Site icon Shaili Tv

নাজিরারটেকে শুঁটকি তৈরির ধুম

কক্সবাজারের নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে পুরোদমে চলছে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ। ওই মহালে বঙ্গোপসাগর থেকে সংগ্রহ করা ছোট-বড় ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির মাছ শুকানো হচ্ছে। আর এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
শুঁটকি ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতি মৌসুমে শুধুমাত্র নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে মাছের গুঁড়াসহ ৫০ থেকে ৬০ হাজার টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হয়, যার বাজারমূল্য প্রায় দুইশ কোটি টাকা। উৎপাদিত এসব শুঁটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করা হচ্ছে বিদেশেও। খবর বাংলানিউজের।
কক্সবাজার শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে বঙ্গোপসাগরের পাশ ঘেঁষে প্রায় ১শ একর বালুচরজুড়ে গড়ে তোলা হয়েছে নাজিরাররটেক শুঁটকি মহাল। শুধুমাত্র সূর্যের তাপে বিভিন্ন ধরনের মাছ শুকানো হয়। তবে, উদ্বেগের বিষয়, পোকামাকড় থেকে রক্ষা এবং স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য এসব শুঁটকিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কীটনাশক, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু নাজিরারটেক নয়, প্রতি বছরের মতো শীত মৌসুমের শুরু থেকে মহেশখালীর সোনাদিয়া দ্বীপ, টেকনাফের শাহপরীরদ্বীপ, সেন্টমার্টিন, কুতুবদিয়াসহ জেলার উপকূলীয় বিভিন্ন শুঁটকি মহালে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। সাগরের বেড়িবাঁধ এবং বিশেষ উপায়ে তৈরি বাঁশের মাচার ওপর পাতলা করে বিছিয়ে সূর্যের তাপে কাচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকিতে পরিণত করা হয়।
সমপ্রতি নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে গেলে দেখা যায়, প্রতিটি শুঁটকি মহালে শ্রমিকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাছ পরিষ্কার করছেন, কেউ মাচায় তুলছেন। কথা বলারও ফুসরত নেই তাদের। শুঁটকি শ্রমিক আলম জানান, নভেম্বর থেকে এখানে শুঁটকি উৎপাদন শুরু হয়েছে। এখন পুরোদমে উৎপাদন চলছে।
শুঁটকি মহালের ব্যবসায়ী মো. শহিদুল্লাহ জানান, শীত মৌসুম শুরুর আগে থেকে নাজিরারটেক শুঁটকি মহালে এটির উৎপাদন শুরু হয়েছে। তবে, গত বছর ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বিরূপ আবহাওয়া থাকায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন আবার পুরোদমে শুরু হয়েছে। এ বছরও রূপচাদা, ছুরি, কোরাল, সুরমা, লইট্যা পোপা, টেকচাঁদা, হাঙ্গর, ফাইস্যা, নাইল্যামাছসহ ২০-২৫ প্রজাতির শুঁটকি এ মহালে উৎপাদন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বর্ষাকাল ছাড়া বছরের নয় মাস এখানে শুঁটকি উৎপাদন চলে। তবে, গত কিছুদিন সাগরে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকায় উৎপাদনে একটু ভাটা পড়েছে।
নাজিরারটেক শুঁটকি ব্যবসায়ী বহুমুখী সমবায় সমিতির সভাপতি মো. আতিক উল্লাহ জানান, প্রায় ১শ একর এলাকাজুড়ে গড়ে ওঠা এ শুঁটকি মহালে রয়েছে ছোট-বড় অর্ধশতাধিক আড়ত। দেশের সবচেয়ে বড় শুঁটকি মহাল হলো নাজিরারটেক। এখানে ব্যবসায়ীও আছেন প্রায় দুই হাজার। এ মহাল থেকে সব মিলে প্রতিদিন প্রায় দুইশ টন বিভিন্ন জাতের শুঁটকি উৎপাদন করা হচ্ছে। শুঁটকি উৎপাদন কাজে নিয়োজিত আছেন প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক।
তিনি বলেন, এখান থেকে প্রতি বছর সরকারকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব দেওয়া হলেও শুঁটকি মহালে সুযোগ-সুবিধা তেমন নেই বললেই চলে। বিশেষ করে অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে শুঁটকির উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়।
স্থানীয় ব্যবসায়ী মো. লোকমান হোসেন জানান, কক্সবাজারের আবহাওয়া শুঁটকির শুকানোর জন্য খুবই উপযোগী। লবণাক্ত আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর চট্টগ্রাম থেকে বিপুল পরিমাণ কাঁচা মাছ শুকানোর জন্য এই মহালে আনা হয়, এবারও আনা হয়েছে। উৎপাদনও খুব ভালো হচ্ছে।

Exit mobile version