সাগরের ঢেউগুলো কি সুন্দর করে বেয়ে বেয়ে আছড়ে পড়ছে তীরে! নেভাল একাডেমির পাশে, সাগরের পাড়ে সারি সারি বেঞ্চি রাখা আছে। তারই একটিতে বসে নিবিষ্ট মনে ঢেউয়ের এই খেলা দেখছে নদী। ঢেউয়ের ছন্দোময় এই খেলা দেখতে অনেক ভালো লাগে নদীর- ভাবে নিজের ছন্দহীন জীবনের কথা। একটি মেয়ের সুন্দরী হওয়া কি অনেক বেশি জরুরী? একজন পুরুষের ভালোবাসা পেতে হলে কতটুকু সৌন্দর্যের দরকার? সাদা রঙে কি সৌন্দর্য বেশি ফুটে? মনের সৌন্দর্য তাহলে কি? শরীরের সুন্দরতা যদি বেশি প্রাধান্য পায় তাহলে মানুষ মন, হৃদয় এসব কেন চায়? কেন যুগে যুগে কবিরা বাঙালী মেয়ের শ্যামল মেয়ের কাজল চোখের বন্দনা করেছেন ? নাকি শুধু একজন পুরুষের কাছেই দৈহিক রুপ বেশি জরুরি ছিল! রায়হানকেকে খুব দেখতে মন চায় । কেমন আছে এখন সে? অফিসের সেই সুন্দরী কলিগের সাথে কি তার সম্পর্ক বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়েছিল?
আপা, এই লন- গরম গরম পেঁয়াজু! অহনই খাইয়া লন, নইলে মজা ফাইবেন না! পেঁয়াজু ভর্তি বাটিটি কাঠের বেঞ্চির একপাশে রাখতে রাখতে বলে পিচকু
আইচ্চা। খাইয়া লইতাচি! হেসে ওর ভাষাতেই জবাব দেয় নদী।
আচ্ছা, পিচকু কেমন নাম? আমি একটি সুন্দর নাম দিই তোমার?
নাম আচে তো-জনি । খুব ছোডকাল থেইক্যা এই দোহানে আচি ত! আদর কইর‍্যা পিচকু ডাকত সবাই। অহনো পিচকুই আচি। মুখের হাসি দেখে বোঝাই যাচ্ছে নামে কিছু এসে যায়না তার
আফা, খাইয়া লন তারাতারি -তাগাদা দিয়েই সে চলে যায় অন্য কাস্টমারের কাছে
শহরের কোলাহল থেকে দুরে, প্রকৃতির টানে বিকেলে অনেকেই ঘুরতে আসে এদিকটায়। দু’চারটা ছুটির দিন বাদ দিলে প্রায় প্রতি শুক্র কি শনিবার একদিন তার এখানে আসা যেন চাই-ই । তাই ঝুপড়ি দোকানের ছোট ছেলেগুলোর কাছে ভালোই পরিচিত। নিজেদের মতো করে তারা একটি নামও রেখে দিয়েছে। মেম আফা । নদীর হাসি পায়, তারা যখন তাকে এই নামে ডাকে। প্রথম প্রথম নদী খুব বিব্রত বোধ করতো, আশেপাশে দেখতো কেউ শুনে ফেলছে কিনা ! লজ্জায় কান লাল হয়ে উঠতো! কারন মেম বলতে ঠিক যা বোঝায় নদী তেমন কিছুই নয়, শধু তার গাড়িটি বেশ দামী ।
তোমরা জানো মেম কেমন হয়? অনেক সুন্দর। শার্ট পরে, জিন্স পরে! আমিতো শাড়ি পরি। দেখতেও কালো!
সিনেমায় দ্যাখচি। মেমরা কত্তো বালো ! আফনের লাহান । মেমগো লাহান আফনিও সুন্দর, কত্তো দামী গাড়ি আফনের গাড়ি!
