বৈশাখের তপ্ত দুপুরে, ঝিম ধরা আকাশের রৌদ্র দহনে,
ঝির ঝির বাতাসে ছুটে যেতাম ফছি কাকাদের আম বাগানে,
আমি আর রাশিদা বানু!

টুপ টুপ করে ঝরে পড়তো সিঁদুর রাঙা কাঁচা আম।
আমরা দুজন চুপচাপ বাঁশঝাড়ে বসে বসে
সিলন দিয়ে আম কাটতাম আর মুখ পুরে খেতাম।

রাশিদা বানুর কাপড়ের গিঁটে বাঁধা থাকতো লবন আর লাল মরিচের গুঁড়ো,
আমার প্যান্টের পকেটে ঝিনুকের খোসা দিয়ে বানানো সিলন,
সিলন দিয়ে আম কাটি আর লবন মরিচ দিয়ে দুজনে মেখে- জোখে খাই,
হেসে লুটিপুটি যাই আর বৈশাখী তপ্ত বাতাস গায়ে মেখে ছুটে যেতাম চৌধুরী পুকুর পাড়ে।

তেঁতুল গাছের ডালে ঝুলে থাকতাম ভূত সেজে ; আমি আর রাশিদা বানু!
এখানে ভূতের ভয়ে কলসি ফেলে দৌড়ে পালাতো মোল্লা বাড়ির নতুন বউ।
গাছের নীচে ভূতের জন্য পাহাড়ি অমলকি রেখে যেতো,দক্ষিণ পাড়ার আলাউদ্দিন চৌধুরী।
এতেও তার ভয় কাটে না, সেও ভয়ে পালিয়ে যায় পাহাড়ের পেয়ারা বাগানে।

আমি আর রাশিদা বানু একই স্কুলে পড়ি, একই ক্লাসে, একই বই।

আমরা থাকি পাশাপাশি বাড়ি, পাশাপাশি ঘরে, সন্ধ্যায় কালিপদ স্যার আসেন,
কুপির আলোতে পড়াতে বসেন বীজগনিত, টেন্স আর প্রিপজিশন!

রাশিদা বানু পড়া ফাঁকি দেয়, আমি লক্ষীমন্ত ছেলে,
রাশিদা কানমলা খায়, আমি পৃথিবীর ফেরেশতা সেজে চুপচাপ থাকি,
হাসি গিলে খেতে খেতে পেটে আমার হাসির রাজ্য হয়েছে কয়েক শত!

এক বরষায় বৃষ্টির দিনে রাশিদা বানু চলে গেলো,লালনের দেশে।
সে থেকে আমি বন্ধুহীন, আমি একা, আমি শূন্যতায় কেঁদে কেঁদে খুঁজি তাকে।
রাশিদা বানু আর ফিরে আসে না, আমিও আর হাসি না!