী। চাকরী করাটা হচ্ছে বাড়তি পাওনা। বয়সটা ফ্যাক্টর নয়। আর শিক্ষিত মেয়ে চাকরী করবে না তো ঘরে বসে ভ্যারেন্ডা ভাজবে। পাত্রীর চাকরীর কথা শুনে অবিনাশ বাবু এভাবে সায় দিলেন। বয়সের ব্যাপারটা নিয়েও সরাসরি কথা বলেছেন ছেলের সাথে। বলেছেন বয়স, কাজ আর অভিজ্ঞতার সাথে ম্যাচিউরিটির একটা ব্যাপার আছে। ম্যাচিউরিটি না আসলে সংসার সুন্দর হয় না। সংসারে অনেক ব্যাপার আছে দু’জনকেই মানিয়ে চলতে হয়। সমঝোতা আর সহনশীলতার মাধ্যমে সেটা সম্ভব।

অপর্ণা চক্রবর্তী। অরিন্দমের স্ত্রী। সম্ভ্রান্ত পরিবার। বাবা সরকারী চাকুরীজীবী। আধুনিক ধ্যান ধারনা আর সমাজে মাথা উচুঁ করে বেঁচে থাকার জন্য নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা। একজন শিক্ষিত ভালো পাত্রের সন্ধান যে অপর্নার বাবা মথুর বাবু করেননি তা নয়। কতজন কতভাবে নানা রকম অপবাদ দিতেও ছাড়ছে না। মেয়ে আয়বুড়ো হতে চললো। বলি ছেলের কি আকাল পড়েছে। বুড়ো ভামের হাতে মেয়ে সম্প্রদান করে হলেও কন্যাদায় মুক্ত হওয়া যায়। অপর্নার জ্যাঠাইমা যেন পারলে কোন চাষা ভুষার হাতে মেয়েকে তুলে দিতে পারলে বাঁচে। অপর্নার মা শচী দেবী নীরবে আঁচলে চোখের জল মুছেন। আর দু’হাত তুলে ভগবানের কাছে প্রার্থনা করেন, হে ঠাকুর তুমি আমাকে সহ্য করার শক্তি দাও। আমার অপুকে যেন একটা ভালো ছেলের হাতে তুলে দিতে পারি। পাত্র আসে অনেক। হয়তো ধারে বরে মিলে না। নয়তো দাবী দাওয়া। বয়স বেশী হলে নগদ টাকার পরিমানটাও বেড়ে যায়। একজন সৎ ও আদর্শবান সরকারী কর্মচারীর পক্ষে সে দাবী মেটানো সম্ভব নয়। শিক্ষিত রুচিবান পাত্র যেন সমাজে বিরল। এই সমাজে মেয়ে বিবাহযোগ্যা হলে অনেক কিছু মুখ বুজে সহ্য করতে হয় মা বাবাকে। শেষ পর্যন্ত ভালোই ভালোই বিয়েটা হয়ে গেলো। জ্যাঠাইমা এই ফাঁকে দু’কথা শুনিয়ে দিলেন। যে আয়বুড়ো মেয়ে, তাতে সংসারটা ধরে রাখতে পারলে ভগবান রক্ষে।

বাসি বিয়ের দিন পুকুরে আংটি লুকোচুরির খেলা চলছে। মহা ধুম ধাম। পরিবারের প্রথম ছেলের বিয়ে। আত্মীয় স্বজন সবাই এসেছে। উঠোনে এক হাত বাই এক হাত সাইজের পুকুর। চার কোণায় চারটি কলা গাছ। স্বামী আংটি লুকাবে স্ত্রী খুঁজে নেবে। আবার স্ত্রী আংটি লুকাবে স্বামী খুঁজে নেবে। অনেকে ভীড় করেছে ছোট্ট পুকুরটির পাড়ে। একদল স্ত্রীপক্ষে অন্যদল স্বামীর পক্ষে। জলও আছে খানিকটা। চলছে আংটি লুকোচুরি। শেষ পর্যন্ত আংটিটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। একটুখানি জলের মধ্যে অনেকগুলো হাত। কেউ একজন সরিয়েছে। বুঝতে পারে অরিন্দম। এখুনি হয়তো কেউ বলে বসবে ”কি অলুক্ষনে কান্ডরে বাবা, আসতে না আসতেই শ্বশুর বাড়ীর সম্পত্তিটা খোয়াল”। নিজের হাত থেকে আংটিটা খুলে জলের ভিতর দিয়ে অপর্নার হাতে গুজে দিয়ে চোখে চোখ রেখে হাসল অরিন্দম। নববধূ অপর্ণা চোখ বুজল। কি ভাবল কেবল অপর্ণা আর স্রষ্টাই জানেন।

