নীলাঞ্জনা,
আজকের দিনটি অন্য রকম মনে হচ্ছে নীরব ভালবাসার অনুভবের অনুভূতি- তোমার চোখ দুটো ভেসে এলেই নিজের অজান্তেই চমকে উঠি বারবার ফিরে দেখি সেই তোমাকে যেখানে দুজনের মন দেয়া নেয়া হত অবিচল নীলপদ্ম টির মতো চোখজোড়া শীতল হাতটি ছুঁয়ে গেলেই সুখের উষ্ণতা – টইটম্বুর মনটা এখনো অবিকল আগের মতোন কাতর তোমাকে দেখার একটি বার।

নীল তোমার নির্জনতা একদম পছন্দ ছিল না পাড়াময় মাতিয়ে রাখতে তুমি আর ঘরের চারপাশে নুপুরের রিনিঝিনিতে –
আমি অপলক মনে তোমার হেঁটে যাওয়া পায়ের চিহ্ন টি অদ্ভুতভাবে দেখে থাকতাম কেন জানো ওখানে ঘুরে বেড়াতো তোমার মায়াবী ছায়াটি।
বিশ্বাস করো
আজ তোমার নীলাভ সবুজ মনকে ছুঁয়ে দেখতে বড্ড ইচ্ছে করছে তাই
দু চার টা লাইন লিখে নিবো ভাবছি এতো গুলো জমানো কথা যেন ভালোবাসার রূপকথার মাঝে কোন কথাটা আগে বলবো তোমায় নিদারুণ ভাবে ভাবছি-
ভাল আছো তো!
সকালের স্নান সেরে ভোরের আলোর জন্য অপেক্ষায় থাকো কি উঁকি দেওয়া মিষ্টি রোদটির জন্য যেখানে হেলান দিয়ে বসে থাকতে কাঁধে আলতো করে মাথাটা রেখে!
আর পড়ন্ত বিকেলে হাঁটতে যাওয়া—– আজো হাঁপিয়ে ওঠো নাকি !
আর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে দেখতে মিছেমিছি আমি যেন দৌড়ে গিয়ে তোমার হাতটা ধরি !
কি মায়াজালে জড়ানো সব দিন গুলো তাই না !
ভালোবাসার জমির চারিপাশে আমার লাগানো হরিতকি,
হাসনাহেনা আর মাধবী লতা এখনো জড়িয়ে আছে বসার ঘরের বারান্দায় আগের মতো —
আর উঠোনে তুলসীগাছ টা!!—
আর টিয়া পাখি টা আজো অপেক্ষা করে আছে ডাক পিওনের নীল খামের চিঠি ও টেলিগ্রামের খোঁজ পাবে সেই আশায়।
জানো তো তোমার ঘরের মেঝেতে চটের ব্যাগ টা অনাধরে পড়ে আছে হয়তো যেখানে সুঁই সুতো রাখতাম ঐ সুঁই সুতো দিয়ে তোমার ছিঁড়ে যাওয়া বুতাম লাগিয়ে নিতাম ভালোবাসার ভালোলাগার প্রতিটি দিন কে গেঁথে গেঁথে সুখের মালা বানিয়েছি সদ্য ফোঁটা রক্ত করবীর মতো দেখতে !
সব স্মৃতিগুলো ডানা মেলে উড়ছে বিজন ঘরে শূন্য সুখের আবেশ ছড়িয়ে আমার খুব জানতে ইচ্ছে করছে তোমার অহংকারী অভিমান গুলো কি আমার কথা বলে নিঃশ্বাস সমীরণে? নাম ধরে খোঁজ করে লেইজ ফিতা, রেশমী চুড়ি সুতোয় বাঁধা জোড়া চম্পা ফুল দুটি নিয়ে?
কত মধুর মূহূর্ত ছিল দুজনের বর্ষার সময় দুজন বসে বসে কতো কথাই না বলতাম টিনের চালে টুপটাপ শব্দ আর তোমার আবেগ মাখা কথার ফুলঝুরি একই ভাবে ঝরে পড়তো আর আমি!
