গেট ঠেলে প্রাঙ্গণে পা রাখতেই মানুষের স্রোত দেখা যাচ্ছে। দখিন দুয়ার খোলা যে বাড়িটার আজ তার পরিবেশ রুদ্ধ। জানালার গ্রীলের ফোঁকর বেয়ে যেন হু হু করে বিলাপের স্বর ভেসে আসছে। বাড়ির নিকটবর্তী রান্নাঘরে ও মহিলাদের প্রচন্ড ভীড় জমে গেছে।
ভীত ছোট্ট অন্তরা একপাশে কোণাগুঁজে দাঁড়িয়ে আছে। সদ্য প্রয়াত স্বামীর লাশের সামনে সফেদ শাড়ি পরা সুন্দরী স্ত্রীর বিষাদমাখা মুখ। বাতাস ভারি হয়ে আছে।
অরুণা ‘বড় বাড়ি’ গিয়েছিল অফিসিয়াল সার্ভের উদ্দেশ্যে। এখানে ইউসুফ ও ইমতিয়াজ সস্ত্রীক বসবাস করেন তাদের মা ও সহোদরাদের নিয়ে।এ এলাকায় পুরুষদের বহু বিবাহের ট্রেন্ড আছে। ইউসুফেরও দু’পত্নী।

বাড়ির বারান্দার সাথে লাগোয়া ঘরে রুগ্ন এক ব্যক্তি শুয়ে আছেন। হাড্ডির সাথে তার চামড়া লাগানো এক হাতে স্যালাইন চলছে। শরীরটা বিছানার বিছানার সাথে একাকার।রিপা তাকে তার স্বামী বলে জানান। তাদের একমাত্র শিশুর নাম অন্তরা।

ইমতিয়াজের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিলো বছর খানেক আগে। স্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে নাকি টিলা বাড়ির বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে,শখের বশে হেরোইন নিতে নিতে সে চরম আসক্ত হয়ে পড়ে,শখের বশে হেরোইন নবতে নিতে সে চরম আসক্ত হয়ে পড়ে। নিরাময়ের জন্য চিকিৎসা শেষে অভিভাবকেরা ধরে নিয়েছিলেন তাদের পুত্ররত্মটি শুধরে গেছে। সুন্দরী কনে দেখে তারা এক প্রকার বিয়ে দেবেন বলে মনস্থ করে ফেলেন।

রিপার আত্মীয়দের কানে ইমতিয়াজের নেশার বদঅভ্যেস কথা জানালে ও, তারা বিয়ে ভাঙানি গুজব বলে উড়িয়ে দেন।বিয়ের রাত থেকে রিপা বুঝে ফেলে তার স্বামী হেরোইন আসক্ত। নেশার জন্য সে এতই মরীয়া হয়ে ওঠেযে-সদ্য বিবাহিত স্ত্রীর গায়ে হাত তুলতেও তার দ্বিধা লাগে না। এক পর্যায়ে বিয়ের সব গয়নাগাটি বিক্রি করে ফেলে।
শিশু কন্যাটি ভূমিষ্ট হওয়ার পর তার অত্যাচারের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে থাকে।একদিন সে রিপার তলপেটে জোরসে লাথি দেয়। রিপা সেদিনই বাপের বাড়ি চলে যায়।
একদিন ভরদুপুরে অকস্মাৎ ইমতিয়াজ রিপাদের বাড়ি গিয়ে হানা দেয়।ঢুকে মাত্রই কোলের শিশুকে জোর করে কেড়ে নিতে চায়।চিৎকার করে সে বলে ওঠে-‘হয় বাচ্চা দে, নয় বিয়ের শেষ সম্বল নাকফুল তে বিক্রি করবো নেশার টাকার জন্য’।হতবাক রিপা বাচ্চা সহ দৌড়ে ভেতরে চলে যায়।
ইমতিয়াজের গুরুতর অসুস্থ হয়ে শয্যাশায়ী হওয়ার খবর পেয়ে রিপা পুনরায় শ্বশুরালয়ে পদার্পণ করে।স্বামীর ব্যয়বহুল চিকিৎসার খরচ ও আনুষঙ্গিক খরচাপাতির কথা চিন্তা করে রিপা একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চাকরি নিয়ে নেয়। শিশু অন্তরার কোমল মনে বাবার প্রতি ভীতি জন্মে যায়। সামনে গেলে তার বাবা বিরক্ত হয়,তাই সে এগিয়ে যাবার সাহস করতে পারেনা। সাংসারিক নানান ঝামেলা ও খরচের ভেতর দিয়ে একমাত্র শিশুর ভবিষ্যতের কথা ভেবে রিপাকে অরুণা ক্ষুদ্র ঋণ ও সঞ্চয় কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে চায়। গেট পেরিয়ে শিউলিতলা দিয়ে যেতে অরুণা ভাবতে থাকে ছোট্ট অন্তরার ভীত অভিব্যক্তি, সুন্দরী বৌয়ের বিষাদমাখা মুখ, নেশার কবলে হারিয়ে যাওয়া তরুণের কথা আর বড়বাড়ির দুঃখকাহন।