এবার গৃহ প্রবেশ। অরিন্দমের মা বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছে না। তারপরও চিন্তার শেষ নেয়। বিছানা থেকেই গলা উঁচিয়ে বলছে – ওরে এখুনি বউ ঘরে ঢুকবে। তোরা বরণ ঢালাটা সাজিয়ে নে। পঞ্চ প্রদীপগুলো মোটা সলতে দিয়ে ভালো করে জ্বালাবি। বেশী করে তেল দিবি। যেন নিভে না যায়। ধান, দুর্বা, আম্র পল্লব সব যেন ঠিক ঠাক থাকে। পঞ্চ আয়স্থি মিলে ভালো করে কপালে কুলা ঠেকিয়ে বরণ করে নিবি। উলু ধ্বনি যেন না থামে। আজকালকার মেয়েদের তো উলু দিতে গেলে যেন গলা শুকিয়ে যায়। চালের হাড়িতে কড়িগুলো ঠিক ঠাক রাখিস। নিয়তি দেবীর যেন কোন অসুখই অসুখ বলে মনে হচ্ছে না। কেবল বিছানা থেকে জোর দিয়ে নামতে গেলে যত বিপত্তি। ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে শুধু চোখের জল ফেলেন।

বিয়েটা হয়েছে শ্রাবণ মাসের শেষে। গৃহপ্রবেশের সময় একটা দমকা হাওয়া সবকটা মংগল প্রদীপ মুহুর্তে নিভিয়ে দিল। উলুধ্বনি থেমে গেছে মুহূর্তেই। সাথে এক পশলা বৃষ্টি। অরিন্দম আর অপর্নার শরীরটা এক কাপড়ে বাঁধা। অরিন্দম পাঞ্জাবীর পকেট থেকে লাইটার বের করে। নিজের শরীর দিয়ে মংগল প্রদীপ আড়াল করে আবার জ্বালিয়ে দিয়ে বলল-এই অসময়ে বৃষ্টিটা এলো। আবার শুরু হলো উলুধ্বনি। কড়ি খেলায় একেবারে পাকা হাত অপর্নার। ভাত রান্না, ভাগাভাগি থেকে কড়ি খেলা। যতবারই দান মেরেছে ততবারই ষোল আনা দান পড়েছে। একটা কড়িও উপুড় হয়ে পড়েনি। নিকটাত্মীয়ারা বলাবলি করছে একেবারে সাক্ষাৎ লক্ষী। এই না হলে বউ। আমাদের অরুর ভাগ্যটা ভালো।

বউ ভাতটাও হয়ে গেলো। ঘর ভর্তি লোক। নিমন্ত্রিত অতিথি, আত্মীয় স্বজন. পাড়া প্রতিবেশী। বউ ভাতের দিন নতুন বউকে মিষ্টি পায়েস খাওয়াতে হয়। নতুন বউ, নতুন সংসার, নতুন পরিবেশ। একটু এদিক সেদিক হলে নানান জনে নানান কথা বলবে। খুব সাবধানে পাকা গৃহীনির মত সবাইকে পায়েস খাওয়াল। শাশুড়ী মা বিছানা থেকে বার বার নিষেধ করছে, বলি নতুন বউটাকে দিয়ে সবার পাতে পায়েস দেওয়ার দরকার কী। হাড়ি থেকে বেড়ে দিলে তো হয়। মেয়েটা বাপের বাড়ী থেকে সবে এলো। সংসারের হাল ধরতেও বছর খানেক লেগে যায়। আমারও এমন কপাল। বিছানা থেকে উঠতে পারছি না।

