আজ মশাদের এলাকায় মাইকিং হচ্ছে। ঝোপে,ঝাড়ে, বনে,জঙ্গলে, নালা, নর্দমায় মশারা যেখানেই থাকো না কেন আজ বিকেলে শালবনের জঙ্গলে মিটিং আছে। সবাইকে উপস্থিত থাকার জন্য আহবান করা হচ্ছে। এটা শোনা মাত্রই ঝাঁকে ঝাঁকে মশা দল বেঁধে কানাকানি করতে লাগল। কি ব্যাপার? হঠাৎ সবাইকে কেন ডাকল? আবার কোন বিপদ হলো না তো? ওদের একত্রিত আওয়াজে মনে হচ্ছে যেন সেখানে সেতার বাজছে।
সবাই আজ মিটিংএ এসে জড়ো হলো।
লক্ষ লক্ষ মশার ফিসফিসানিতে বুড়ো মশাদের একজন বিরক্ত হয়ে বলল, আঃ তোমরা চুপ করে বসো। কোন আওয়াজ করবে না। শুধু মন দিয়ে শুনবে। এখানে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ মশা আছে। তারা তোমাদের আজ নতুন কৌশল শেখাবে।
একজন মশা বলল, কি কৌশল? তখন বুড়ো মশা বলল, যাতে মানুষের রক্ত খাওয়ার সময় বেশি মশার মৃত্যু না হয়। সবাই চুপ হয়ে গেল।
বিশেষজ্ঞ মশাদের একজন বলল, শোন, মশা সম্প্রদায়। আজ আমরা একটা বিশেষ উপায় বের করেছি। এখানে সামনে কয়েকটা বিশেষ ধরনের পাত্র দেখতে পাচ্ছ? সবাই সমস্বরে বলল, হ্যাঁ। সে আবার বলতে শুরু করল, আমরা ঠিক করেছি শুধু রাতে মানুষ যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখনই রক্ত খেতে যাব। আর দিনের বেলা বা অন্য সময় মানুষ যখন জেগে থাকে তখন যাব না।
আরেকজন মশা হুল বের করে বলল, তাহলে সারাদিন আমরা খাব কি? তখন বিশেষজ্ঞ মশাদের আরেকজন বলল, এইবার তাহলে তোমাদের কৌশলটা বলি।
আমরা জানি, মৌমাছিরা মধু সংগ্রহ করে সঞ্চয় করে পরে খাওয়ার জন্য। আমরা মশারাও রক্ত সংগ্রহ করে এসব পাত্রে রাখবো। যাতে যখন প্রয়োজন হয় তখন খেতে পারবো। এগুলো সংরক্ষণের দায়িত্বে কিছু মশা নিযুক্ত থাকবে।
মশারা সব গুনগুন করে গুঞ্জন শুরু করে দিল। তখন বিশেষজ্ঞ মশা বলল,থাম,থাম। আসল কথাটা মন দিয়ে শোন।
মানুষ যখন ঘুমাবে তখন তোমরা সবার ঘরে ঘরে এক এক গ্রুপে ভাগ হয়ে যাবে। এখন অনেক প্রযুক্তি বের করেছে মানুষ মশা মারার জন্য। কারেন্টের ব্যাট,কয়েল,ইলেকট্রিক ধোঁয়া আরো অনেক কিছু। তাই খুব সাবধান। একটা ছোট মশা গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে এসে বলল, কিন্তু মানুষ তো মশারি টাঙ্গিয়ে ঘুমায়। তাহলে কিভাবে রক্ত খাব?
বিশেষজ্ঞ মশা ওর দিকে তাকিয়ে বলল, তাই তো বলছি, মানুষ জেগে থাকলে যাওয়া যাবে না। ঘুমিয়ে থাকলে কোন না কোন সময় মশারি থেকে বের হবে। তোমরা প্রথমে ঘরের কোণে লুকিয়ে থাকবে। এরপর সুযোগ বুঝে মশারির ভেতর ঢুকে রক্ত খাবে। তারপরও হয়তো কিছু না কিছু মারা যাবে। কিন্তু যারা বেঁচে ফিরে আসবে তারা অল্প অল্প রক্ত এসব পাত্রে জমা করবে।
একটা মশা বলল, কিন্তু আমরা তো গান ছাড়া রক্ত পান করতে পারি না। আর গান শুনে মানুষদের ঘুম ভাঙ্গে। তারপর আমাদের মারার জন্য পাগল হয়ে যায়।
বুড়ো মশা আদেশের সুরে বলল, দিন পাল্টে গেছে। সব এখন পাল্টাতে হবে। এখন চুপিসারে রক্ত খেয়ে যখন নিজেদের নিরাপদ জায়গায় এসে পড়বে তখনই দল বেঁধে গান করতে করতে আসবে। বুঝেছ সবাই।
এবার বিশেষজ্ঞ মশা বলল, এতক্ষণ ধরে যা বললাম তা মেনে যদি সবাই কাজ করো, তাহলে আমাদের এভাবে আর ঝাঁকে ঝাঁকে মরতে হবে না। আজ থেকে তোমরা কাজে লেগে পড়। মিটিং শেষে সবাই যার যার জায়গায় ফিরে গেল।
এরপর সবাই নতুন কৌশলে মানুষদের রক্ত খাওয়া শুরু করলো। ওদের মৃত্যুর হারও অনেক কমলো। এদিকে রক্ত সংগ্রহ করে রাখায় ওখান থেকে বৃদ্ধরা, আহতরা আর বাচ্চারাও এখন ক্ষুধা মেটাতে পারছে। প্রথম প্রথম একটু কষ্ট হলেও এখন সবাই বুঝে গেছে কষ্ট না করলে কোন কিছু ভালো পাওয়া যায় না। দিনের বেলায় সবাই রাতে সংগ্রহ করা রক্ত থেকে সামান্য খেয়ে বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায়। হয়তো আগের মত পেট ভরে খেতে পারে না। কিন্তু তারপরও ওরা খুব খুশি। মনের সুখে গান করে।
মানুষও এখন অবাক হয়ে গেলো। ওরা ভাবছে হয়ত মশা কমে গেছে। কিন্তু রাতের অন্ধকারে মশা যে ওদের রক্ত খেয়ে চলে যায় তারা টেরও পায় না। মশারা মানুষদের অসহায় অবস্থা দেখে খুব মজা পায়।