ফোনের রিংটা হঠাৎ বেজে উঠলো। ফোনের একপাশে আমি আরেকপাশে শিমুল।আমায় বলছে-নিরুপমা আজ একটু দেখা করতে পারবে?আমি বলালাম কেন?ও হেসে আমায় বলে আরে একটু দেখা করো না।আজকের পর তো আর এভাবে লুকিয়ে দেখা হবে না।আমি একটু মুচকি হেসে বললাম ঠিক আছে।কিন্তু কোথায় দেখা করবে?শিমুল আমায় বললো কেন?ভুলে গেলে?আমরা সবসময় যেখানে দেখা করি সেখানেই।সেই বাগান বিলাস ক্যাফেতে।আমি বললাম চলো না আজ অন্য কোথাও দেখা করি।শিমুল আমায় বললো -না না যেখানে বলেছি সেখানেই দেখা করো।আর শোন আজ তুমি আমার দেয়া নীল শাড়ি পড়বে। কপালে কালো টিপ,পায়ে নূপুর আর খোলা চুলে আসবে।আমি ওর কথায় আরেকবার মুচকি হাসি দিয়ে ফোনটা কেটে দিলাম।এরপর রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলাম।শিমুল যা যা বলেছিল সবই করলাম।আর ভাবতে লাগলাম আগের সেই দিনগুলোর কথা।শিমুলের সাথে আমার পরিচয় কলেজে। আমি শিমুলের থেকে ১বছরের জুনিয়র।প্রথম যেদিন কলেজ গিয়েছিলাম সেইদিন প্রথম শিমুলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল আমার এক ফ্রেন্ড যে শিমুলের বোন ছিল।সেইদিন থেকে শিমুলের সাথে প্রায়ই কথা হতো।এক পর্যায়ে ফোনে কথা বলতে শুরু করলাম।কলেজে দেখা হতো,কথা হতো,হাসিঠাট্টা হতো।তবুও কলেজ থেকে বাড়ি আসলে মন টিকতো না।ভাবতাম যদি আরেকটু সময় কাটানো যেত।এভাবেই কেটে যেত আমাদের।একসময় ভ্যালেন্টাইন ডে এর আগেরদিন শিমুল আমার জন্য একটি বাক্সতে করে উপহার এনেছিল।বলেছিল আগামীকাল “ভ্যালেন্টাইন ডে” তাই তুমি আমার দেয়া এই বাক্সে যা যা আছে সব পড়বে।আমি মুচকি হেসে সেই বাক্সটা নিলাম।বললাম ঠিক আছে।এই বলে বাড়ি এসে শিমুলকে ফোন দিয়ে বললাম -তোমার জন্য আমিও একটা উপহার রেখেছিলাম। তুমি কি একটু আমাদের বাড়ির পিছনে শিমুল গাছটার নিচে আসতে পারবে? শিমুল মুচকি হেসে বললো এসবের কি দরকার। আমি দিয়েছি বলে তোমারও কি দেয়া লাগবে?আমি শিমুলের উপর রাগ করে ফোনটা কেটে দিলাম।ঠিক বিকাল ৪টায় হঠাৎ দেখব শিমুল আমাদের বাড়ির পিছনের শিমুল গাছটার নিচে এসে দাঁড়িয়ে আছে।আমি তৎক্ষনাৎ গিয়ে শিমুলের হাতে উপহারের সেই প্যাকেটটা ধরিয়ে দিয়ে বাড়িতে ফিরে এলাম। তারপর সরারাত দুজনে ফোনে গল্প করলাম।পরেরদিন সকালে শিমুলের দেয়া বাক্সটি খুলে দেখি -একটা নীল শাড়ি, একটা কালো টিপের পাতা,একজোড়া নূপুর আর কাঁচের নীল চুড়ি।আমি একটু অবাক হলাম কারণ আমিও যে শিমুলকে একটা নীল পাঞ্জাবি দিয়েছি।আর ভাবতে লাগলাম শিমুলও হয়তো আমার উপহার দেখে আমার মতো অবাক হবে।
তারপর রেডি হয়ে সোজা কলেজের দিকে রওনা হলাম।আজ আর শাড়ি পড়ে ট্যাক্সিতে না রিক্সায় যাবো।যেই কথা সেই কাজ। উঠে পড়লাম রিক্সাতে।হঠাৎ কলেজের সামনে যেতেই দেখলাম শিমুলকে -পরনে নীল পাঞ্জাবি, হাতে ঘড়ি আর পায়ে একজোড়া চটি।দেখতে খুব সুন্দর লাগছিল। আমি রিক্সাতে থেকে নামতেই শিমুল আমায় জড়িয়ে ধরে বললো “হ্যাপি ভ্যালেন্টাইন’স ডে” নিরুপমা।ওর এই আচরনে বেশ লজ্জা পাচ্ছিলাম।কিন্তু মনে মনে ভাবছিলাম আমার ভালোবাসার মানুষটা বেশ সুন্দর।এরপর দুজনে আমাদের প্রিয় বাগান বিলাস ক্যাফেতে কফি খেতে খেতে আড্ডা দিলাম।সেইদিন কোনো ফ্রেন্ড ছিল না শুধু আমি আর শিমুল। সত্যি দিনগুলো অসম্ভব সুন্দর ছিল। আজ ফেব্রুয়ারি আমার আর শিমুলের সম্পর্কের ১০ বছর পেরিয়ে গেল। আগামীকাল আমার আর শিমুলের ১০বছরের “অপেক্ষার অবসান” হতে চলেছে।দুজন দুজনকে আরো কাছাকাছি পেতে চলেছি।কারণ আগামীকাল যে আমার আর শিমুলের বিয়ে।