নিরব ও সুমি ক্লাসে সবচেয়ে মেধাবী ।স্কুলের শিক্ষকেরা দু’জনকে ভীষণ পছন্দ করে। রাজশাহী শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষার্থী দু’জন। নিরব ও সুমি দু’জন খুব ভালো বন্ধু ।নবম শ্রেণীতে ওঠার পর একদিন সুমি নিরবকে কথা প্রসঙ্গে নিজের ভালো লাগার কথা বলে, সুমির মুখে এমন কথা শুনে নিরব মিষ্টি হাসি দিয়ে সুমিকে বলে, আমি তো অনেক আগে থেকেই তোমাকে বলবো বলবো করেও বলতে পারছিলাম না, তোমাকে আমারও খুব ভালো লাগে ।নিরব একটু শান্ত ও লাজুক প্রকৃতির।নিরবের বাবা ছোটখাটো ব্যবসা করে, মা গৃহিণী।নিরবের ছোট এক বোন।
নিরব মায়ের সাথে খুবই বন্ধুসুলভ।
নিরব মায়ের সাথে মনের সব কথা বলে, স্কুলে কে কি বললো, কি হয়েছে সব।নিরব ও সুমির বাড়ি একই এলাকায়।সুমিকে নিরবের পরিবারের সবায় চিনে।নিরব মায়ের কাছে বলে সুমিকে পছন্দের কথা এবং সুমিও তাকে খুব পছন্দ করে এ কথা।নিরবের কথা শুনে নিরবের মা বলে বাবা তোমরা তো এখনও ছোট, পড়ালেখা করো ভবিৎয্যতে দেখা যাবে।সুমি দেখতে সুন্দরী, পড়ালেখায় ভালো এবং সবসময় হাসিখুশি থাকে সবকিছু মিলে সুমিকে পছন্দ করে না স্কুলে এবং এলাকায় খুব কম মানুষেই আছে। সুমির বাবা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরীজীবী, মা গৃহিণী সুমির বড় এক বোন আর ছোট এক বোন। এইসএসসি পড়া কালীন সময় সুমির বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায় ।আর ছোট বোন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। অন্যদিকে নিরবও মেধাবী ও শান্তশিষ্ট ভদ্র, নিরবকেও স্কুলে এবং এলাকার সবায় পছন্দ করে।দিন যায়, মাস যায় ,বছর যায় অতপর সময় আসে দু’জনের এসএসসি পরীক্ষার। নিরব ও সুমি দু’জনেরই পরীক্ষার প্রস্তুতি অনেক ভালো ।
এসএসসি পরীক্ষা হলো, নিরব ও সুমি দু’জনেই গোল্ডেন জিপিএ পেলো। দুই পরিবার, স্কুলের শিক্ষক, আত্মীয়স্বজন ও এলাকাবাসী সবায় খুব খুশি । আসলো ইন্টার মিডিয়েটে ভর্তির পালা । নিরব ও সুমি দু’জনেরই ইচ্ছে রাজশাহী সরকারী কলেজে পড়বে ।যেমন ইচ্ছে তেমনেই হলো । দু’জনেই সুযোগ পেলো রাজশাহী সরকারী কলেজে পড়ার ।কলেজে দু’জনের পড়ালেখা খুব ভালোই যাচ্ছে ।নিরবের ইচ্ছে এইসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করে ইন্জিনিয়ারিং পড়বে আর সুমির ইচ্ছে ডাক্তারী পড়বে ।এতদিনে দুই পরিবারের সবাই জেনে যায় নিরব ও সুমির সম্পর্কের কথা।একসাথে কলেজ যাওয়া, একসাথে কোচিং সেন্টারে পড়তে যাওয়া সবমিলে শিক্ষক এবং বন্ধুবান্ধব করো কাছে অজানা রইলো না নিরব ও সুমির সম্পর্কের কথা।
পড়ালেখার ব্যাপারে নিরব ও সুমি দুজনেই খুব সিরিয়াস।এইসএসসি পরীক্ষার মাত্র এক সপ্তাহ বাকী, নিরব ও সুমি কোচিং সেন্টারে গেলো প্রয়োজনীয় কাজে এবং একজন আরেকজন থেকে বিদায় নিবে পরীক্ষার আগে আর দুজনের দেখা হবে না তাই।কোচিং সেন্টারে দুজনে কাজ সেরে অনেকক্ষণ কথা বললো, একজন আরেকজনকে বললো যেন অনেক ভালো করে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হয় ।সেদিন দুপুর বেলা সুমির বাসার সবার দাওয়াত ছিল সুমির বড় বোনের বাসায় ।কথা ছিল সুমির বাবা-মা ও বোন সুমির বড় বোনের বাসায় চলে যাবে, সুমির বড় বোনের জামাইকে পাঠাবে কোচিং সেন্টারে সুমিকে নিতে। দুপুর আড়াইটার দিকে সুমির বড় বোনের জামাই আসলো সুমিকে নিতে, সুমি ও সুমির বোনের জামাই নিরবকে বললো তাদের সাথে যেতে কিন্তু নিরব রাজী হলো না। বিদায় নিয়ে নিরব চলে গেলো বাসার দিখে। সুমি বোনের জামাইয়ের সাথে মটর সাইকেলে রওনা দিলো বোনের বাসার উদ্দেশ্যে ।