১. পকেট বন্দি

কিছু স্মৃতি মুছে দেয় তীর ভাঙা ঢেউ
ডুবে যাই অতলে ভেসে ওঠে কেউ।
যে ছবি আমার ছিল, যে ছবি তোমার
এখন সেটা পকেট বন্দি পুরোন কোন জামার।
রঙে, ঢঙে নতুন করে সাজিয়ে নিলে তোমায়
ভিন্ন স্বাদের গল্প বুঝি, এখন ভীষণ ভাবায়।
দীঘির জলে জ্যোৎস্নায় বসে কাকে তুমি আঁকো ?
আঁধারভাঙা সেই সময়ে কার স্মৃতি ভুলে থাকো।
কাগজের নৌকো বানিয়ে ভাসালে যার নাম
তার সাথে গল্প ছবি, পুরোনও চিঠির খাম।
আহা! চিঠি পুরনো ছবি
আহা! কত স্মৃতি
আমিও আমরা ভালোই আছি
গেয়ে সময়ের গীতি।

২. ডেকো না আমায়

ওভাবে কেন ডাকো আমায়
আমি নই তো তেমন কেউ
ফেলে আসা পথে কেন তাকাও
কেন হাতছানি দাও
আমার যন্ত্রণায় আমি ডুবে আছি
বুকে জমে আছে কান্নার ঢেউ।
তোমার বুকে শূন্যতা হুল ফোটায়
হতেই পারে…….
আমার পাঁজরেও তো শত সহস্র ক্ষত।
শ্রাবণের আকাশ নেমে আসে নিচে
পাড় ভাঙা নদী তীরে ঠায় দাঁড়িয়ে ভাবি
স্মৃতিময় কত শত দিনে
মেঘের আকাশে উড়াল দিয়েছে সময়
ভুলে যাওয়া পথ বয়ে চলা শ্রোত
এখনো আমাকে নিয়ে
কুয়াশা ভেজা পথে পা ফেলে
পিছে পিছে।
কোলাহলে নিষ্ঠুর হাত পাতো তুমি
চুমুকে গিলে নাও আমার বিছানা পত্র সব
নাকের ডগায় জমে ঘাম
সময়ের শরীর বেয়ে নামে বৃষ্টি
আমি আমার আমিকে ছুঁই
আহা! কী যে অনাসৃষ্টি
ওভাবে আর ডেকো না
ডেকো না আমায়।

৩. বৃষ্টির জলে ঘ্রাণ

ওই দূরের আকাশের মতো
আমি মুগ্ধ হয়ে তোমার দিকে তাকিয়ে থাকি
কাগজি লেবুর ঘ্রানের মতো
তুমি আমাকে জড়িয়ে রাখো
আমি পুতুল খেলায় মগ্ন হই
দুপুরের পোড়া রোদ আমাকে পোড়ায়
সুই সুতা নিয়ে বসে যাই
তোমার জামার বোতাম লাগাতে
জামাটার ঘ্রাণ আমাকে আচ্ছন্ন করে
কাগজি লেবুর রসে ভিজে যায়
ঠোঁট মুখ নাক
আমি নিমজ্জিত হই ঘ্রাণে
মৃদু বাতাস আমকে বিমোহিত করে
আমি আমাকে হাতড়াই
তালাশ করি বুকের মাঝে
আকাশ ঝরায় তুমুল বৃষ্টি

৪. প্রতীক্ষা

তুমি ফিরবে বলেই
পথ চেয়ে বসে আছি
তোমার শূন্যতা আমাকে কাতর করে
চিতার আগুন জ্বলে বুকের ভেতরে
রাতে হাস্নাহেনা বাতাস ছোঁয়
বড় বেশি বেপরোয়া হই আমি
আঙুল ধরে বলতে ইচ্ছে করেছিল
” যেও না”
সেই থেকেই প্রতীক্ষার পারদ
উঠা নামা করছে
চলে এসো তুমি
প্রতীক্ষায় আছি আমি

৫. ঘ্রাণ

কবি
তোমার লেখায় কেয়া ফুলের ঘ্রাণ জড়ায়
বর্ষার ঠিক সন্ধ্যায়
তোমার আঙুলের ছোঁয়ায়
আদর ছড়ায়
মায়া বাড়ায়
বিলি কাটে আমার চুলে
মুখ থেকে মুখশ্রী
তারও পরে নামে অঝোরে বৃষ্টি
আমি বৃষ্টি জলে স্নাত হই
সন্ধ্যা পেরোয়
তারও পরে সন্তর্পণে
বুকের ভেতর হাহাকার বাড়ে
সেতারের ঝালাই হয়ে তোলে শব্দ
ঠোঁট কাপে
নরোম তাপে
উষাকালের আহাজারী
গভীর রাতে কেয়ার ঘ্রাণ বিলোয়
মিশে যেতে যেতে তন্দ্রা হারা হই আমি
মায়ার চোখ দৃষ্টি মেলে নীলিমায়
প্রহরী হয়ে শুকতারা হাত বাড়ায়
সেই হাতে চুমু খাই আমি
নিবিষ্ট হতে চাই গভীরে
আরও অনেক গভীরে

৬. মানুষ ও মনোবৃত্তি

মুখোশের আড়ালে মুখ
ভয়ঙ্কর…
সুন্দরের পিঠে অসুন্দর
বীভৎস…
মানুষের ভেতরে অমানুষ
দুর্বিষহ…
আমার ভেতরে আমির খেলা
নির্লজ্জদের নিয়ে আমার ভাবনা
অকূলপাথার এক ঢেউ জাগানিয়া
দেয়াল জুড়ে ছোপ ছোপ রক্তছাপ
ভেতরে গোঙানোর শব্দ
বিবেক, মূল্যবোধ, মানবিকতা
ভাব মোহ সহনশীলতা
ওসবের বাইরে নয় কেউ
আমিও প্রতিবাদের কণ্ঠে
প্রতিশোধের ধারালো অস্ত্র শান দেই
হাতের কব্জিতে রুমাল বেঁধে
গামছায় চোখ বাঁধতে উদ্যত হই
আমিও তো মানুষ