আমি সুন্দর! বকশিস পেয়ে হোক, আন্তরিকতায় হোক কেউ তাকে সুন্দর বলেছে শুনতেই অনেক ভালো লাগে।
নদী যখন খালি বেঞ্চের এদিক-সেদিক তাকায়, ওরা কিভাবে যেন বুঝে নিয়ে কুত্থেকে একটি খালি বেঞ্চি নিয়ে এসে যত্ন করে মুছে নদীকে বসায়। বলার আগেই ছোট বাটি ভরে ছোট ছোট পেঁয়াজুকে পেঁয়াজ, মরিচের গুঁড়োয় সাজিয়ে বেঞ্চির উপর রেখে দেয়। এর কারনও অবশ্য আছে । ফিরে আসার সময় নদী পেঁয়াজুর দাম মেটানোর সময় আলাদা করে হাতে গুঁজে দেয় বকশিস । মাথায় হাত বুলিয়ে একটু আদরও করে দেয়। নদীর কেন জানি মনে হয় এই আদরটিই ওরা বেশি পছন্দ করে। বয়স চল্লিশের কাছাকাছি হলেও কোল জুড়ে আসেনি কেউ। আসেনি বললে ভুল হবে, আসার সময়ই তো পায়নি ! শ্যামলা রঙের নদীকে যে রায়হান বাবা-মায়ের চাপে পড়েই বিয়ে করেছিল, তা খুব স্পষ্ট করে বিয়ের রাতেই বলেছিল-
ভালোবাসার আশা আমার কাছে করোনা । এই বিয়েতে আমার মত ছিলনা।
মত ছিলনা মানে ! তাহলে বিয়েতে রাজি হলে কেন? মনের অজান্তেই নববধু নদীর মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল
বড় লোকের একমাত্র মেয়ে তুমি, তোমার বাবার সব সম্পদের একমাত্র মালিক! বুঝতে পারছো না? ব্যাঙ্গ ঝরে পড়ে কথার সুরে
ব্যাংকের এই অফিসার যতোই হ্যান্ডসাম হই, বাবা-মায়ের ইচ্ছেকেই মেনে নিতে হলো।
লজ্জায়, ঘৃণায় সারা শরীর জ্বলতে থাকে নদীর । তবুও শুনতেই হবে । তিক্ততা দিয়ে যে সম্পর্কের শুরু সেই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্যে। শুনতে হবে সমাজের জন্যে । সম্মানের জন্যে সর্বোপরি বাবার যে সামাজিক অবস্থান আছে তার জন্যে। শুধুমাত্র গায়ের রঙ শ্যামলা বলে অনেকবার পুতুলের মতো সেজেগুজে বসেছে অনেকবার । পাত্রপক্ষ তকে এড়িয়ে গেছে, মেয়ে পছন্দ নয় বলে যারা অবহেলা করেছে তাদের জন্যে ! কি অদ্ভুত এই সমাজের রীতি ! শ্যামলা রঙের এই চেহারার মাধুর্য কেউ দেখলো না, দেখলো গায়ের রঙ ! কেউ মুল্যায়ন করলো না তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ! যেদিন বাবার বন্ধু, তার ছেলের জন্যে নদীকে চাইলো, বাবা আর যাচাই-বাছাই কিছুই না করে নির্দিদ্বায় রাজী হয়ে গেল বিয়ের জন্যে । আজ নদী বুঝতে পারলো সেদিন রায়হানের নির্লিপ্ততার কারন।
তুমি একটিবার আমাকে জানাতে, সেদিন আমাকে তোমার পছন্দ হয়নি! খুব ধীরে বললো নদী, যেন নিজেকে নিজেই বলছে