গৃহ প্রবেশের পর অপর্না শাশুড়ীকে বিছানায় বসিয়ে দিল। নতুুন কাপড় পরিয়ে দিয়ে প্রনাম করল। তারপর নিজের হাতে পায়েস খাইয়ে দিল। শাশুড়ী প্রান ভরে আশীর্বাদ করল – তোমরা সুখী হও মা। আমার ছেলেটাকে দেখে রেখো। বড় ভালো ছেলে। কখনও মা বাবার অবাধ্য হয়নি। তারপর বালিশের নীচ থেকে কিছু একটা বের করে অপর্ণার হাতে দিয়ে বলল – এটা আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিল। আমি তো পরিয়ে দিতে পারছি না। তুমি কানে পরে নাও। আমি একটু দু’চোখ ভরে আমার লক্ষী বৌমাকে দেখি।

শুভ রাত্রির দিন কাঁচা ফুলে বাসর সাজানো হয়েছে। দায়িত্বটা পেয়েছে শুভাগত আর তার বন্ধুরা। অপর্নাকে পেয়ে একেবারে সোজা বলে ফেলল-
– শোন বৌদি, আপনি টাপনি আমি বলতে পারবো না। আর একটা কাজ তুমি মোটেও ভালো করনি।
– কোন কাজটা। মুচকী হাসল অপর্না।
– এত বড় একটা অন্যায় করলে আর এখন বুঝি ন্যাকামো করছো। যা বলার দাদাকে বলব।
– বেশতো। আমিও তোমার সাথে একমত। তোমার দাদাকে-ই বল। আমার আপত্তি নেই। তিনি যা বিচার করবেন তাই হবে। কিন্তু ভুলটা কি বললে না তো।
এই মাত্র অরিন্দম ঘরে ঢুকল। কি যেন খুঁজছে। শুভাগত চিৎকার করে উঠল। এই তুই এসেছিস ভালোই করেছিস। বৌদি একটা ভীষণ অন্যায় করেছে। তোকে তার বিচার করতে হবে। অরিন্দমকে ঢুকতে দেখে অপর্না ঘোমটা টেনে বেরুতে চাচ্ছিল। শুভাগত হাত ধরে টেনে বসিয়ে দিয়ে বলল – যাচ্ছো কোথায়। আগে এটার ফয়সালা করে যাও।
– আরে রাখ তোর ফয়সালা। আমার সিগারেটের প্যাকেটটা খুঁজে পাচ্ছিনা।
– সেটা না হয় আমি সাপোর্ট দিলাম। তোরা দুজনে যা শুরু করেছিস, আমি তো কিছুই ভাবতে পারছি না। এবার আমার প্রবলেমটা সলভ করে দে ভাই। লক্ষী ভাই আমার।
– আগে প্রবলেমটা বলবি তো।
– এত দিনতো আমি আর তুই এক খাটে এক বিছানায় শুয়েছি। ঠিক কিনা বল।
– একদম ঠিক। অপর্ণা বুঝতে পারে ভাইয়ে ভাইয়ে দুষ্টুমি হচ্ছে।
– গাদা গাদি করে পাশাপাশি না শুলে আমাদের ঘুম আসত না। ঠিক।
– ঠিক।
– আজ থেকে তো বৌদি নিশ্চয় তা হতে দেবে না।
– এ্যাঁ। বলিস কি।
– তাই ভাবছি প্রথমে আমি শোব, মাঝখানে বৌদি তারপর তুই। না না, আমার পাশে তুই আর তোর পাশে বৌদি শোবে। এটাই আমার ফাইনাল ডিসিশান। এবার তোরা ভেবে দেখ, তোরা কি করবি। একটা মেয়ের কারনে আমরা দু’ভাই এক সাথে ঘুমাতে পারব না তা কি করে হয়। এটা বিরাট অন্যায়।
– আমরা কিন্তু আশে পাশেই থাকবো। অন্য বন্ধুরা সবাই একসাথে বলে উঠল।
– এখন ফাজলামো রাখতো। তোর বৌদি ঘুমিয়ে গেলে তুই চুপটি করে আমার পাশে এসে শুয়ে পড়িস। এবার সিগারেটের প্যাকেটটা দে তো। আর পারছি না।
অপর্না হেসে খুন। মনে মনে খুশী হয়। চোখে রঙ্গীন স্বপ্ন। যে পরিবারে ভাইয়ে ভাইয়ে এত সুন্দর বন্ধন এই বন্ধনটাকে আরো সুদৃঢ় করে টিকিয়ে রাখতে পারবে তো। পাছে ভয় হয়। এ পরিবারে সবাই যেন পরস্পর পরস্পরের পরম বন্ধু। ভাবতে ভালো লাগছে যে, এমন একটি পরিবারে সে বউ হয়ে এসেছে। এ যেন এক নতুন জীবন, নতুন ভাবনা। নতুন ভাবে সব কিছু শুরু করার মানসিক প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে অনেক ভেবে চিন্তে।

