সুমন, রিমন, শাওন, শুভ ও পলাশ খুবই ঘনিষ্ঠ বন্ধু ।তারা একই স্কুল থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হয় ভিন্ন ভিন্ন কলেজে ।ভিন্ন কলেজে হলেও বন্ধুত্ব একটুও কমেনি তাদের ।অত্যাধুনিক প্রযুক্তির কারণে শুধু দেশ না পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে একে অপরের সাথে যোগাযোগ সহজ হয়েছে ।ভিডিও কলে একে অপরকে দেখে দেখে কথা বলা দূরত্বের জ্বালা অনেকাংশে কমে গিয়েছে ।পাঁচ বন্ধুর প্রতিদিন দেখা না হলেও কথা হয় প্রতিদিন দু’চার বার ।পাঁচ বন্ধুই থাকে রাজধানী ঢাকা ।পাঁচ বন্ধুর অনেক দিনের ইচ্ছে বছরের শেষ দিন এবং নতুন বছরের প্রথম দিন এক সাথে হাসি আনন্দে উদযাপন করবে ।পাঁচ বন্ধুর কেউই পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার দেখার সৌভাগ্য হয়নি ।তাই তাদের ইচ্ছে ৩১ ডিসেম্বর সবাই একসাথে কক্সবাজার সমুদ্রের সান্নিধ্যে অনেক মজা করে পালন করবে এবং তারপর নতুন বছরের প্রথম দিন ১ জানুয়ারি সেন্টমার্টিনের সৌন্দর্য উপভোগ করবে ।চার/পাঁচ মাস আগে থেকেই ভ্রমণ নিয়ে আগাম প্রস্তুতিমূলক কথাবার্তা পাঁচ বন্ধুর মধ্যে চলতে থাকে ।পাঁচ বন্ধুর মধ্যে শাওন বড়লোকের ছেলে ।পাঁচ বন্ধু একসাথে হলে বেশির ভাগ সময় খাওয়ার বিল শাওন দিয়ে দেয় ।শাওন বড়লোকের ছেলে হলেও একটুও অহংকার নেই বললেই চলে ।শাওনের বাবা স্বনাম ধন্য ব্যবসায়ী , স্বভাবে খুবই ভদ্র এবং পরোপকারী একজন মানুষ ।শাওনের বন্ধুরা সবসময় শাওনকে বলে ,তোর বাবার মতো মানুষ হয় না । শুনেছি অনেক বড় লোক আছে যারা ছেলের বন্ধু তো দূরে থাক নিজের ছেলেমেয়েদেরও ঠিক মতো সময় দেয় না ।
আমরা যখনই তোর বাসায় যাই তোর বাবার সাথে দেখা হলেই আমাদের পড়ালেখার খোঁজ খবর তো নেয়ই আবার আমাদের পরিবারের খবর নিতেও কখনও ভুলে না ।আর আন্টি তো অসাধারণ একজন মানুষ, অত্যন্ত মায়াবী ।শাওন বন্ধুদের বলে ,তোরা আমার অনেক ভালো বন্ধু ।আমাদের বন্ধুত্ব এভাবেই আজীবন সুন্দরে থাকুক এটাই সৃষ্টিকর্তার কাছে কামনা ।আস্তে আস্তে বেড়াতে যাওয়ার সময় কাছে চলে আসছে , হোটেল বুকিং দিতে হবে ।শাওন বন্ধুদের বললো, তোরা হোটেল বুকিং নিয়ে চিন্তা করিস না আমি বাবাকে বলে ঠিক করে নিবো ।ছোট বেলা থেকেই পাঁচ জনের বন্ধুত্ব, তাই পাঁচ পরিবারের সবাই সবাইকে ভালো করেই চেনে।ছেলেরা একা একা যাবে এ চিন্তা করে অভিভাবকরা একটু ভয় পাচ্ছে কিন্তু ছেলেদের এতদিনের ইচ্ছেও না করতে পারছে না ।শাওন হোটেল বুকিং নিয়ে বাবার সাথে কথা বললো ।শাওনের বাবা শাওনকে বললো আমি তোমাদের সাথে সব চেনে জানে ও রকম একজন গাইড দেবো, সে তোমাদের খেয়াল রাখবে অন্যথায় তোমাদের এভাবে যেতে দিতে রাজি না ।কারণ তোমরা কোনদিন ওই জায়গাগুলোতে যাওনি আর সময়ও এখন অনেক খারাপ । শাওন কথাগুলো বন্ধুদের জানালে বন্ধুরা রাজি হয় এবং অভিভাবকরাও চিন্তামুক্ত হয় ।পাঁচ বন্ধুর মধ্যে পলাশের বাবা বেঁচে নেই । বছর আগে পলাশের বাবা রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়।পলাশের বাবা ছিল একটা বেসরকারী কলেজের শিক্ষক আর পলাশের মা স্কুল শিক্ষিকা ।বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে পলাশ খুব চিন্তিত থাকে পড়ালেখা ঠিক মত শেষ করতে পারবে নাকি। পলাশের ছোট দুই বোন, দুই বোনেই স্কুলে পড়ে। ভাড়া বাসায় থাকে।
