সেই আমি – এতোটা পথ হেঁটে এলাম,
সেই আমি – ভালবাসাগুলো মাড়িয়ে এলাম।
সেই আমি – অহেতুক খিলখিলিয়ে জীবন মাতাতাম,
সেই আমি- মান- অভিমানে কেঁদে ভাসাতাম।
সেই আমি – সুঁতোর নাটাইয়ে ঘুড়ি উড়াতাম,
সেই আমি – দূরন্ত কৈশোরে পুকুরে ঝাঁপাতাম।
সেই আমি – ভীষণ খুশী রঙিন জামায়,
সেই আমি – হঠাৎ পাওয়া মজার খাওয়ায়।
সেই আমি – মায়ের আঁচলে মুখ লুকাতাম,
সেই আমি – অতিথির নাস্তায় ভাগ বসাতাম।
সেই আমি – প্রেমের আহবানে লজ্জায় হারাতাম,
সেই আমি – দুরুদুরু বুকে ভয়ে কাঁপতাম।
সেই আমি- নির্জন দুপুরে বাসর সাজাতাম,
সেই আমি – না বলা কথায় মালা গাঁথতাম।
সেই আমি – স্বপ্নরা খেলতো যৌবনের ছলে,
সেই আমি- স্বপ্নদের হারাতাম চোখের কাজলে।
সেই আ….মি – অনেকটা পথ হেঁটে এলাম,
সেই আ….মি – ফেলে আসা স্মৃতিতে বিভোর হলাম।
অনেকটা পথ হেঁটে এলাম…….
তোমাদেরই ভালবাসায় সিক্ত হলাম।
এ-ই সেই আমি ____
কন্যা থেকে স্ত্রী হলাম, তারপর… তারপর,
তারপর স্ত্রী থেকে মা।
ক্রমে ক্রমে পরাধীনতার হাত বদল হয়ে আমার সকল স্বাধীনতাকে বিসর্জন দিয়ে, এই সেই আমি _
একজন নারী হয়ে উঠলাম।
এ-ই সেই আমি __ একজন নারী ।
আমা থেকেই প্রাণের স্পন্দন,
আমা থেকেই সৃষ্টি হয় জীবন।
আজ এই আমা থেকেই _ এই তোমরা……
যারা আমাকে, আমার নারীসত্তাকে নিয়ে _
ঠাট্টা – তামাশা, হাস্যরস – বিদ্রুপে আসর জমাও ।
এই তোমরা __ তোমরাই
আমার চুলচেরা বিশ্লেষণে সালিসি বৈঠকে বসো,
সময়ের প্রতিটি মুহুূর্ত উৎসর্গকৃত হয়, তোমাদের সন্তুষ্টির জন্য ,
নিজেকে নিঃস্ব করে,
নিজেকে অবহেলা করে!
তারপরে ও……. তারপরে ও তোমরা?
আর নয় _ আর নয় __ এভাবে আর নয়,
পরাধীনতার শৃঙ্খলে।
এই সেই আমি “নারী”। স্বাধীনভাবে বাঁচতে চাই ।
আমাদের স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার চাই ।
নির্ভয়ে.. নিরাপদে… নির্দ্বিধায়….. নিঃসঙ্কোচে ।
নারীর মর্যাদাটুকু নিয়ে, পৃথিবীর বুকে মানুষ হয়ে বাঁচার সম্মানটুকু চাই।
তোমাদেরই ভালবাসায় সিক্ত হতে চাই ।
এই সেই আমি নারী নয়,
একজন মানুষ হয়ে বাঁচার অধিকার চাই ।