ভাবছিলাম এই শার্টটার আড়ালে কার থাকা সম্ভব,
একটা ক্লাব-কলার শার্ট—
অনেকটা আমাদের শৈশবের দিলীপ স্যারের শার্টের কলারের মত।
আর এই যে প্যান্টটা,
আশ্চর্য এমন একটা ক্যাপ্রি প্যান্ট এই স্থানীয় অঞ্চলে!
নির্ঘাৎ ইউরোপ-প্রবাসী কারও পরিধেয়,
অবশ্যই ফ্যাশনসচেতন কেউ একজন যার রেমিট্যান্সে
চলে আমার অর্থের চাকা।
তাই তো সে হতে পারে শ্রমিকও যাকে প্রায়ই দেখি
লিটল ইন্ডিয়ায় মোস্তফা সেন্টারের অদূরেকার খোলা মাঠে বসে
দেশি চিপ্স খায় আর এ্যান্ড্রয়েডের পর্দায় স্কাইপিতে
চুমু খায় তার সদ্যোজাত শিশুটিকে (হয়তোবা স্ত্রীকেও)।
এবং তখনই এক প্রবল ধাঁধার ধাক্কা—
এ কী ধুতি, হাওয়ায় উড়ছে!
নাকি কোনো বিধবার শাড়ি!
আমার ভেতরের মন বলে, ধুতি বর্তমানে পরে দুই ধরনের লোক—
খুব সাহসী এবং খুব নির্বোধ।
আহা আমাদের নির্মল ডাক্তারের কথা মনে পড়লো,
যেদিন আমার দাদি তাঁর হোমোপ্যাথি বড়ি খেয়ে জ্বরমুক্ত হলেন
তার ঠিক তিন দিন পরে খুলি উড়ে গেল নির্মল ডাক্তারের।
আজন্ম ধুতিপরা ডাক্তার পরনের ধুতিটাকে ভাঁজ করে
একটা শাদা লুঙ্গির মত পরেছিলেন,
তাতেও হয় না শেষ রক্ষা।
আশ্চর্য এই বর্ষায় ভেজা-ভেজা দিনে প্রবল হাওয়ায়
বস্ত্ররা উড়ছে উড়ুক না যত খুশি,
উড়ে তো আর চলে যেতে পারছে না;
প্রতিটি কাপড় প্রয়োজনীয় ক্লিপে আটকানো।
অথচ এমন বন্দিত্বের মধ্যেও কী উত্তাল তাদের দাপাদাপি,
বারংবার মনে হতে থাকে এ এক দারুণ মূকাভিনয়ের উন্মুক্ত প্রদর্শনী
এবং প্রতিটি বস্ত্রের মধ্যে চরিত্রেরা বর্তমান
তবে অদৃশ্য।
দেখো, আমি আবারও কোথায় চলে যাচ্ছি,
এই হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজের বিরাট মাঠে
টানাতারের সারিগুলো সুশৃঙ্খল শ্রেণিবদ্ধ।
আর ঠিক তার পাশেই কবরস্থান
যেখানে অসংখ্য মানুষের মধ্যে আমি
আবু তাহের স্যারকেও দেখতে পাই—
জানি, মৃত মানুষকে দেখা যায় না।
আমি তাঁকে জীবিতই দেখি এবং ঐ যে ওখানটায়,
চট্টগ্রাম কলেজের বাংলা বিভাগের জানলা থেকে
“তাহের স্যার একটু দাঁড়ান,
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী’র প্রবন্ধটা আরেকটু বুঝিয়ে দিন”
বলে হেঁকে উঠি সজোর,
সেটা ঠিক তাঁর কবর পর্যন্ত পৌঁছাবে।
চোখের সামনেকার এইসব টানাতার এইসব কাপড়চোপড়
জীবিত ও মৃত মানুষজন নিয়ে কত কিছু ভেবে ফেলি।
সেলাইবিহীন শাদা কাপড় নিয়ে ধুতি ও বিধবার শাড়ির সংশয়ে পড়ি।
কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি যত শাদা বিস্তৃত আর উড়ন্তই হোক
এগুলোর একটিও কাফনের কাপড় নয়—কেননা,
একমাত্র কাফনের কাপড় দ্বিতীয়বার পরা সম্ভব নয়।