অবাক নয়নে দেখে দেখে মৃদু মৃদু হেসে যেতাম তোমার ললাটে এঁকে দিতাম অপূর্ব এক মুগ্ধতা
জড়িয়ে নিতাম ভালোবাসার আলিঙ্গনে।
খোলা আকাশের নীচে বাদাম আর জাল মুড়ি ওয়ালা এখনো হাঁক ছাড়ে কতই না খেয়েছি বর্ষার দিনে দুজনে।
আমার নিঃশ্বাসে এখনো ভেসে আসে স্বপ্ন তরীতে বেড়াতে যাওয়া থৈ থৈ পানিতে মন যেন স্বপ্নীল মাধুরী সেজে নিয়ে জলের চোখে
আয়নায় ছবি এঁকে যেত সবি স্পষ্ট অকোপটে এখনো।
বড়ড় বেশি ইচ্ছে করে তোমার হাতের তুলসী পাতার চা টা খেতে আর লেবুর চায়ে তুমি একটু করে লবণ দিতে আমি প্রচণ্ড রেগে যেতাম তখন পিছনে জড়িয়ে ধরে বলতে লবণের মতো ভালোবাসা আমি না হেসে পারতাম না ।
তোমার ধূপের ধোঁয়া খুব পছন্দ ছিল প্রতিদিন ধূপ জ্বালাতে তুমি
সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বেলে প্রার্থণায় মগ্ন দ্বীপের ধূপছায়ার মতো পা টিপে টিপে পিছনে এসে হাতটা দিয়ে কপালটা ছুঁয়ে দিতে আজ তোমার রেখে যাওয়া ইচ্ছাগুলো কিলবিল করে ঘরের দক্ষিণ পূর্ব দিকে হেঁটে বেড়ায় ঘরের আঙিনায় ।
মনের মাঝে এখন সেঁতসেঁতে শ্যাওলা জমেছে প্রেমের শানবাঁধা ঘাটে কদম ফুলের গাছটায় আলো আঁধারের নীরবতায় ঝিঁ ঝিঁ পোকারা কনসার্ট করে আপনমনে আওয়াজটা কানে বাজে আজো!
আমি আর তুমি
যেভাবেই কান পেতে শুনতে পেতাম মঙ্গল দীপ জ্বেলে!
সব বদলে গেছে সময়ের সাথে সাথে বয়সের ভার আজো দুজনকে স্পর্শ করতে পারেনি তবে সময়টা একটু নড়বড়ে মুমূর্ষু
সময়ের বা দোষ কি জীবন জোয়ারে ছোট্ট ডিঙি নৌকা টা
আর চলে না একাকিত্ব গিলে নিয়েছে সময়কে
দুর্বার মন যৌবন
দোহাই দিয়ে যায় অনেকটা অভিমানী সুরে।
আমি কিন্তু এখনো তোমার কথার ভাবনায় সুর তুলি প্রতীক্ষার প্রহরে, বেলি, কামেনী ফুলের মালা দিয়ে বেনিতে জড়িয়ে রাখি তোমার পছন্দের লাল পাড় সবুজ শাড়ি পরে।
এখনো দীর্ঘ দিঘিতে পদ্ম ফুটে মৃদু আঁচে রোদ হাসে সময়ের রং ক্লান্তিতে ডুবে সাঁতার কাটে ।
এখনো বর্ষার জন্য অপেক্ষা করে থাকি ঠিক তোমার পায়ের আদর জড়ানো আওয়াজটির জন্য কান পেতে রই !
চম্পা ফুল হাতে এ বুঝি ডাক দিবে এসো এসো আমরা দুজন কবিতার কাব্য পাড়ায় যাবো ঘুরে বেড়াবো সোনালী দিনের মিষ্টি রোদে হাত ভেজাবো পা ভিজাবো শিশির দূর্বা ঘাসে আজো জড়িয়ে নেবো ভালোবাসার রূপকথায় রাজমহলে!