বিয়ের চব্বিশ দিন পার হয়েছে। পায়ের আলতা, হাতে মেহেদি, গায়ে কাঁচা হলুদের গন্ধ এখনও আছে। কপালে বড় লাল টিপ আর সিঁথির সিঁদুরটা জ্বল জ্বল করছে। জলপাই রংয়ের নতুন একটা সুতির ছাপা শাড়ী পরেছে। চোখে মুখে শুধু স্বপ্ন আর আনন্দ। অপূর্ব লাগছে। বিয়ে উপলক্ষে পনের দিনের ছুটি নিয়েছিল অরিন্দম। দশ রাত্রির আনুষ্ঠানিকতা সেরে কাজে যোগ দিয়েছে। নতুন বউ, নতুন ভালোবাসা। কিছুতেই মন চাইছে না ঢাকায় ফিরতে। অপর্না বলেছে ঠিক সময়ে কাজে যোগ দিতে। পারলে বৃহষ্পতিবারটা ছুটি নিয়ে চলে এসো। বুধবারে রাতের ট্রেন ধরলে বৃহস্পতিবার দুপুরে পৌঁছে যাবে।

অপর্নার অপেক্ষার প্রহর যেন কাটে না। কাউকে কিছু বলতে পারছে না। শুধু পথ চেয়ে থাকা। আর অপেক্ষা শুধু ফোনটা কখন বেজে উঠে। কিছুক্ষন আগে ফোন করেছে আরও ঘন্টা খানেক লাগবে। রেল লাইনে কি একটা সমস্যা হয়েছে। অনেকটা সময় অপেক্ষা করতে হয়েছে। এরমধ্যে শাশুড়ীকে খাইয়ে এসেছে অপর্না। অবিনাশ বাবু খেতে বসে বললেন-
– তোমার শাাশুড়ী খেয়েছে।
– হ্যাঁ, বাবা। খাইয়ে এসেছি।
– তোমার পিসীমা কই।
– পশ্চিমের বিলে গরু আনতে গেছে।
– ভাতটা চুলার উপর একটু গরম করে রেখো বৌমা। অরু আসতে কেন যে এত দেরি করছে ।
– ফোন করেছিল বাবা। বলল – আরও ঘন্টা খানেক লাগবে।
দরজার পাশে পোষা কুকুরটা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে। কবে খাওয়া শেষ হবে। তারপর পাতের কিছু এঁটো কাঁটা, উচ্ছিষ্ট আর একমুটো ভাত ভাগ্যে জুটবে। সেই অপেক্ষায় জিহবা থেকে অনবরত লালা ঝরছে। বুঝিয়ে দিচ্ছে আমিও চরম ক্ষুধার্ত।
তরকারিটা খুব ভালো হয়েছে। মলা মাছের ঝোল, সর্ষে বাটা দিয়ে ইলিশ মাছের পাতুড়ি সাথে ঘন মসুর ডাল। খেতে বেশ লাগছিল। থালার এক কোণায় কুকুরটার জন্য কিছু ভাত ছিল। জিহ্বার স্বাদে কখন যে তাও খাওয়া হয়েছে খেয়াল নেই। অবশেষে বৌমাকে বলল – কুকুরটার জন্য একটু ভাত দাও। তরকারিটা এত ভালো হয়েছে যে সব ভাত গুলোই খেয়ে নিয়েছি।
– এ কি বলছেন বাবা, আর একটু ভাত আর মাছ দেয়। সহাস্যে বলল অপর্না।
– না বৌমা। এমনিতেই খাওয়া বেশী হয়েছে।

