আমি আছি স্বর্গে জেনো, স্বর্গে মানে গ্রামে
যেখানে ঠিক সবুজ হয়ে, নীল হয়ে মেঘ নামে।
শাপলা ফোটে পুকুর- ডোবায় এই বাঁকে, ওই বাঁকে
আম, কাঁঠাল আর জাম-জারুলের গন্ধ আসে নাকে।
একটু দূরে সবুজ ছবি; বিল ভরা ধান-ঘাসে,
তার পাশে এক চানখালিতে দাঁড়কানা মাছ হাসে।
রাত আকাশে বেলুন হয়ে মায়াবী চাঁদ ওঠে,
চাঁদকে ঘিরে ওই আকাশে হাজার তারা ফোটে।
তুমি আছো শহরে, তাই তোমার পায়ের নিচে-
শক্ত ইটের কণা, আবার তোমার পিছে পিছে
গোঁ গোঁ করে ট্রাক ছুটে যায়- ছড়িয়ে বিষ- ধোঁয়া
পাও না তুমি আদর, স্নেহ, ভালোবাসার ছোঁয়া।
তোমার চোখে নিয়ন আলো; চাঁদ দেখো কি রাতে?
পুকুর জলে পাবদা পুঁটির ঝাঁক দেখো একসাথে?
দেখতে কি পাও এই আকাশে কী করে মেঘ জমে?
কখন বাড়ে পুকুরে জল কিংবা কখন কমে?
কখন জানো, নিশির শিশির পাতাতে যায় ভরে
খেজুর গাছের নালি বেয়ে কখনই রস ঝরে?
না, দেখো না। দেখো নি বিল, দেখো নি খাল পাশে,
কেমন করে রাখাল ছোটে দেখো নি, উল্লাসে-
পাল দেখো নি, হাল দেখো নি, দেখো নি ধান-চারা
নিশির শিশির দেখো নি তাই, হও নি আত্মহারা।
– দেখেছি ও দেখি আমি রাখাল ছেলের হাসি
আর দেখি তার স্নিগ্ধ হাতে লম্বা মুরল বাঁশি।
তার হাতের ঐ মুরল বাঁশির আকুল করা সুরে
ঠায় দাঁড়িয়ে যায় না থাকা, যাই হারিয়ে দূরে।
যেখানে রোদ-বৃষ্টি নামে, শীত নামে, চাঁদ নামে
আমি আছি ঠিক সেখানে- স্বর্গে মানে গ্রামে।
[আকাশের সীমানায় সূর্যের ঠিকানায় গ্রন্থে প্রকাশিত]