মে মাসের শেষের দিকে এক দিন গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল। দেখি সারা শরীরে ব্যথা, যন্ত্রণা ও জ্বর। কী করবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। শোয়া থেকে উঠে শরীরের তাপমাত্রা দেখে দুটা প্যারাসিটামল খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। অস্থিরতার জন্য সারারাত ঘুমাতে পারলাম না। সকালে উঠে দেখলাম তখনো শরীরে জ্বর আছে তাই ফেসবুকে ছোট করে একটা স্ট্যাটার্স দিলাম ‘বন্ধুরা কাল রাত থেকে জ্বর, দোয়া করিও’। কিছুক্ষণ পর আমার ছোট ভগ্নিপতি (সে ডাক্তার) ফোন করে খোঁজ খবর নিয়ে ওষুধ দিলো। বিকালে মেডিক্যাল কলেজের এক প্রফেসর ফোন করে এডভাইস দিলো ও ওষুধ দিলো। সারাদিন রোজা রেখে খুব কাহিল লাগছিলো। ইফতার, রাতের খাবার ও ওষুধ খেয়ে নামাজ আদায় করে শুতে যাব। হঠাৎ দেখি এক ফেসবুক বন্ধু টেক্সট করলো, জ্বর কি এখনো আছে? বললাম আছে। বললো কি কি ওষুধ খাচ্ছেন? ওষুধের নাম লিখলাম। শুনে বললো ঘাবড়াবেন না। গরম পানি দিয়ে গলগল করুন ও কোন ঠা-া জিনিস খাবেন না, ঐ পর্যন্তই! এর পরে প্রায় প্রতিদিন একবার করে খবর নিতো ও কী কী ওষুধ খাচ্ছি জানতে চাইতো। একদিন জিজ্ঞেস করলাম, আপনি কি ডাক্তার? বললো হ্যাঁ। ২০-২৫ দিনের মাথায় করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার পর তাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানালাম, প্রতিদিন খবর ও তদারক করার জন্য। এরপরে প্রায় ওর সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মেসেঞ্জারে কথা হতো। সুখ দুঃখ শেয়ার করতো। প্রায় প্রতিদিন ফেসবুকে শুভ সকাল-রাত্রি টাইপের তথ্য আদান প্রদান হতো। ঈদের সময় শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছে। মাঝে মধ্যে আমার লেখার ওপর কমেন্টস করতো। পরে প্রায় ১৫-২০ দিন ওর সাথে যোগাযোগ ছিলো না। গতমাসে একদিন দুপুর তিনটার দিকে হঠাৎ করে একটা মেসেজ দিলো। “কেমন আছ”? বললাম ভাল। বললো আমাকে কি চিনতে পেরেছো? বললাম চিনবো না কেন। আপনি আমার অসুখের সময় প্রতিদিন খোঁজখবর নিয়েছেন। আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ। বললো প্রতিদিন কত মানুষের চিকিৎসা করি কিন্তু কেউ কখনো কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না। আমি বললাম ওরা আপনার কাছে এসে টাকার বিনিময়ে চিকিৎসা নেয়। আর আমি আপনার থেকে চিকিৎসা পেয়েছি আপনার উদারতার জন্য। সে জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি। বললো অনেককে বিনা টাকায়ও চিকিৎসা করেছি কিন্তু তারা কেউ কখনো ধন্যবাদ জানায় নি, তুমিই ব্যতিক্রম। সে আরো কিছু বলতে চাইলে বললাম, অফিসের কাজে একটু ব্যস্ত আছি। আপনার সাথে পরে কথা হবে, এটা বলে রেখে দিলাম। পরদিন সন্ধ্যায় আবার মেসেজ করে