সিলোপিনো মোড়ানো অতি যত্নে রাখা নীল শাড়িটা। গভীর রাতে আমি একমনে তাকিয়ে আছি শাড়িটার দিকে। ইচ্ছে হচ্ছে মোমবাতির আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলি। আমার ভেতরের আগুনও একসময়ে ছাই হয়ে যাবে। কিন্তু পারছি না কেন? তবে কি ঘৃণার বিপরীতে ভালোবাসা থাকে। জানি না। কিন্তু এই শাড়িকে ঘিরে টুকরো টুকরো মধুর স্মৃতি বাতাসে ভেসে আসে।
গ্রামের একজন কৃষকের মেয়ে আমি। স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করার পরে বাবা বিয়েই ঠিক করে ফেলেছেন। শহরে থাকা ব্যবসায়ী চাচা আমাকে উদ্ধার করলেন।
শহরে চাচার বাসায়। বেশ ভালো কলেজে ভর্তি হলাম। স্কুলে থাকা অবস্থায় গান ও আবৃত্তির চর্চা ছিলো। কলেজে এসেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে।
সেদিন-তেমনি একট অনুষ্ঠান থেকে বের হতেই এক সুদর্শন তরুণ। ‘বেশ মিষ্টি আপনার গলা’ কিছুটা দ্বিধা, কিছুটা লজ্জায় চলে এলাম।
এর মাসখানেক পরে কেমন কেমন করে ভাব হয়ে গেল। প্রথমে মোবাইলে রিকুয়েষ্ট। অতঃপর মেসেজে কবিতার পর কবিতা। এটাই হয়তো নিয়তি।
এক বিকেলে কফি শপে। ফয়সালের কথার ফুলঝুরিতে মুগ্ধ আমি। এভাবে দুই কি তিনবার। এক দুপুরে জোর করে অভিজাত এলাকার চাইনিজ রেস্তোরাঁয়। গ্রামের মেয়ে আমি দেখছি সব বিভোর হয়ে। খাবার এলে ও হঠাৎ ফ্রাইড চিকেনের একটা অংশ আমার মুখের ভেতরে। হতভম্ব আমি। তবে আমার চোখ দুটো জলে টলমল। এতো আদর তো পাইনি। ও একটু অবাক হয়ে আবারও আড্ডায়।
আরেক বিকেলে মিমি সুপার মার্কেটে। উপহার কিনবে আমার জন্য। তো ঐদিনেই এই নীল শাড়ি। বাসায় ফিরে সযত্নে লুকিয়ে রাখি।
আরও কয়েক মাসে আমরা ঘুরেছি এদিক ওদিক।
একদিন বললো–মলি, এক মাসের জন্য আমেরিকার যেতে হচ্ছে। বাবার আদেশ। তবে নিয়মিত কথা হবে। কথা হচ্ছে মেসেজে বা এ্যাপসে। এরপর!
একাধারে দুই মাস কোনো কথা নেই। আমার মেসেজের জবাবও নেই। অতঃপর এক বন্ধুর কাছে শুনি-ও ফিরেছে। অপেক্ষায় আমি।
সে রাতেও এ্যাপে। কেমন আছো বা ছিলাম ইত্যাদি ইত্যাদি। আমি গভীর অভিমানে কোনো অভিযোগ ছাড়াই জবাব দিচ্ছি।
এবারে বললো- ‘তোমার অনুমতি চাই’। বুকে এক অদৃশ্য কাঁপন। কিসের! কিসের! তারপর!! ‘আমি বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছি’।
ভেতরের সব হাহাকার গোপন করে বলি- ‘অভিনন্দন ও শুভকামনা’। তখন নির্লজ্জের মতো বলে -‘বিয়েতে আসবে তো’।
মোবাইলের লাইন অফ করে দেই।
অঝোরে কাঁদছি আমি। টুকরো টুকরো মধুর স্মৃতিগুলো বৃষ্টির ফোঁটার মতো টুপ টুপ পড়ছে মনের মাঝে!
কেন এমন করলো সে! জবাব মিলে না। ‘কেন এ নিঠুর খেলা খেলিলে আমার সনে’! একসময়ে থিতু হই। ভাবি! লেখাপড়া ছাড়বো না। যেভাবেই হোক অনেক বড়ো হতে হবে আমাকে। একদিন যেন ওর চোখের সামনে গাড়ি হাঁকিয়ে দেখাতে পারি–এক প্রতারকের জন্য জীবন আমার থেমে থাকে নি।