কয়েকদিন ধরে লতার মন ভালো নেই, কষ্টে হঠাৎ হঠাৎ বুক ভারী হয়ে আসে।এক ছেলে, এক মেয়ে আর স্বামী নিয়ে লতার ছোটো সংসার।খুব কম বয়সে লতার বিয়ে হয়। লতা দেখতে খুব সুন্দরী এবং বিনয়ী।বেড়াতে খুব পছন্দ করে, লতার স্বামীও ভ্রমণ বিলাসী।মাঝেমাঝে দুই সন্তানকে বাসায় মায়ের কাছে রেখে বিভিন্ন জায়গা বেড়ানোর জন্য বের হয়ে যায় । লতার ছেলেমেয়ের খুব পোষা প্রাণীর শখ ।একবার লতা আর লতার স্বামী এক সপ্তাহের জন্য দেশের বাইরে বেড়াতে গেলো ছেলেমেয়েকে মায়ের কাছে রেখে ।এক সপ্তাহ পর দেশে ফিরে বাসায় এসে দেখে লতার ছেলে একটি ছোট কুকুর ছানা নিয়ে এসেছে। বাবা মার কাছে আবদার করে কুকুর ছানাটি সে বাসায় রাখবে এবং লালন পালন করবে ।ছেলের কথায় লতা আর লতার স্বামী বাঁধা দিলো না।কুকুর ছানাটি লতার বাসায় সবার যত্নে বড় হতে লাগলো ।লতার ছেলে কুকুর ছানাটির নাম দিলো স্কুভী ।লতার বাসার সিঁড়িঘরে ছিল স্কুভীর বিশ্রামের যায়গা ।রাতে স্কুভী সিঁড়িঘরে ঘুমাতো । আস্তে আস্তে স্কুভী বাসার সবার কাছে অনেক প্রিয় হয়ে উঠে। অপরিচিত কেউ বাসার পাশে দিয়ে গেলেই স্কুভী জোরে জোরে করে ডাক জিতে থাকে, এ যেন লতার বাসার অনেক বড় পাহারাদাতা।বছর যেতে না যেতেই স্কুভী বড় হয়ে ওঠে। বাসার মানুষের সাথে সাথে লতার নিকটাত্মীয় ও পরিচিতজনদের কাছেও স্কুভী মায়াবী হয়ে ওঠে । পরিচিত দেখলে স্কুভী গা ঘেঁষে গন্ধ নিতে চায় ।কথায় আছে পালন করা কিছুতে মায়া বেশি, লতা এবং লতার স্বামী সন্তানদেরও একই অবস্থা । দিন গড়ায় মাস গড়ায় লতার বাসায় স্কুভীর প্রায় ১৩/১৪ বছর হয়ে গেলো।মাঝেমধ্যে স্কুভীর নানান অসুখ হয়। যে কোন রকম অসুস্থ হলেই লতার স্বামী ডাক্তার ডেকে এনে স্কুভীর চিকিৎসা করান।বছর দু এক ধরে প্রায় সময় এটা ওটা অসুখ লেগেই থাকে। স্কুভী মানুষের মতো এন্টিব্যায়োটিক খায় , ব্যথার ঔষধ খায়, ক্ষত স্থানে মলম লাগায়। এসব সেবা লতা এবং বাসার সবায় স্কুভীকে দেয়,স্কুভীর জীবন যাপন যেন অতি যত্নে চলে মায়ায় ও ভালোবাসায়।
লতার শ্বশুরের দিনের বাসা একটু পুরানো হয়ে যাওয়ায় এবং বৃষ্টি হলেই জোয়ারের পানি চলে আসার কারণে লতা এবং লতার ছেলেমেয়ের ইচ্ছে বাসাটার কাজ করাবে তাই কয়েক মাসের জন্য ভাড়া বাসায় থাকবে ।লতার স্বামী কিছুতেই ভাড়া বাসায় যেতে রাজি না , আবার ভাবে বাসার কাজ করালে তো না গিয়েও উপায় নাই। অনেক ভাবনা চিন্তা ও জল্পনা কল্পনার পর লতার স্বামী রাজী হলো ভাড়া বাসায় যেতে । কিন্তু স্কুভীকে নেয়া যাবে না, ভাড়া বাসার মালিকের কুকুর পোষা পছন্দ না। লতার নতুন বাসা আগের বাসার কাছাকাছি তাই লতা এবং স্বামী প্রতিদিন এসে পুরানো বাসা দেখে যায় এবং স্কুভীকে সময়মত নিজেরা এবং লোক দিয়ে খাবার দিয়ে যায়।এ যেন লতা আর লতার পরিবারের সবার স্কুভীর প্রতি অন্য রকম এক মায়ার টান ।লতারা ভাড়া বাসায় যাওয়ার পর থেকে স্কুভীর অসুস্থতা অনেক বেড়ে যায়, কোন ঔষধে যেন কাজই হচ্ছে না । স্কুভীর জন্য লতা এবং লতার স্বামী সন্তানদের মন খারাপ লাগে, কিন্তু কিছুই করার থাকে না।লতা ভাড়া বাসায় যাওয়ার প্রায় পাঁচ মাস পর একদিন সকালে লতার স্বামী পুরানো বাসায় এসে দেখে স্কুভী বেঁচে নেই । শরীরটা নিস্তেজ হয়ে পরে আছে। মূহূর্তেই লতার স্বামীর মনটা ভারী হয়ে গেল। লতাকে জানালো, লতা ও লতার সন্তানেরা এসে দেখলো শেষবারের মতো। তারপর স্কুভীকে বাসার মেইন গেইটের বাইরে একপাশে গর্ত করে মাটি চাপা দিয়ে দেয়।এ যেন লতা ও লতার স্বামী সন্তানদের আপনজন হারানোর কষ্ট ।মানুষ সৃষ্টির সেরা ।সেরা বলেই মানুষ মানুষকে অতি আপন করতে পারে আর ভালোবাসতে পারে, ভালোবাসতে পারে পশুপাখি এবং পৃথিবীর যাবতীয় সবকিছু ।লতা হয়ত আবার কোন কুকুর ছানা লালন পালন করবে, যত্ন নিবে কিন্তু স্কুভী তো আর হবে না। পৃথিবীতে কারো মায়ার জায়গা কেউ নিতে পারে না ।লতা ও লতার স্বামী সন্তানরা সেই ভেবে চোখের জল ফেলে।পৃথিবীতে মানুষের ভালোবাসার সাথে কোন কিছুর তুলনা হয় না, সেটা মানুষ হোক না হয় পালিত পশু পাখি হোক।