কল্পনার চিত্রপটে বিয়ের রাতের যে রোমান্টিক চিত্র আঁকা ছিল, বাস্তবতার মুখোমুখি মেয়ে হৃদয় দিয়ে অনুভব করতে লাগলো শুধু সেই চোখের জলে সেই কল্পনার মিলিয়ে যাওয়া, টুকরো টুকরো হয়ে সেই স্বপ্ন ভেঙে পড়া। স্তব্ধ হয়ে বিছানার একপাশে বসে থাকা রিনিকে ঘুমতে বলে, অন্যপাশে শুয়ে রায়হান কিছুক্ষনের মধ্যেই তলিয়ে গেল গভীর ঘুমে। বাবার দেয়া দামি ফার্নিচারে ভর্তি ছোট ঘরটিতে দম যেন বন্ধ হয়ে আসছিল। আলগোছে বিছানা থকে নেমে এসে দাঁড়ালো জানালার পাশে। হাল্কা চাঁদের আলো বাইরে। কি মনে করে হাত বাড়ালো সেই জোছনায়, দু’হাতে সেই জছনা ভরে নিয়ে পাগলের মতো মাখতে লাগলো মুখে, গলায়, হাতে! যেন জেদ চেপে গেছে, জোছনার আলোয় নিজেকে রূপবতী করে তুলবে ! ক্রমে ঝিমিয়ে পড়লো জোছনাও, রাত শেষ হয়ে পুব আকাশ ক্রমশ ফর্সা হয়ে আসছে।
সকালে নাস্তার টেবিলে সবাই যখন বিয়ের উপঢৌকন নিয়ে প্রসংসায় পঞ্চমুখ, অলক্ষ্যে মেঘাচ্ছন্ন একটি মন হেসেছিল বিধাতার লিখনের উপর, যখন দেখলো নাস্তার টেবিলে রায়হানের আচরণে । একেবারেই স্বভাবিক ! নদী বিশ্বাস করতে পারছিলনা এই কি সেই রায়হান ! রাত আর দিনে একই মানুষের আচরনে কত পার্থক্য! দীর্ঘস্বাস বেরিয়ে আসে নিজের অজান্তেই। হামিমুনে যাওয়া, আত্মীয়-স্বজনের বাসায় দাওয়াত কোথাও কোন ব্যাতিক্রম নেই, ব্যাতিক্রম শুধু সবার অগোচরে, নব-দম্পতির জন্যে নির্ধারিত ঘরে-যেখানে দুটো নর-নারী একই ছাদের নীচে, একই বিছানায় একজন, আরেকজনের কাছে সম্পূর্ণ অপরিচিত! কারো ব্যথায় যদি সময় থেমে যেত, তবে কি হত কে জানে ? সে চলছে ব্যথার সাক্ষী হয়ে নিজের গতিতেই । দেখতে দেখতেই পার হয়ে যাচ্ছে দিন-রাতের ঢেউ ভেঙে মাস । রায়হান কথাও সেই সাথে হয়েছে জড়তাহীন । অফিসের কলিগ মেয়েটির সাথে তার মন দেয়া-নেয়ার কথাও জানা হয়ে গেছে নদীর । নির্লজ্জের মতো অফিস থেকে দেরি করে ফেরার কারন নদীকে বলে যায় অকপটে।
এভাবে আর কতোদিন রায়হান? ধৈর্য্যের সমস্ত বাঁধ একদিন ভেঙেই যায় নদীর
মানে? আমি কি তোমাকে বেঁধে রেখেছি? তুমিতো মুক্ত!
আমি মুক্ত ! তুমি কি ঠিকমতো ভেবে বলেছো কথাটি?
ঠাট্টা করার মতো নিশ্চয় কোন সম্পর্ক আমাদের মধ্যে গড়ে উঠেনি, তাই না নদী?
সেদিনই প্রথম মায়ের কাছে সব কথা খুলে বলেছিল নদী। বাবা শুনে শালিশ-নালিশ অনেক করতে চেয়েছিল।
বাবা, এসব করে তুমি কি রায়হানের মনে আমার জন্যে জায়গা করতে পারবে?
শ্বশুর-শ্বাশুড়ীসহ অনেকেই এসেছিল বেশ কয়েকবার, কিন্তু নদীকে তার সিদ্ধান্ত থেকে আর সরানো যায়নি। অবশেষে বিচ্ছেদ। রায়হানের জীবন থেকে বেরিয়ে বাবার সাথে তার অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । সপ্তাহের দু’টি দিন রাখে নিজের জন্যে। এই দুইদিনের একটি বিকেল সে সাগরপাড়ে যাবেই।
শরতের বিকেলটা বেশ সুন্দর। নীল আকাশে শাদা মেঘগুলো পেঁজা তুলোর মতো ভেসে থাকে। দেখতে অপূর্ব লাগে! স্নিগ্ধতা মিশে থাকে যেন প্রকৃতির সাথে। সূর্য সবেমাত্র পশ্চিমে হেলান দিয়েছে। বেশকিছু জাহাজ নোঙ্গর ফেলে দাঁড়িয়ে আছে তীর থেকে বেশখানিকটা দুরে, সাগর যেখানে গভীর। দৃষ্টি সেদিকে ছুঁয়ে চলে যায় মোহনায়। সাগর যেখান থেকে নদীকে বুকে নিয়ে মিশে গেছে এক হয়ে । ওদিকে তাকিয়েই বেঞ্চের উপর রাখা ছোট্ট বাটি থেকে একটি পেঁয়াজু তুলে নিয়ে মুখে দিতেই, প্রশ্ন শুনে পাশে দেখে তাকেই একজন জিজ্ঞেস করছে-
আপনি নদী না?
চেনে কিনা মনে পড়ছেনা নদীর, তবুও নাম যখন ঠিক বলেছে নিশ্চয় তাকে চেনে। এই ধরণের পরিস্থিতিতে খুব অস্বস্থি লাগে তার । হয়তো অফিসের কেউ হবে-
হ্যা, নদী । ছোট করেই উত্তর দেয়
আমাকে চিনতে পেরেছেন?
কঠিন প্রশ্ন। চিনি বললে নাম যদি জিজ্ঞেস করে ? চিনিনা বলতেও কেমন সংকোচ লাগছে-
হিমেল। ইউনিভার্সিটিতে একসাথে পড়তাম । তবে অন্য ডিপার্টমেন্ট
অন্য ডিপার্টমেন্ট হলে আমাকে চেনার কথাতো নয় আপনার !
তবুও চিনি। ট্রেনে আসা-যাওয়ার সময় আপনার সাথে আমার দেখা হতো
কই মনে পড়ছে না তো তেমনকিছু ! আপনার সাথে কি আমার কথা হয়েছিল কখনো?
না, একবার ভার্সিটিতে গন্ডগোলের সময় আমি, আপনাদের কয়েকজনকে নিরাপদ জায়গায় নিয়েগিয়েছিলাম। এখন মনে পড়ছে?
সরি! আমি বুঝতে পারছিনা আপনি কি বলছেন ! নদী মনে করতে পারছেনা কিছুতেই।
বুঝার কথাও নয়। যেমন বুঝেননি আমি আপনাকে পছন্দ করতাম, একটু থেমে আবার বললো, আমি আপনাকে ভালোবাসতাম
ভার্সিটিতে পড়ার সময়ের কিছু স্মৃতি ভাসা ভাসা মনে আসে । আবছা আবছা মনে পড়ে ট্রেনে একজোড়া চোখ সবসময় তাকে অনুসরন করতো । নদী খুব বিরক্ত হতো। জীবনে কখনো প্রেমের প্রস্তাব দেয়নি কেউ। তাই ওই দৃষ্টিতে ভালোবাসা ছিল কি-না নদী কখনো বুঝতেও চায়নি । ছেলেটির কথায় তাই ধাক্কাটা সামলে নিতে একটু সময় লাগে নদীর । কেউ তাকে পছন্দ করতো, তাকে ভালোবাসতো-জীবনার এতগুলো বসন্ত পার হলেও এই ধরনের কথা জীবনে প্রথম । মনের ভেতর অনেক কোকিল যেন একসাথে ডেকে ঊঠলেও, পুলকিত হয় মন কিছুক্ষনের জন্যে ! প্রেম তাহলে এসেছিল! তার জানার অগোচরে, নিঃশব্দে, নীরবে! সে বোঝেনি ! সাথে সাথেই মনকে শাসায়, টেনে ধরে আবেগের লাগাম। আবেগকে প্রশ্রয় দিতে চায়না সে ।
কিছু বলছেন না? হিমেল নামের ছেলেটি বসেনি এখনো
বাবার অনেক বড় বিজনেস, সব সম্পদের মালিক আমি এবং…
