চার বছরের মিতু ।দাদু ভাইয়ের হাত ধরে স্কুলে যাওয়া আসা করে ।মিতুর বাসার কাছেই স্কুল, তাই গাড়িতে উঠতে হয়না স্কুলে যেতে ও আসতে ।চার মাস চলছে মিতুর স্কুল, এর মধ্যে দাদু ভাই ছাড়া মিতু একদিনও স্কুলে আসা যাওয়া করেনি ।দাদু ভাইয়েই মিতুর সবচেয়ে ভালো বন্ধু ।মিতুর বেস্ট ফ্রেন্ড ।মিতু দেখতে বেশ্ আদুরে এবং ভীষণ বুদ্ধিমতি ।শ্রেণি শিক্ষক এবং স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকবৃন্দ মিতুকে খুব আদর করে ।ক্লাসে কয়েক জনের সাথে মিতুর ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে কিন্তু মিতুর কাছে মিতুর দাদু ভাইয়ের থেকে কেউ ভালো বন্ধু না।
মিতুর বাড়ির পাশে মিতুর বন্ধু শিমুলের বাড়ি ।অনেক বড় এলাকা জুড়ে শিমুলের বাড়ি। বাড়ির চারপাশে অনেক গাছ-গাছালি ও ফুলের বাগান ।সারাদিন দুই/তিন জন লোক দেখা যায় কাজ করতে ।শিমুলের বাবা এলাকার চেয়ারম্যান ।মিতু দাদু ভাইয়ের মুখে শুনেছে শিমুলের পূর্ব পূরুষেরা জমিদার ছিল। শিমুলের বাড়ির সামনে ঊঠানের একপাশে গোলাপ বাগান, নানান রঙের গোলাপ ফোটে সারা বছর ।মিতুর সবচেয়ে পছন্দের ফুল গোলাপ ।প্রতিদিন বিকেল বেলা শিমুল মিতুকে খেলার জন্য ডেকে নেয়, মিতু খেলার চেয়ে গোলাপ দেখার লোভে প্রতি বিকেলে শিমুলের বাড়ি যায়। মিতুর দাদু ভাই প্রতিদিন দিয়ে আসে ঘণ্টাখানিক পর নিয়ে আসে।
মিতু শিমুলের বাড়ির ভেতর ঢুকতেই চায় না, সবসময় ঊঠানে বসে খেলতে চায়।
মিতুর কাছে শিমুলের বাড়ি যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদ্দশ্যে হলো গোলাপ দেখা ।মিতু প্রতিদিন মন ভরে গোলাপ দেখে, গোলাপের উপরে প্রজাপতির নাচন দেখে হাতে তালি দিয়ে খুশিতে হাসে।পাখিরাও ছুঁটাছুঁটি করে বাগানে ,তা দেখে মিতুর ভীষণ ভালো লাগে।শিমুলের বাড়ির গোলাপ বাগানে সবচেয়ে বেশি লাল গোলাপ ।সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে লাল লাল গোলাপ ভীষণ নজড়কাড়া ।
মিতু দাদু ভাইকে বলে, দাদু ভাই জানো শিমুলের বাড়ির গোলাপ বাগান দেখে আজকে আমার মনে হলো যেন আমাদের অনেকগুলো জাতীয় পতাকা ।শুনে মিতুর দাদু ভাই বলে, কেন এমন মনে হলো তোমার ? মিতু বলে,আমাদের জাতীয় পতাকা যেমন সবুজের মাঝে লাল তেমনি দাদু ভাই লাল গোলাপের সাথে সবুজ পাতা ।মিতুর দাদু ভাই বলে আসলেই তো দাদু ভাই লাল ফুল সবুজ পাতা এ তো আমাদের জাতীয় পতাকার মতই সুন্দর ।মিতু দাদু ভাইকে প্রশ্ন করে, দাদু ভাই জাতীয় পতাকা কেন সবুজের মাঝে লাল বৃত্ত ?
মিতুর দাদু ভাই মুচকি হেসে বলে ,আমাদের জাতীয় পতাকা আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। আমরা বাঙালি জাতি, এটা আমাদের জাতীয়তারও প্রতীক ।পতাকার মাপ হয় ১০ঃ৬ ,পতাকা হয় কাপড়ের তৈরি ।কিন্তু আমরা কাগজেও পাতাকা এঁকে থাকি ।আমাদের জাতীয় পতাকাটি সবুজ মাঠ এবং উদীয়মান সূর্যের প্রতীক প্রদর্শন করে ।পতাকাটির রয়েছে সবুজ প্রেক্ষাপট ।সবুজ অংশটি আমাদের জীবন ও শক্তির প্রতীক ।পতাকার মাঝখানে রয়েছে লাল বৃত্ত ,রক্তাত্ত লাল বৃত্তটি অজস্র রক্তের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীনতার প্রতীক ।জাতীয় দিবস গুলোতে অত্যন্ত সম্মানের সাথে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় ।জাতীয় পতাকা আমাদের গর্ব ।দাদু ভাইয়ের সব কথা মিতু মন দিয়ে শুনে ।মিতু দাদু ভাইকে বলে আমি খাতায় জাতীয় পতাকা আঁকতে চাই ।মিতুর দাদু ভাই বলে ,ঠিক আছে আমি আজকে আঁকতে যা যা লাগে সব কিনে আনবো এবং তোমাকে জাতীয় পতাকা আঁকতে সাহায্য করবো ।দাদু ভাইয়ের কথা শুনে মিতু ভীষণ খুশি ।
মিতু দাদু ভাইকে বলে ,দাদু ভাই তুমি বলেছ স্বাধীনতার অনেক গল্প বলবে আমাকে ।আমি সব শুনতে চাই দাদু ভাই ।আর জাতীয় দিবস গুলো সম্পর্কেও জানতে চাই ।মিতুর কথা শুনে মিতুর দাদু ভাই ভীষণ খুশি হয়ে বলে , ঠিক আছে দাদু ভাই আমি তোমাকে আস্তে আস্তে সব শিখাবো এবং তুমি বড় হতে হতে বই পড়ে পড়েও সব জানতে পারবে ।
মিতু দাদু ভাইয়ের গলা জড়িয়ে ধরে বলে , দাদু ভাই আমি যতই বড় হই তুমি কিন্তু আমার বেস্ট ফ্রেন্ড থাকবে ।
দাদু ভাই হেসে বলে , ঠিক আছে, ঠিক আছে আমিই তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড থাকবো সবসময় ।তুমি পড়ালেখা শিখে ভালো মানুষ হবে , দেশের উপকার করবে তোমার জন্য দাদু ভাইয়ের অনেক দোয়া ।