বললো, তুমি কি ব্যস্ত? বললাম না। বললো আচ্ছা তুমি কি কর, কোথায় থাক? বললাম আপনি যদি একটু কষ্ট করে আমার প্রোফাইলটা দেখেন, তবে সব উত্তর পেয়ে যাবেন। বললো তুমি বললে কি অসুবিধা আছে? আমি তোমার কাছে জানতে চাই। চিন্তায় পড়ে গেলাম, বিষয় কি? হঠাৎ করে মেয়েটা কেন আমাকে’ তুমি ‘করে বলছে। কেনই বা আমার সম্বন্ধে জানতে চেয়েছে। তবু চিন্তা করলাম হয়ত কোন প্রয়োজন হতে পারে, তাই সব কিছু বললাম। সব শুনে বললো, আচ্ছা আরেকটা বিয়ে করলে কি চালাতে পারবে? আমি বললাম হঠাৎ বিয়ের প্রসঙ্গ আসছে কেন? বললো, বল না আরেকটা বিয়ে করলে চালাতে পারবে কিনা। আমি বললাম কার জন্য। বললো তুমি আমাকে বিয়ে করবে? আমি বললাম হঠাৎ বলা নাই কওয়া নাই, বিয়ে। বিষয় কি? বললো তুমি আমাকে বিয়ে করবে কিনা? সেটা জানতে চেয়েছি। বেশি কথা না বলে ফোন রেখে দিলাম। সারারাত মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে, এই মেয়ে একজন ডাক্তার হয়ে হঠাৎ আমাকে বিয়ে করতে চাচ্ছে কেন? না কি কোন ফাঁদে ফেলার জন্য এসব করছে। আজকাল তো ফেসবুকের মাধ্যমে কত রকমের প্রতারণার কথা শুনি। মাথায় হাজারো চিন্তা, রাতে ঘুম হলো না। পরদিন ইচ্ছে করে ফোনের নেট বন্ধ করে রেখেছি। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরদিন সকালে অফিসে গিয়ে নেট ওপেন করে দেখি, সে মেসেজ করেছে। ইন্টারনেট বন্ধ করে রেখেছ কেন? সারাদিন কোন উত্তর দিই নাই। রাতে দেখি আবার মেসেজ দিয়েছে, কী ব্যাপার তোমার কোন খবর নেই কেন? বললাম কী খবর চাও। বললো আমি একটা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর দিচ্ছো না কেন? বললাম এখন আমাকে কী করতে হবে? বললো যদি রাজি হও তবে আমার ভাই ও মায়ের সাথে তোমাকে কথা বলতে হবে। বললাম আমি তো তোমার সম্পর্কে কিছু জানি না। সে বললো কি জানতে চাও বল? আমি বললাম তুমি কোথায় থাক, কি কর? বললো আমি রাজশাহীতে থাকি। ওখানে সরকারী হাসপাতালে জুনিয়ার কনসালটেন্ট হিসাবে চাকুরী করি। হাসপাতালের কোয়ার্টারে মা ও একটা কাজের মেয়েসহ থাকি। বললাম তোমার ভাই কোথায় থাকে? বললো আমেরিকায় থাকে। বললাম উনি কি তোমার বড় না ছোট? বললো ছোট। আমি বললাম তোমার বয়স কত? বললো ৩৩ বছর। আমি বললাম তুমি কি জানো আমার বয়স কত? ৫৪ বছর। অর্থাৎ তুমি আমার প্রায় ২১ বছরের ছোট। এতো বয়সের তফাতের একজনকে বিয়ে করা কি ঠিক হবে? সামনে তোমার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ, কেন আমার মত একজন বুড়ো মানুষকে বিয়ে করতে চাও? বললো আমার কোন অসুবিধা নাই, আমি জেনে শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যদি তুমি রাজি থাকো। এবার সে বললো তোমাকে কিছু কাজ করতে হবে, তুমি প্রথমে আমার ভাইয়ের সাথে কথা বলবে। তাকে রাজি করাতে হবে, যে ভাবে পার। আমি তোমাকে