মটর সাইকেল বড় রাস্তা পাড় হতেই দ্রুতগামী ছুটে আসা এক ট্রাক পিষে দিলো মটর সাইকেল এবং মটর সাইকেল আরোহী দুটি প্রাণ। সুমির বোনের বাসায় যাওয়া হলো না , মূহূর্তেই শেষ হয়ে গেলো একটি উজ্জল প্রতিভা। শেষ হয়ে গেলো সুমির বাবা-মা এবং প্রিয়জনদের সব স্বপ্ন। নিরব বাড়ি পৌঁছানোর কিছুক্ষনের মধ্যেই খবর পায় একটা মটর সাইকেল এক্সিডেন্টের ।শুনে নিরবের মন অজানা শঙ্খায় অস্থির হয়ে উঠলো। ছুটে গেলো দেখতে, ততক্ষণে উপস্থিত লোকজন সুমি ও সুমির বোনের জামাইকে হসপিটালে নিয়ে গিয়েছে ।নিরব ছুটে গেলো হসপিটালে, গিয়ে দেখে সুমির বাবা-মা বোনদের আহাজারীতে হসপিটালের বাতাস যেন ভারী হয়ে গেছে । ততক্ষণে নিরবের আর বুঝতে বাকী রইলো না ।নিরবের চোখের পানি নিরবে গড়াতে লাগলো, কথা বলার যেন সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে নিরব । সুমির মা বারবার বেহুঁশ হয়ে যাচ্ছিল ।এমন হৃদয় বিদারক খবর মূহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে শোক নেমে আসলো শহরজুড়ে ।অনেক আত্মীয়স্বজন হসপিটালে এসে সুমির বাবা-মা বোনদের সান্তনা দেয়ার চেষ্টা করে নিজেরাও কান্নায় ভেঙে পড়ে ।সুমির মুখ একবার দেখার জন্য নিরব নিরবে দাঁড়িয়ে চোখের পানি ফেলতে থাকে ।নিরব কিছুতেই মনকে বোঝাতে পারছে না ।এক্সিডেন্টে সুমির সুন্দর চেহারাটা সুন্দরই আছে, ছিটকে পড়ে মাথায় আঘাত পেয়ে সুমি মারা যায় ।শেষ বারের তো সুমির সুন্দর মায়াবী চেহারাটা দেখে নিরব কান্নায় ভেঙে পড়ে ।এমন কষ্টের সময় কে কাকে সান্তনা দিবে! সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ নিলো দেশের একটি উজ্জল নক্ষত্রের ।শোকের অতল সাগরে পরিবার, আপনজন ও প্রিয়জন।
সুমি দাফন হলো। রেখে গেলো প্রিয়জনদের জন্য অজস্র স্মৃতি ।কেউ কারো জন্য মরে যেতে পারে না কিন্তু স্মৃতি মানুষকে কষ্ট দেয়। এমন কষ্ট নিরব মেনেই নিতে পারছে না।এক সপ্তাহ পরে এইসএসসি পরীক্ষা, কিভাবে নিরব পরীক্ষা দিবে যেন মনই মানাতে পারছে না। তবুও জীবন,এগিয়ে তো যেতেই হবে ।নিরবের মা নিরবকে সান্তনা দিতে থাকে।এত কষ্টের মধ্য দিয়ে নিরব পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। রেজাল্ট হলো, গোল্ডেন পাওয়ার মত ছাত্র শুধু এ প্লাস পেলো ।তাতেই নিরবের মা-বাবা খুশি।এদিকে সুমির পরিবারের সাথে নিরবের সবসময় আসা-যাওয়া আছে, কয়েকদিন না দেখলেই সুমির মা নিরবকে ফোন করে ।সুমির মা নিরবকে নিজের ছেলের মতো মনে করে।সুমির মা নিরবকে বলে, তোমাকে দেখলে যেন মনটা কেমন যেন একটু শীতল লাগে তুমি আমাদের ভুলে যেও না বাবা ।সময় গড়াতে গড়াতে নিরব আজ থ্রীপোলি ইন্জিনিয়ারিং শেষ বর্ষে।
পড়ালেখার পাশাপাশি নিরব ছাত্রছাত্রী পড়ায়।একদিন নিরব প্রিয় এক ছাত্রের সাথে কথা প্রসঙ্গে নিজের মনের কথা খুলে বলে, আবেগপ্রবণ হয়ে নিরবের চোখের কোণা জলে ভরে যায়। নিরবের কথা শুনে নিরবের ছাত্রও মূহূর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায়।নিরব বলে বিয়ের কথা চিন্তাই করতে পারি না , সুমির কথা জীবনেও ভুলতে পারবো না,ভীষণ কষ্ট হয়।এ যেন ভীষণ ক্ষত জীবনে, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ।