আমি যেন কালবৈশাখী ঝড়ে ডানাভাঙা এক পাখি
বেদনাকে সাথী করে নীলিমায় মেলেছি ডানা,
জীবিকার সন্ধানে সারাদিনমান নিরন্তর সংগ্রামে
কায়-ক্লেশে শুধু বেঁচে থাকা নগরের ব্যস্ত জীবন যাত্রায়
নীরবে নিঃশব্দে।
শত কোলাহলের মাঝেও মনে হয়, আমি বড়ই একা, বড়ই অসহায়।
প্রাত্যহিক নগর জীবন ভীষণ একঘেয়ে ও ক্লান্তিকর,
স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের মতো ঘুম ভাঙে প্রতি ভোরে;
রাতের দুঃখ জাগানিয়া কিংবা ভোরের ঘুম ভাঙানিয়া কোন পাখির কলকণ্ঠ শুনি না এখন এই নিরানন্দ নগরে।
আমার কেবল শুনতে ইচ্ছে করে
কৃষাণের মধুকন্ঠ থেকে গান,
রাখালিয়ার বাঁশরি সুর,
চৈত্রের দুপুরে ঘু-ঘু পাখির ডাক
আর ফিরে যেতে ইচ্ছে করে সেই দুরন্ত কৈশোরে।
পড়ন্ত বিকালে বাঁশ বাগানে পাখপাখালির
কূজনে শিরায় শিরায় যখন ধরতো কাঁপন;
অলস মধ্যাহ্নে কিংবা ঘুম পালানো নিশীথে
প্রবল ইচ্ছে হয় কৈশোরে ফিরে যেতে।
ক্যামেরার রিলের মতো শুধু ছবির পর ছবি
একের পর এক ভেসে ওঠে হৃদয় মানসপটে।
সেই চড়ুইভাতির মধুর স্বাদ এখনো জিভে রয়েছে লেগে!
কলাপাতায় খাবার নিয়ি সে-কী কাড়াকাড়ি পাড়ার ছেলেরা মিলে!
যেন বর্তমান চায়নিজ রেস্তোরাঁর দামী খাবার অতি তুচ্ছ ওই খাবারের কাছে।
এখনো চোখে ভাসে সেইসব অম্লান স্মৃতিগুলো,
স্কুল পালিয়ে বটের তলার শীতল ছায়ায়
ক’জন মিলে একমনে মাটির পুতুল তৈরীতে ব্যস্ত,
পিছন থেকে রাখাল স্যারকে আসতে দেখে
যে যেদিক পারি ভোঁ দৌড় ধান ক্ষেতের মধ্যদিয়ে,
কেউ বেতের ঝোপে লুকাতে গিয়ে কাঁটা-লতাগুল্মের আঘাত পেয়ে কান্না।
এখন মাঝ বেলায় ওসব ভেবে মনে শিহরণ জাগে।
কিন্তু সোডিয়াম বাতির আলোয় ভাসা এই হলুদ নগর আমার আর লাগে না ভালো।
সবকিছু ছেড়েছুঁড়ে ফিরে যেতে ইচ্ছে করে
শশা-ঝিঙা ক্ষেতের মাচায় বাঁধা ছোট্ট টং-এ,
যেথায় বসে দাদুর সাথে পাখি তাড়াতাম সারাদিনমান।