নাম্বার দিচ্ছি তুমি কথা বলে নিও। এ কথা বলে সে একটা নাম্বার টেক্সট করলো। নাম্বারটি সেভ করে পরের দিন রাতে ওর ভাইকে ইমোতে ফোন করি। সে বললো আপনি কে? আমি বললাম আমি বাংলাদেশ থেকে বলছি। আপনার সাথে একটু কথা বলবো। সে বললো আপনি আমার নাম্বার কোথা থেকে পেলেন? বললাম ইমোতে হঠাৎ আপনার নাম্বারটা কানেক্ট হয়েছে। তাই ফোন করলাম। একটু অভিনয় করে বললাম, বলতে পারেন আপনার সাথে কি আমার কখনো পরিচয় হয়েছিলো? সে বললো মনে করতে পারছি না। এটা সেটা বলে ফোন রেখে দিলাম। পরদিন রাতে দেখি সে আমাকে ফোন করেছে। বললো আপনি যে কাল ফোন করলেন, আপনি কে? আমি আপনার সম্পর্কে জানতে চাচ্ছি। বললাম কেন? বললো কাল আপনি ফোন করলেন তাই চিন্তা করলাম হয়ত কোনভাবে আপনার সাথে আমার পরিচয় থাকতে পারে। আবারো একথা ওকথা বলে ফোন রেখে দিলাম। এভাবে দুয়েক দিন পর পর তার সাথে কথা বলে একটু খাতির জমিয়ে একদিন ওর পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সে বললো তার মা ও বোন সম্পর্কে। আমি বললাম আপনি বোধহয় অবিবাহিত। সে বললো জি। আপনাদের বাড়ী কোথায়? বললো চাঁদপুরের মতলব উপজেলায়। বাড়ীতে কে কে আছে? বললো মা ও বোন। বাবা নাই? বললো বাবা প্রায় ২০ বছর আগে মারা গেছেন। আপনি কত বছর ধরে আমেরিকায় আছেন? বললো ৯ বছর। দেশে কবে আসবেন? বললো আগামী বছর। দেশে আসলে কি বিয়ে করবেন? বললো না আগে বোনকে বিয়ে দিবো তারপর।
আপনার বোন কি করেন? বললো ও ডাক্তার, রাজশাহীতে সরকারী হাসপাতালে চাকুরী করে। আপনার মা কোথায় থাকেন? বললো আমার বোনের সাথে থাকে।এতটুকু বলে রেখে দিলাম। বললাম আপনার সাথে পরে কথা বলবো। এদিকে মেয়েটি বারবার মেসেজ দিচ্ছে খবর জানার জন্য। এবার তাকে ফিরতি মেসেজ দিয়ে জানালাম, তোমার ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে, কাল আবার কথা বলবো। বিষয়টা নিয়ে রাতে অনেক ভাবলাম। সকালে রাজশাহীর এক বন্ধুকে (সে একটা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক) ফোন করে মেয়েটির খোঁজ খবর নিতে বললাম। ২-৩ দিন পর সে জানালো, মেয়েটি যা বলেছে সব সত্য। নানা বিষয় নিয়ে ভাবলাম। বিবেক আমাকে প্রশ্ন করে- এই সম্পর্কে আটকে যাওয়া ঠিক হচ্ছে কিনা! আবার এক ধরনের কৌতূহল আমার ভেতরে কাজ করে। মেয়ে আসলে কী চায়-সেটা জানা দরকার। এবার চিন্তা করলাম মেয়েটির সাথে দেখা করবো। রাতে স্ত্রীকে বললাম একটা কাজে দুই এক দিনের মধ্যে আমাকে রাজশাহী যেতে হবে। দুইদিন পর ভোরে রাজশাহী রওয়ানা হলাম। স্ত্রীকে বললাম দুয়েক দিনের মধ্যে চলে আসবো। রাতে রাজশাহী পৌঁছে একটা হোটেলে উঠে বন্ধুকে ফোন করলাম। পরদিন সকালে বন্ধুটি আসলে ওকে সব খুলে বললাম এবং তাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম। প্রায় ১ টার দিকে মেয়েটির সাথে দেখা হলো। সে আমাকে দেখে তো হতবাক। বললো তুমি কোথা থেকে এলে? এখানে আসবে সেটা আগে জানাও নাই কেন? বললাম তোমাকে সারপ্রাইজ দিবো বলে বলিনি। জিজ্ঞেস করলো কোথায় উঠেছি, বললাম হোটেলে। বললো চল আমার বাসায় চল। বন্ধুকে আড়ালে ডেকে বললাম আমি ওর সাথে ওর বাসায় যাচ্ছি, তুই একটু অপেক্ষা কর। ঘন্টা খানেকের মধ্যে চলে আসবো তারপর দুইজনে একসাথে খাবো। মেয়েটির বাসায় গেলাম। দেখলাম বেশ বড়সড় বাসা। বাসায় কাজের মেয়ে আর মা ছাড়া আর কেউ নাই। প্রথমে ওর মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। তারপর ওর রুমে নিয়ে গেল। আমি সোফায় সে বিছানায় বসলো। সে বললো হঠাৎ তুমি এখানে কিভাবে এলে? বললাম তোমার সাথে দেখা করতে ও সারপ্রাইজ দিতে চলে এলাম। আমি বললাম আমার কিছু কথা আছে যা সামনাসামনি ছাড়া বলা যাবে না। সে বললো বল কি কথা, বললাম আমার বয়স ৫৪ আর তোমার বয়স ৩৩, আমার বউ বাচ্চা আছে, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও কেন? বললো, গত কয়েকমাসে তোমার সাথে কথা বলে তোমার প্রতি একধরনের বিশ্বাস জন্মে গেছে। বললাম এতো তাড়াতাড়ি কি মানুষকে চেনা বা বুঝা যায়? আরো বললাম আমি তো বিবাহিত আমার বউ সন্তান সব আছে। সে বললো আমি তো তোমার ঐ সংসারে যাবো না। বললাম কেন? বললো আমি যেখানে ট্রান্সফার হবো সেখানে কোয়ার্টারে থাকবো আমার মাকে নিয়ে। বললাম তুমি তো চাইলে আনমেরিড ছেলে বিয়ে করতে পার। বললো অনেকে আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছে, কিন্তু তাদের ঝোঁক বেশী আমার চেয়ে আমার স্ট্যাটাস ও আয়ের প্রতি। আমার মা আমার সাথে থাকবে, এটা তারা সহজে মেনে নিতে চায় না। এবার সে বললো, আচ্ছা বলতো, যে মা গত ২০ বছর আমাকে আগলে রেখে ধার কর্জ ও কষ্ট করে লেখাপড়া শিখালো ও মানুষ করলো, সে মাকে দূরে সরিয়ে কিভাবে আমি সুখে থাকি? সেই জন্য ভেবেছিলাম জীবনে বিয়েই করবো না। কিন্তু তোমার সাথে পরিচয় হওয়ার পর আস্তে আস্তে তোমার প্রতি দুর্বল হয়ে গেলাম। সেই জন্যই মত পাল্টালাম। মেয়েটি আবারো বললো, আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। যদিও তোমার অন্য কোন কিছুর প্রতি আমার কোন লোভ নাই। আমি বললাম, তোমার মা ভাই ওনারা কি মেনে নিবে আমার মত একজন বুড়া মানুষকে। বললো আমি রাজি করাব। শুধু তুমি হা বললেই হলো। মেয়েটির দৃঢ়তা দেখে আর কথা না বাড়িয়ে বললাম, তোমার মায়ের সাতে কথা বলবো। তারপর সে তার মায়ের রুমে নিয়ে গেল। ওনার রুমে গিয়ে ওনার শরীরিক খোঁজখবর নিয়ে বিভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বললাম। অনেকক্ষণ কথা বলার পর জিজ্ঞেস করলাম আপনার মেয়েকে এতোদিন বিয়ে দেন নি কেন। বললো বাবারে ও যখন স্টুডেন্ট ছিল তখন অনেক ভাল ভাল বিয়ের প্রস্তাব এসেছিলো।তখন সে বিয়ে করতে রাজি হয়নি। পাস করার পর সে বলতো চাকুরী না হওয়া পর্যন্ত সে বিয়ে করবে না। এরপর বিয়ের জন্য আসলে, সে আমাকে ছেড়ে যাবে না বলে শর্ত জুড়ে দিতো। আস্তে আস্তে তার বয়সও বাড়তে থাকে।ওর চিন্তায় আমি ঘুমাতে পারি না। সারাদিন ওর বিয়ের চিন্তায় আমি অস্থির। ওর বিয়েটা হয়ে গেলে আমি নিশ্চিন্তে মরতে পারবো। আমার এমন একটা ভাল ও চমৎকার মেয়ে বিয়ে না করে থাকবে এটা কিভাবে হয়। এ কথা বলে ভদ্রমহিলা ঝরঝর করে কেঁদে দিলো। বললেন তাকে বলেছি আমাকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে তুই বিয়ে করে সংসারী হ। আরো বললেন, আমি আর কয়দিন বাঁচবো। মরার আগে ওর একটা সংসার দেখে যেতে চাই। চট করে আমার হাত ধরে বললো বাবা তুমি একটা ব্যবস্থা করো। আমি বললাম আমি তো বিবাহিত দুই সন্তানের জনক। দেখলাম তিনি আমার সম্পর্কে সবকিছু জানে, বললেন আমরা ওকে অনেক বুঝিয়েছি কিন্তু তার একটাই কথা সে তোমাকে বিয়ে করবে, না হলে নয়। এখন তুমি বলো আমি মা হয়ে কি করবো। তাঁর কথা শুনে আমারও চোখে জল চলে এলো। নিজেকে সামলে নিয়ে বললাম আমাকে একটু ভাবার সময় দিন, দেখি কি করা যায়। এদিকে আমি যতক্ষণ ঐ বাসায় আছি মনে হচ্ছে আমার সন্তানেরা আমাকে বলছে, বাবা তুমি এগুলো কি করছো। এ বয়সে এগুলো করতে তোমার লজ্জা করে না? আর ঐ মেয়ের সাথে যখন কথা বলেছি তখন বারবার আমার স্ত্রীর চেহারা চেখের সামনে ভেসে উঠছে। আমি নিজেই চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। এদিকে আমার বন্ধু বাইরে বসে বার বার আমাকে ফোন দিচ্ছে। দুপুরে খাওয়ার জন্য মেয়েটি খুব চাপাচাপি করলো। বললাম বাইরে আমার বন্ধু অপেক্ষা করছে, ও সহ একসাথে খাবো। এবার মেয়েটি বললো, আমিও তোমার সাথে বাইরে যাব। বাইরে গিয়ে একসাথে খাবো। মেয়েটি রেডি হয়ে আমার সাথে বের হয়। দুপুরে একসাথে খেয়ে আমার বন্ধু ও মেয়েটি সহ পদ্মার পাড়ে চলে গেলাম। সেখানে বিকাল পর্যন্ত থাকলাম। ভাল করে খেয়াল করে দেখলাম মেয়েটি এক ধরনের বিষণ্নতায় ভুগছে। ঐদিকে সন্ধ্যা ৭ টায় আমার চট্টগ্রাম ফিরার বাস। ততক্ষণ পর্যন্ত বন্ধু ও মেয়েটি আমার সাথে থাকলো। আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য বাসের কাউন্টার পর্যন্ত এসে মেয়েটি হঠাৎ আমার হাত ধরে বলে, আমি তোমার সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকলাম। আরো বললো, যদি কখনো বিয়ে করি তবে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে নয়। খেয়াল করে দেখলাম ওর চোখ ছলছল করছে। নির্ধারিত সময়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে গাড়ি ছেড়ে দিলো, একটু চলার পর চলন্ত গাড়ির পিছনের দিকে দিয়ে তাকিয়ে দেখি মেয়েটি কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে অপলক দৃষ্টিতে বাসের দিকে তাকিয়ে আছে!