পিসীমা উঠোনে গরু বাঁধতে বাঁধতে বলল – ও বউ আমাদের অরু আসতেছে। পুকুর পাড় থেকে দেখলাম। তুমি তাড়াতাড়ি খাবারটা গরম কর। আমিও ¯œান করে আসি। হঠাৎ যেন বিদ্যুৎ বেগে শিহরণ বয়ে গেল অপর্নার শরীরে। নতুন বউরা সম্ভবত এত আবেগ, ভালোবাসা, অনুভুতি এগুলো সহজে প্রকাশ করতে পারে না, কেবল উপলব্দি করতে পারে। নিজে বুঝতে পারে, অন্যকে বুঝাতে পারে না। কত কী ভাবছে। সারারাত জার্নি করেছে। কি খেয়েছে, না খায়নি কিছুই জানে না। ফোনে জিজ্ঞাসা করেছে। বলল – ওসব নিয়ে তুমি ভেবো না তো। এক দৌড়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে সিথিঁর সিঁদুরটা দেখে নিয়ে মাথাটা আঁচড়ে নিল। এই যেন নতুন জামাই ঘরে ঢুকছে। বার বার শাড়ীর আঁচলে মুখের ঘাম মুছছে।

অরিন্দম ঘরে ঢুকে বাবাকে প্রনাম করল। ব্যাগটা অপর্নার হাতে দিয়ে বলল – মা কেমন আছে। তারপর মার ঘরে গিয়ে মাকে প্রনাম করল। ইস কত শুকিয়ে গেছিসরে। খুব কষ্ট হয়েছে, না। তা এবার বেশ ক’দিনের ছুটি নিয়ে এসেছিস তো। নতুন বিয়ে করেছিস। কোথায় বৌমাকে নিয়ে একটু বেড়াতে যাবি। তা না। শুধু কাজ আর কাজ। মুখে হাত বুলাতে বুলাতে নিয়তি দেবী এক নাগারে কথা বলে যাচ্ছে। এই দ্যাখো, আমিও কেমন। দুপুর গড়িয়ে বেলা পড়ে গেছে। কোথায় হাত মুখ ধুয়ে ভাত খেতে বলব, তা না। ও বৌমা অরুর লুঙ্গি গামছাটা দাও। হাত মুখ ধুয়ে আসুক। তুমি তাড়াতাড়ি খাবার দাও।
মা তুমি কি শুরু করলে। সারা রাত দিন জার্নি করেছি। ¯œান হয়নি। গায়ের ঘামটা বসুক। ¯œান করে তারপর খাবো। তুমি ঘুমাও বলে নিজের ঘরে শার্ট প্যান্ট পাল্টিয়ে নিল।
অপর্না ঠান্ডা কলের জলে একগ্লাস লেবু শরবত নিয়ে এসেছে। হাতে দিয়ে তাকিয়ে দেখল। অরিন্দমের মুখটা ফ্যাকাশে। রোদে পুড়ে গায়ের রং তামাটে হয়ে গেছে। চোখগুলো ঘোলাটে। অরিন্দম শরবতটা খেয়ে গ্লাসটা এগিয়ে দিল অপর্নার হাতে। গ্লাসটা হাতে নিয়ে বলল-
– তোমার শরীর ভালোতো। চেহারার যা অবস্থা হয়েছে। কলের জলটা ঠান্ডা। আমি কল চেপে বালতি ভরে দিচ্ছি। তুমি একটু বসে ¯œান করে নাও।
– মাথাটা কেমন ঝিম ঝিম করছে। প্রচন্ড গরম। শরীরটা ভালো লাগছে না। খুব দুর্বল লাগছে। ট্রেনে একবার বমিও হয়েছিল।
– সে কি। নিশ্চয় কিছু খাওয়া হয়নি।
– মেস থেকে খেয়ে উঠেছি। সারারাত জেগে ছিলাম তাই হয়তো এমনটি লাগছে। দাও গামছা সাবান দাও। আমি বরং পুকুর থেকে স্নান করে আসি। স্নান করে খেয়ে বিশ্রাম নিলে ভালো লাগবে।

