এগার বছর বয়সী রিংকি একটু ভালো খাওয়ার আশায় আর মাস শেষে কিছু টাকা বেতনের আশায় প্রতিদিন চলে আসে বাসার কাজেই রব সাহেবের বাসায় কাজে। রিংকি পাঁচ বছর বয়সে বাবাকে হারায়। মা ভুগছে নানান রোগে , তবুও সংসার চালানোর তাগিদে অসুস্থ শরীর নিয়ে গার্মেন্টসে অপারেটরের চাকরী করে রিংকির মা । রিংকির বড় এক বোন আর এক ভাই। বাবা বেঁচে থাকতে কম বয়সেই রিংকির বোনের বিয়ে হয়ে যায় খালাত ভাইয়ের সাথে। বড় ভাই ক্লাস সেভেন পর্যন্ত পড়ে টাকার অভাবে পড়ালেখা বন্ধ করে দোকানে চাকুরী নেয়। রিংকির বাবার অসুস্থতার সময় রিংকির মা অনেক টাকা ঋণ করে চিকিৎসার খরচ চালিয়েছিল তাই সেই ঋণ শোধ করা আর রিংকির মা নিজেও অসুস্থ তাই নিজের ওষুধের খরচ, সংসার খরচ সব মিলিয়ে ভীষণ টানাপোড়নে চলে রিংকির পরিবার ।রিংকির বাবা ছিল রব সাহেবের খুব কাছের লোক। রব সাহেবের গাড়ি পরিষ্কার করা, বাসার বাজার করে দেয়া এবং অন্যান্য সব কাজ খুশি মনে করে দিত রিংকির বাবা। বিনিময়ে রব সাহেব রিংকির বাবাকে ভালোই সম্মানি দিত। রিংকির বাবা মারা যাওয়ার পর থেকেই রব সাহেবের বউ মিসেস রব রিংকির মাকে ফোন করে খোঁজ খবর রাখত। মিসেস রব একদিন রিংকির মাকে করে বলল, দেখো রিংকির তো বাবা নেই সেই সুযোগে রিংকিকে তোমার কাছ থেকে অনেকে কাজের জন্য চাইতে পারে বা বাসায় রাখার জন্য। মিসেস রবের কথা শুনে রিংকির মা বলল, ভাবী আপনি ঠিক বলেছেন অনেকে ইতিমধ্যেই আমাকে বলেও ফেলেছে, কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে মেয়েকে পড়ালেখা করাবো। মেয়েরও স্কুলে যাওয়ার প্রতি খুব আগ্রহ আছে।
রিংকির মায়ের কথা শুনে মিসেস রব খুব খুশি হলো । রিংকির মা আরও বলল, আপনি যদি বলেন আপনার বাসায় মাঝেমধ্যে পাঠাতে পারি। রিংকির বাবা তো আপনাদের খুব আপন লোক ছিল।
মিসেস রব রিংকির মায়ের কথা শুনে খুশি হয়ে বলল, ঠিক আছে পাঠাইও কোন সমস্যা নেই ।রিংকির স্কুলের সময় হলে স্কুলে যাবে আর প্রাইভেটের সময় হলে প্রাইভেটে যাবে। বাকী যেটুকু সময় আমার কাছে থাকতে ইচ্ছে করে থাকবে । মিসেস রবের কথা শুনে রিংকির মা কিছুটা ভরসা পেল। রিংকির মা ভাবে মেয়ে অল্প স্বল্প কাজ করলে অনন্ত ওই টাকা দিয়ে মেয়ের পড়ার খরচটা চলে যাবে ।শুরু হয় রিংকির রব সাহেবের বাসায় আসা-যাওয়া। বাসা কাছে তাই কোন সমস্যা হয় না। যখনই সময় পায় রিংকি আসা-যাওয়া করতে পারে। মিসেস বর বাগান প্রিয় মানুষ ।রিংকিকে পেয়ে মিসেস বর ভীষণ খুশি ।রিংকি ছোট হলেও কাজ যেটা করে খুব আগ্রহ নিয়ে করে। প্রতিদিন বাগানে পানি দেওয়া, ফার্নিচার মুছা হচ্ছে রিংকির কাজ।বড় কাজ গুলো করার আগ্রহ রিংকির, কিন্তু রব সাহেবের বাসায় বড় কাজের জন্য মহিলা আছে তাছাড়া মিসেস রব চায় না রিংকি অধিক পরিশ্রমের কাজ করুক তাই রিংকির ছোটোখাটো কাজ করলেই চলে। আট বছর বয়সে ক্লাস টু তে পড়া অবস্থায় শুরু হয় রিংকির রব সাহেবের বাসায় আসা- যাওয়া। রিংকির বয়স এখন এগার বছর। ক্লাস ফাইভে পড়ে রিংকি। এখন অনেক কিছু বুঝে ,খেতে বসলে বেশি খেতে চায় না। বাসায় কিছু খাবার দিলে মুচকি হেসে আনন্দ প্রকাশ করে। প্রতিবছর ঈদের আগে মিসেস রব রিংকিকে দুই/তিনটা নতুন কাপড় বানিয়ে দেয় । রিংকির অন্যান্য জিনিসের জন্য রিংকির মাকে টাকা দিয়ে দেয় রিংকিকে সাথে নিয়ে মার্কেট থেকে পছন্দ মত কিনে দেয়ার জন্য ।রিংকি মা ভাই-বোনের কাপড়ের জন্যও ঈদের আগে টাকা দিয়ে দেয় মিসেস রব ।তাতে রিংকির মা ও ভাই-বোন ভীষণ খুশি। প্রতিমাসে রিংকির মাকে টাকা দেওয়া, অসুখ-বিসুখে সাহায্য করা এবং রিংকির যখন যা লাগে সেসব প্রয়োজন মিঠাতে মিসেস রব কখনও কৃপণতা করে না। এবার ঈদেও রিংকি নতুন জামা পরবে, নতুন সেন্ডেল পরবে এবং অন্যান্য যা যা লাগে সব নতুন পাবে সে নিয়ে রিংকির মনে ভীষণ আনন্দ। রিংকি মিসেস রবকে ছোটোখাটো কাজে সাহায্য করে এবং পড়ালেখা ঠিক রেখে এগিয়ে যাচ্ছে সুন্দর আগামীর পথে। রিংকি পড়ালেখা শিখবে, মানুষের মত মানুষ হবে এ যেন রিংকির মায়ের জীবন আকাশে কালো মেঘের ফাঁকে সুখের আলোকরস্মি ।