বিশিষ্ট কলামিস্ট, প্রাবন্ধিক, গবেষক সাখাওয়াত হোসেন মজনুর দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী আজ ১লা মে। ২০২১ সালের এই দিনে সকাল ৮টায় তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যান। ইন্নালিল্লাহে ওয়াইন্নাইলাইহি রাজেউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিলো ৬৫ বছর। তিনি স্ত্রী কবি-শিক্ষক মর্জিনা আখতার, ভাই-বোনসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন রেখে যান।
সাখাওয়াত হোসেন মজনু দেশের বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক হিসেবে যেমন পরিচিত, তেমনি নিষ্ঠাবান গবেষক হিসেবেও সমাদৃত। ১৯৫৭ সালের ২০ এপ্রিল তাঁর জন্ম। বাংলা ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে নিয়েছেন এম এ ডিগ্রি।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক দেশবাংলার একজন কিশোর কর্মী হিসেবে ছোট ছোট সংবাদ লিখতে লিখতে সাখাওয়াত হোসেন মজনুর লেখার হাতে খড়ি। তারপর গণকন্ঠে লেখাণেখি এবং শিক্ষকতা। ১৯৮৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে থেকে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের তৃণমূলে মুক্তিযুদ্ধের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু। তবে তিনি তাঁর ক্ষেত্র হিসেবে মুক্তিযুদ্ধে শহর চট্টগ্রামকে বেছে নিয়েছেন। গবেষণার ফল হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে, নির্যাতন’ ৭১, রণাঙ্গনে সূর্যসৈনিক, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহর চট্টগ্রামের বধ্যভূমি ও নির্যাতন কেন্দ্র, মধ্যম নাথপাড়া ও আবদুর পাড়া বধ্যভূমি, মুক্তিযুদ্ধে আমার কৈশোর।
তাঁর জীবনী থেকে জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখক বয়সে কিশোর এস এস সি পরীক্ষার্থী। তবে ছাত্রলীগের আগ্রাবাদ অঞ্চলের কর্মী ছিলেন। সে বয়সে অর্থাৎ ১ মার্চ থেকে অসংখ্য মানুষের সাথে মিছিল, মিটিং এবং প্রতিরোধে কিশোরের মতোই কাজ করেছেন। বাদামতলী মোড়ে অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াত প্রতিরোধে অংশ নেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে পুরো পরিবার আত্মগোপনে চলে যান। তবে মে মাস থেকে ফিরে এসে রাজপথের বন্ধুদের সন্ধান মেলে। যোগাযোগ স্থাপিত হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা তোহা গাজী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রইসুল হক বাহার, বীর মুক্তিযোদ্ধা গরীব উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ শফি মুন্সী এবং আরো ক’জনের সাথে। তবে ডা. মাহফুজ, তোহা গাজী, রইসুল হক বাহার লেখককে কাজে লাগান গোপনে প্রচারপত্র বিলি, ছোট অস্ত্র, এক্সক্লুসিভ ও তথ্য আদান প্রদানে। এক্ষেত্রে উত্তর নালাপাড়ার দেওয়ান শামসুন নাহার মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানো অস্ত্র, গোলাবারুদ, তথ্য সংরক্ষণ করেন সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনায়। লেখক ছিলেন এই কাজগুলোর সহযোগী।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শহর চট্টগ্রামের তৃণমূলের অবস্থা, মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় কেন্দ্র, গৌরবদীপ্ত অপারেশন, বধ্যভূমি, নির্যাতন কেন্দ্র, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সহায়ক শক্তি মা-বোনদের গৌরবগাথা, ঘাতক বাহিনীর সহযোগী ও পাকিস্তান বাহিনীর দোসরদের তৃণমূলের তথ্য সংগ্রহের ২য় পর্বের কাজ শেষ করেছিলেন তিনি। প্রায় ১০০০ (এক হাজার) পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির দুই খন্ডে প্রকাশের ইচ্ছে ছিল সাখাওয়াত হোসেন মজনুর। এশিয়াটিক সোসাইটি অভ বাংলাদেশ-এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ এর সম্পাদনায় প্রকাশিত এনসাইক্লোপিডিয়া অব বাংলাদেশ ওয়ার অব লিবারেশন গ্রন্থের ১০ পর্বের মধ্যে এই লেখকের শহর চট্টগ্রামের মুক্তিযুদ্ধের গবেষণা পর্বের অনেকগুলো গবেষণাকর্ম স্থান পেয়েছে।
দৈনিক আজাদী সাবেক সম্পাদক প্রফেসর মোহাম্মদ খালেদ এবং বর্তমান সম্পাদক এম.এ মালেক এর পৃষ্ঠপোষকতায় সাখাওয়াত হোসেন মজনু ১৯৯০ থেকে দৈনিক আজাদীতে ‘সাম্প্রতিক চট্টগ্রাম ও দৈনন্দিন টুকিটাকি’ কলামটি লিখছিলেন। সাখাওয়াত হোসেন মজনুর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা মোট ২৩টি।