অপর্না ভাত বেড়ে বসে আছে অনেক্ষণ। তরকারীগুলো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। ভাবছে হয়তো এতদিন পরে বাড়ী এসেছে। অমিয়দের বাড়ীতে একবার দেখা করতে গেছে হয়তো। কাউকে বলতে পারছে না। কি হলো। খুঁজতে যাবে। তারও উপায় নেয়। নতুন বউ। লোকে কি ভাববে। খুঁজতে গেলে পাড়া শুদ্ধ লোক বলবে – বউয়ের যেন তর সইছে না। অমনি পাড়া খুঁজতে বেরিয়েছে। দুধের শিশু তো নয় যে হারিয়ে যাবে। ভাতগুলো ডাকনা দিয়ে জল আনার ছলে একবার পুকুর ঘাটে গিয়ে দেখে এসেছে। পুকুর ঘাটে গামছাটা রাখা আছে। ফিরে আসতেই অবিনাশ বাবু হাঁক ছাড়ল। এসেই যে ছেলেটা স্নান করতে গেলো। এখনও আসার নাম নেয়। খাবে কখন। বিয়ে করেছে। নতুন বউ ঘরে। ওর আর আক্কেল হলোনা। দেখ হয়তো কারও ঘরে গিয়ে পিড়ি পেতে আড্ডা মারছে। ও রানু, তুই একবার অমিয়দের বাড়ী গিয়ে দেখে আয়তো। অপর্নার বড় রাগ হচ্ছে। মানুষটা দু’টো খেয়ে বিশ্রাম নিত। নতুন বউয়ের এই এক জ্বালা। রানু পিসীমা ঘুরে এসে বলল- অরু ওদিকে যায়নি। অপর্নারও এখনও খাওয়া হয়নি। বড্ড তৃষ্ণা পাচ্ছে। জল ঢালতে গিয়ে হাত থেকে কাঁচের গ্লাসটা পড়ে ভেঙ্গে গেছে। বুকের ভিতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। কাউকে কিছু না বলতে পারার কষ্টটা বড় কাতর করে তুলছে। আবারও কিছু এঁটো থালা বাসন নিয়ে পুকুর ঘাটে গেল। ইচ্ছাকরে কিছু সময় এদিক ওদিক খেয়াল করল। কাউকে চোখে পড়ছে না। আবার ফিরে আসে।

অবিনাশ বাবু পাঞ্জাবী পরে বাজারের দিকে বেরুতে যাচ্ছে। আজ হাট বার। প্রথম বাজারে ভালো বড় মাছ পাওয়া যাবে। বৌমাকে বলল – বাজারের থলেটা দিতে। অপর্না বলল – বাবা অনেক সময় হয়ে গেলো। আপনার ছেলেটা যে কোথায় গেল। একটু দেখুন না। এ বেলা বাজার না করলেও চলবে। উঠোনে শিউলি গাছটার উপরে দু’টো কাক কর্কশ স্বরে অনবরত ডেকে যাচ্ছে। মরার কাক, এই ভর সন্ধ্যা ছাড়া আর ডাকার সময় পেলি না বলে ঢিল মেরে তাড়াতে চাইল রানু পিসীমা। কাক দু’টো উড়ে গিয়ে আবার ঘরের চালের উপর বসে ডাকছে। নিয়তি দেবী রেগে আগুন। আসুক আজকে। বউয়ের সামনে কান মলা খাইয়ে তারপর ছাড়ব। ও বৌমা তুলশী তলায় বাতিটা জ্বালিয়ে দিয়ে এসো। সন্ধ্যাও যে হয়ে এলো।