অন্য বন্ধুদের বাবা চাকুরী এবং ব্যবসা নিয়ে ভালো আছে ।পলাশের অবস্থাও ভালো ছিল, হঠাৎ বাবা মারা যাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে গেল ।ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিন আসা-যাওয়া, থাকা ও খাওয়া অনেক খরচের ব্যাপার। পলাশ কিভাবে এত টাকা মায়ের কাছে চাইবে তা ভেবে অস্থির ।পাঁচ বন্ধুর ভিডিও কলে সবাই বুঝতে পারলো পলাশের একটু মন খারাপ ।কি হয়েছে জানতে চাইলে পলাশ বললো তেমন কিছু না কত টাকা একেক জনের লাগবে তা নিয়ে ভাবছি, মায়ের কাছে কিভাবে চাইবো এ আরকি ।পলাশের কথা শেষ হতেই শাওন বললো, হোটেল ভাড়া বাবা দিচ্ছে আর ওটা টেনশন নেই, আর গাড়িভাড়া আর খাওয়া আমরা সবাই মিলে ভাগ করে দিবো ।শাওন বন্ধুদের বলে, চল আমরা সবাই পলাশের টাকাটা ভাগাভাগি করে দিয়ে দিই , সাথে সাথেই অন্য বন্ধুরা সবায় রাজী হয়ে গেলো ।পলাশ আপত্তি করলো এ কিভাবে হয় তোদের উপর বোঝা হয়ে বেড়াতো যাবো! এটা আমার মাও মানবে না।বন্ধুরা পলাশকে বলল, আন্টিকে আমরা বুঝিয়ে বলবো।পলাশকে বন্ধুরা বললো তুই টাকা যা সম্ভব নিস, তা দিয়ে ছোট দুই বোন এবং আন্টির জন্য গিফট আনতে পারবি।বন্ধুদের এতো ভালোবাসা দেখে পলাশের দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে গেলো। বন্ধুরা পলাশকে নানান দুষ্টুমি কথা বলে হাসিয়ে দিলো। বন্ধুদেরকে পলাশ বললো, আমি তো তোমাদের কথায় রাজি হয়েছি এবার আমার কথা তোমাদের রাখতে হবে।দুই জায়গাতেই আমরা একই রকম টি শার্ট পরবো, আর টি শার্ট গুলো আমার পক্ষ থেকে ।বন্ধুরা সবাই পলাশের আবদারে রাজী হলো।পাঁচ বন্ধু মিলে টি শার্টের কালার ঠিক করলো, একদিন পরবে সাদা আর একদিন পরবে নীল ।টি শার্টের পেছনে লেখা থাকবে “বন্ধুত্ব রবে চিরদিন”। পলাশ বললো আমার এক আত্মীয় আছে এ সবের কাজ করে উনাকে অর্ডার করে দিবো, সময় আর বেশি দিন বাকী নেই।অবশেষে পূর্ণ হতে চলেছে পাঁচ বন্ধুর মনের আশা।পাঁচ বন্ধুর অভিভাকদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক, সবাই সবাইকে ভালো ভাবেই চেনে। সন্তানেরা প্রথম বাবা মা ছাড়া এতদূরে যাবে এ নিয়ে সবার মনে টেনশনের শেষ নেই।শাওনের বাবা একজন গাইড দিচ্ছেন তবুও সন্তানদের জন্য বাবা মায়ের মন আনচান করে।কক্সবাজার রওনা দেওয়ার আগের রাতে শাওনের বাবা মা শাওনের বন্ধুদের এবং তাদের বাবা মা কে দাওয়াত দেন ।উদ্দেশ্য সবাই একসাথে হয়ে ছেলেদের বুঝিয়ে বলবে যেন সবাই খুব সাবধানে থাকে, অতিরিক্ত আবেগ উত্তেজনায় যেন কোন বিপদ ডেকে না আনে আর সাথে যাওয়া গাইডের কথা যেন মান্য করে। সবাই আসলো শাওনের বাসায়, কথা হলো আর সাথে অনেক মজার মজার খাওয়া দাওয়া হলো।বিদায় নিতে নিতে একজন আরেকজনকে বললো, আগামীকাল রাত দশটায় বাস, তাহলে কালকে আমাদের দেখা হচ্ছে। অবশেষে ছেলেদের ষ্টেশনে গিয়ে উঠায় দেওয়ার সেই মহেন্দ্রক্ষণ এলো, সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে অভিভাবকরা ছেলেদের উঠিয়ে দিলো গাড়িতে, গাইডকে সবার বাবা মা অনুরোধ করলো যেন অনেক খেয়াল রাখে ছেলেদের আর ছেলেদের বললো গাইডের কথা মেনে চলতে ।ছেলেদের গাড়ি চলল ঢাকা থেকে কক্সবাজারের উদ্দেশ্যে ।বাবা-মায়ের প্রার্থনা ছেলেরা যেন সবাই ফিরে আসে ভালোয় ভালোয়, সুস্থ ও সুন্দরে ।অবশেষে বাবা মায়ের প্রার্থনা এবং ছেলেরা বড়দের কথা মান্য করায় মহান সৃষ্টিকর্তা সবাইকে বাবা মায়ের কাছে হাসি আনন্দে ফিরে আনলো ।