আপনি আপনার হাজব্যান্ডকে স্বাধীন করে দিয়েছেন। এই তো? বলার ধরণে এমন কিছু ছিল, এই প্রথম নদী চোখ তুলে সরাসরি হিমেলের চোখে তাকিয়ে দৃঢ় স্বরে বলে-
‘হ্যা’
নিজের সম্পর্কে বলা খুব বাজে দেখায়, তবুও আপনাকে বলতে হচ্ছে বলে আমি দুঃখিত! আমার সম্পদ আপনার বাবার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। বলতে গিয়ে হিমেলের চোখ ফিরিয়ে তাকায় সাগরে । স্বগতোক্তির মতোই বলে যায়-
আপনার মতো সাগরের প্রেমিক আমিও । মেরিন ইঞ্জিয়ার হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি সাগর-মহাসগরে । অথৈ জলরাশিতে ভাসতে ভাসতে বুঝিই নি জীবনের কত বেলা ভেসে গেলো। মাথায় শুধু একটি চিন্তাই ছিল অনেক টাকার মালিক হতে হবে । কেন জানেন? যেদিন বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো সেদিন যেন ,আপনাদের পরিবারের সামনে আমার পরিবার ছোট হয়ে না যায়…
নদীর বিশ্বাস হতে চায়না এসব কথা। সিনেমার সংলাপের মতো লাগে। এ-ও কি সম্ভব! একই পৃথবীতে দু’জন মানুষের চরিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন! পিচকু আপার মেহমান মনে করে নিজের গরজেই আরেকবাটি পেঁয়াজু রেখে গেছে । কোনমতে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে-
বসুন প্লিজ-
কিছুটা সহজ থাকার ভান করেই বলে আবার,
তো বউ-বাচ্চা নিয়ে এখন ভালোই আছেন নিশ্চয়?
বউ-ই ত হয়নি! বাচ্চা কুত্থেকে হবে? কিছুটা শব্দ করেই হেসে উল্টো প্রশ্ন নদীকে
সেদিন কেন জানি মনে অনেক ভালোলাগা নিয়ে বাসায় ফিরেছিল নদী। সে রাতে আর ঘুম আসেনি । হিমেল বিয়ে করেছে শুনলে কি কষ্ট পেতাম আমি ? নিজের কাছেই নিজের প্রশ্নের উত্তরে হাস্যকর মনে হয় । বিয়ে করে ফেলাটাই স্বাভাবিক ছিল। যদি রায়হানের সাথে তার সম্পর্ক না ভাঙতো তাহলে আজ কেমন লাগতো হিমেলের কথা শুনে? পরদিন বিকেলে আবার যায় নেভালে। আজ কেবল সাগর নয়, আরো কিছু টানছে তাকে। মনের ডাক মনে হয় সে শুনেছে।
বিয়ের প্রস্তাব পাওয়ার পরেও আরো কিছুদিন সময় চেয়ে নিয়েছিল নদী হিমেলের কাছ থেকে। আরো অনেকদিন নেভালের বেঞ্চিতে পিচকুর দেয়া পেঁয়াজু খেতে খেতে গল্প করেছে। সূর্য যখন ডুবে যাওয়ার আগে কমলা রঙ ছড়াতো, নদী হাত বাড়িয়ে দিত সেই রঙ হাতের মুঠোয় নিতে। কখনো পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোতে। হিমেল জিজ্ঞেস করলে হেসে বলতো, কিছু রুপ ধার নিচ্ছি।
কোন রকমের আড়ম্বর ছাড়াই একদম ঘরোয়া পরিবেশেই হয়ে যায় বিয়েটা। সেদিনই দু’জন পাড়ি জমায় কক্সবাজার। মারমেইড বিচ রিসোর্টে রুম বুক করা ছিল আগে থেকেই। বিকেলের কমলা রঙ থেকে রুপ নিতে যেই হাত বাড়ালো নদী, হাতটির উপর নিজের হাত রেখে বললো হিমেল-
সূর্যের কাছ থেকে রুপ ধার চাইতে হবেনা। এসো তোমাকে আমি আমার রঙে রাঙিয়ে দিই…