অরিন্দম আর ফিরেনি। সারা গ্রামে হৈ চৈ পড়ে গেল। পুকুরের মাঝখানে কার যেন মাথা দেখা যাচ্ছে। এতক্ষন পুকুরেই ডুবেছিল। অরুকে কানটা টেনে দিতে গিয়ে জ্ঞান হারায় নিয়তি দেবী। পুরো বাড়ীটা নীরব। অবিনাশ বাবু দাওয়ায় বসে মাঝে মাঝে বুক চাপড়াচ্ছে আর বোবা কান্না কাঁদছে। হতভাগী বউটা কাঁদতেও পারছে না। ভাতের থালাটা সামনে নিয়ে ঠাঁই বসে আছে। চোখে এক ফোটা জলও নেই। চোখের পলকও পড়ছে না। শুভাগত ভাবছে আমার আর ঝগড়া করা হলোনা। ডাক্তার জানিয়েছে হার্ট এ্যাটাক। জলে ডুব দিয়ে আর উঠতে পারে নি। পিসীমা চেঁচিয়ে বুক ভাসাচ্ছে আর বলছে সব দোষ আমার। আমি কেন অমন অলুক্ষনে মেয়ের খবর দিতে গেলাম। বলি–ও মুখপূড়ি যা এবার, ¯œান করে সাদা থানটা পরে আয়।

অপমৃত্যু। চারদিনের দিন শ্রাদ্ধ ক্রিয়া শেষ করতে হবে। এবং তা অপর্নাকেই করতে হবে। সমাজের লোকদের স্বামী খেকো অপবাদ এখন গায়ে লাগেনা। ঠিকইতো বলছে। নইলে আলতার রং না শুকাতেই এমন কপাল কারও হয়। এক গভীর রাতে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল হতভাগীটা। পারেনি। অবিনাশ বাবু বুঝতে পেরে বলেছিল – বৌমা, আমি জানিনা তোমার মনে কী আছে। ছেলেকে হারিয়ে আমি যদি বেঁচে থাকতে পারি তুমি কেন পারবে না। তুমি কয়েকটা মাস অপেক্ষা করো। কালশৌচটা যাক। আমাকে একটু ভাবতে দাও। যে যাই বলুক। তুমি চলে গেলে আমাদেরও যে বেঁচে থাকা হবেনা। কাল থেকে তুমি স্কুলে যোগ দাও। দিনের কিছুটা সময় হলেও ভালো লাগবে।

দেখতে দেখতে একটা বৎসর কেটে যায়। শুভাগতও বাড়ীতে কম আসে। পূজা পার্বনে যদিও আসে মোটেও ঘরে থাকতে চায় না। দূর্গাপূজা এসে গেলো। উঠোনের শিউলী তলায় অনেক সাদা শিউলী ঝরে পড়েছে। অপর্নার ইচ্ছে করে সাঁঝি নিয়ে শিউলী কুড়াতে। পেছনের লাগাম টেনে ধরে বিবেকবোধ। সন্ধ্যার আকাশটা বড় নির্মল মনে হয়। ঝিরঝিরে শীতল বাতাস। শরতের আকাশে শিমুল তুলোর মত সাদা মেঘ। অপর্নার মনের আকাশেও তার ছায়া পড়েছে। আজ সন্ধ্যায় তুলশি তলায় প্রদীপ জ্বালাতে গিয়ে সবার অগোচরে কিছু শিউলি কুড়িয়ে আঁচলে ভরে নিয়ে এসেছে ঘরে।

