আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে
অনেক কাঠখড় পোড়াতে পোড়াতে আমি নারীতে পরিণত হয়েছি,
আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
আমি সেই নারী যার জন্মের পর তার মাকে
গ্রামের বউ ঝিরা অলক্ষ্মী বলে গাল দিয়েছিলো ।

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে
আমি সেই নারী যার জন্মের পর তার বাবা
তার মাকে তালাক দিতে চেয়েছিলো।
আমি সেই নারী যার বয়স বারো হতে না হতেই
বাড়ির চারিদিকে এঁকে দেয়া হয়েছিলো সীমানা প্রাচীর,
বারণ করা হয়েছিলো বিদ্যালয়ে যেতে,
বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো তার গাছে উঠা,
ছি কুতকুত খেলা, পুকুরে সাঁতার কাটা, আরো কত কি?

আমি সেই নারী যার কিনা মা-বাবার মৃত্যুর পর
বাবার বহু স্থাবর সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও বাড়ি বাড়ি কাজ করতে হতো।
ঘনিষ্ঠ স্বজনেরা তাকে বঞ্চিত করেছিলো।
গৃহ কর্তার লোলুপ দৃষ্টি আর তার ছেলের
শিকারি চোখকে ফাঁকি দেয়া একান্ত ভাবে কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছিলো ।

আমি মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে
আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
স্বামীর নির্যাতনের কাছে হার না মেনে
অন্ধকারে বেরিয়ে পড়েছিলাম,
আমি সেই নারী যার একাকী রাস্তার মোড়ে যেতেই
ধর্ষকের কাছে জীবন বাজি রাখতে হয়েছিলো।

আমি সেই নারী, মা-বাবার দ্বিতীয় মেয়ে;
আমি এখন পূর্ণাঙ্গ নারী।
চোখের তারায় অগ্নি স্ফুলিঙ্গ নিয়ে
আজ আমি নারীর অধিকারের কথা বলি।
নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলি,
খোলা বাতাসে নারীর নিঃশ্বাস নেবার কথা বলি,
নারীর চলার পথের আবর্জনা সরিয়ে ফেলার কথা বলি,
আর লোকে আমাকে নারীবাদী আখ্যা দেয়।

নারীবাদ কি? আমি তা জানি না
নারীবাদ কি? আমি তা বুঝি না ,
আমি বুঝি আমার প্রতি যে অন্যায় হয়েছে পৃথিবীর আর কোনো নারীর প্রতি যেনো না হয়।
শুনছেন, আপনারা?
আপনারা আমার পাশে থাকুন,
আমি আপনাদের পাশে থাকতে চাই
কখনো মা হয়ে, কখনো বোন হয়ে
কখনো প্রেয়সী হয়ে,কখনো কন্যা হয়ে।

একবিংশ শতাব্দীর এই ডিজিটাল যুগে
আর যেনো কেউ কেড়ে না নেয় আমার দুরন্ত শৈশব
আর যেনো কেউ কেড়ে না নেয়
আমার যৌবনের সদা লাস্যময়ী মুখ
আর যেনো কখনো স্বামীর একটা
চড়ও না পড়ে আমার তুলতুলে গালে
আর যেনো কোনো হিংস্র ধর্ষকের থাবার নীচে পড়ে
জীবনাশঙ্কায় ছটফট করতে না হয়
অথবা জীবনটা দিতে না হয়।

আসুন, প্ল্যাকার্ড- ফেস্টুন হাতে মিছিল নিয়ে
বেরিয়ে পড়ি,
আমরা নারী পুরুষ একসাথে বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলি
ঘরে বাইরে নারীর জন্য নিরাপদ বেষ্টনী গড়ি ।