আজ দেবীর বোধন। প্রাণ প্রতিষ্ঠা হবে। পাড়ার পূজো মন্ডপ থেকে মহালয়ার অমৃত সুরধ্বনি ভেসে আসছে। যা দেবী সর্বভূতেষু মাতৃরূপেণ সংস্থিতা…। গতরাতে পূজোর ছুটিতে এসেছে শুভাগত। সবার জন্য নতুন কাপড় কিনে এনেছে। বিপত্তি বাঁধল অপর্নার শাড়ী কেনা নিয়ে। কি শাড়ী কিনবে। যদিও জানে আজকাল অল্প বয়সে বিধবা হলে মেয়েরা সাদা শাড়ী পরে না। আবার অতি আধুনিক কিংবা উগ্র সাজ পোষাকও সমাজ মেনে নেয় না। মনে পরে দাদার বিয়ের শাড়ীগুলো শুভাগত নিজেই কিনেছিল। আজও হালকা সবুজ রং-এর উপরে ঠিক আশীর্ব্বাদের শাড়ীটার মত একটা শাড়ী খুব পছন্দ হয়েছে। সাত পাঁচ না ভেবে কিনেও নিল। কাপড়গুলো সব বাবার হাতে দিয়ে বলল – বাবা বৌদির শাড়ীটা কীভাবে দেবে বুঝতে পারছি না। যদি ভালো না লাগে দিওনা। আমি জানিনা বৌদি এ শাড়ী পরবে কি না। আমি সাদা শাড়ী কিনতে পারব না।
– তুই ভালোই করেছিস শুভ। আমি জানতাম তুই কখনও এমনটি করতে পারবি না। তোকে একটা কথা বলবো, বল রাখবি।
– ছোটবেলা থেকে তোমার কোন কথাটা রাখিনি বলো।
– ঠিক এই দিনটার জন্যই আমি অপেক্ষা করছিলাম। মেয়েটার দিকে তাকাতে পারছি না। ওর কি দোষ বল। যা হয়েছে সবিই অদৃষ্ট। নানা জন নানা কথা বলছে। কান পাতলে আমি মেয়েটার বুক ফাটা কান্নার আওয়াজ শুনতে পায়। অরু চোখের সামনে নাই তা সহ্য করতে পারছি। কিন্তু এই মেয়েটার জীবন্ত কষ্ট আমি আর সহ্য করতে পারছি না।
– কিন্তু বাবা তাতে বৌদির দোষটা কোথায়। আর আমিই বা কি করতে পারি।
– আমাকে কথা দে, তুই অপর্নাকে বিয়ে করবি। মেয়েটা চলে যেতে চেয়েছিল। আমি যেতে দিইনি। বলেছি আমাকে কিছুদিন সময় দাও।
– কী বলছো বাবা। তুমি কি একবারও বৌদির কথাটা ভেবেছো। তার মতামত নিয়েছো। আমি নিজেও অনেকবার ভেবেছি। বৌদির ব্যাপারটা নিয়ে তোমার সাথে কথা বলবো। আমি কোনদিন তোমার অবাধ্য হইনি, আজও হবো না।
– গর্বে আমার বুকটা ভরে গেলোরে। আমি মরে গেলেও আর কোন দুঃখ থাকবে না। আমি আজই অপর্নার সাথে কথা বলব।
ধীরে ধীরে কিছুটা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পেরেছে অপর্ণা। তার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান এই অবিনাশ চ্যাটার্জীর। বিশাল পাহাড়ের মত যার হৃদয়। যখন যেভাবে প্রয়োজন ছায়ার মত অপর্নার পেছনে দাড়িয়েছে। মনটাকে স্বাভাবিক করার জন্য এখানে ওখানে বেড়াতে নিয়ে গেছে। সান্ত¦না, সাহচর্য্য, সহমর্মিতা সব উজাড় করে দিয়েছে। দিয়েছে সন্তানের মত নিখাদ ভালোবাসা। মা বাবার অভাববোধ করতেও দেয়নি। কতবার কতভাবে বুঝিয়েছে তুমি অপয়া নও। যা হয়েছে তা সবিই অদৃষ্টের লিখন। অপর্নাও আর কখনও এই বুড়ো শ্বশুর শাশুড়িকে ছেড়ে যাবার চিন্তা করেনি। অবিনাশ বাবু অপর্নাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত রেখে কথাটা বলতেই – অপর্ণা মাথা নীচু করলেন। কোন কথা বলতে পারল না।

অপর্ণা অবিনাশ বাবুর সহজ সরল বিশাল বুকটার উপর মাথা রেখে ডুকরে কেঁদে উঠল। চোখ দিয়ে ক’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরল সবুজ মোটা পাঞ্জাবীর উপর। পূজা মন্ডপে দেবীর প্রাণ প্রতিষ্ঠা হচ্ছে। মাইকে ভেসে আসছে শাঁখ, ঘন্টা, উলুধ্বনি আর ঢাকের আওয়াজ। শুভাগত মন্ডপের দিকে পা বাড়ায়।