বিদগ্ধ গুণিজনের উপস্থিতিতে মঞ্চ ছিল আলোকময়। তাঁদের বক্তব্যে অনোমা ৪৩তম সংকলনের পাঠ পরিক্রমা থেকে শুরু করে শুদ্ধ সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চা এবং অনুশীলনের মাধ্যমে আমরা কিভাবে প্রকৃত সমাজ অনুরাগী করে নিজেকে গড়ে তুলতে পারি তাঁর ব্যাখ্যা দিয়ে গেছেন। নতুন ও পরিবর্তিত জীবনের জন্য সংস্কৃতি চর্চা অপরিহার্য । চমৎকার এই শ্লোগান অনোমার প্রকাশনা উৎসব কে অনেক উচ্চ মাত্রায় নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে । অনুষ্ঠানে উপস্থিতির মধ্যে বেশির ভাগই ছিলেন কবি, সাংবাদিক, অধ্যাপক এবং সমাজের শীর্ষ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
উদ্বোধনী বক্তব্য থেকে শুরু করে সমাপনী বক্তব্য পর্যন্ত পিন পতন নীরবতায় সমগ্র অনুষ্ঠান মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে শ্রদ্ধাভাজন লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া বলেন, সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চাকে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে। তরুণদের বই পড়ার অভ্যাস যেন গড়ে উঠে সে বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
শিশুসাহিত্যিক, কবি, সাংবাদিক চট্টগ্রামের গর্ব জনাব রাশেদ রউফ স্যার বরাবরের মতই মুগ্ধতা রেখে গেছেন তাঁর সারগর্ব বক্তব্যে।
তিনি বলেন, লেখক হতে হলে একটি সুন্দর মন থাকতে হবে। অন্তর জগত যদি সুন্দর পরিচ্ছন্ন না থাকে তবে অন্যকে কিভাবে মনের সৌন্দর্যে লেখনীর মাধ্যমে ছুঁয়ে যাবেন?
তিনি আরো বলেন অনোমার বিস্তৃতি আজ শুধু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের নয়, ছড়িয়ে পড়েছে সমগ্র পাঠক সমাজের মাঝে। তাই স্বল্প জনগোষ্ঠীতে আটকে নেই এই সংগঠন। অনোমার লেখক পাঠক সমগ্র দেশ জুড়ে। এইভাবে সকল সাহিত্য সাংস্কৃতিক সংগঠনের লেখক উদারভাবে পাঠকের কাছাকাছি যেতে পারলেই তা সমাজের কল্যাণে আসবে।
অধ্যাপক রীতা দত্ত তাঁর বক্তব্যে প্রত্যেকটা কথা এত গুছিয়ে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন অবাক হয়ে শুধু শুনছিলাম। তিনি বলেন উদার চেতনায় বিশ্বাসী হয়ে সকল কর্মে সকল ধর্মে বিশ্বাসী হয়ে আমরা চমৎকার একটি সমাজ সৃষ্টি করার জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে পারি। মানুষ হিসেবে সর্বদা আমাদের বোধশক্তি জাগ্রত রেখে সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে আমরা একটি সুন্দর সুশীল সমাজ গঠন করতে সক্ষম হবো।
রম্য লেখক সত্যব্রত বড়ুয়া তাঁর রসময় বক্তব্যের মাধ্যমে সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চার বিষয়ে বিদগ্ধ আলোচনা করেন করেন ।
তিনি বলেন সবাই কবি হতে পারে না। কবি শব্দের অর্থ জ্ঞানী। উনি মজা করে বলছিলেন অনেক চেষ্টা করেও নাকি তিনি একটি কবিতা লিখতে পারেনি চার লাইন লেখার পর ভেবেছে তাঁর দ্বারা আর যাই হোক কবিতা লিখা হবে না। তিনি কবিদের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনারা কখনো আপনাদের লেখা কবিতার ব্যাখ্যা দিতে যাবেন না।তাতে কবিতা তাঁর বিশেষত্ব হারাবে। কবিতার মাঝে দর্শন খোঁজা দার্শনিকের কাজ আপনার নয়।
তিনি বলেন লেখক হতে হলে আত্মসমালোচক হতে হবে নচেৎ তাঁর লেখার সমস্ত গুণাবলি জলাঞ্জলি যাবে।
কবি ও নাট্যজন অধ্যাপক সনজীব বড়ুয়া স্যার তাঁর বক্তব্যে বলেন লেখালেখি কিংবা সাহিত্য সংস্কৃতির যে কোনো বিষয় মানুষের মনোজগতে লালন করা সূক্ষ্ম অনুভূতি । সেটাকে শুদ্ধ চর্চার মাধ্যমে সমাজে ছড়িয়ে দেওয়ার মধ্যে বিরল আনন্দ লুকিয়ে আছে।
সভাপতির বক্তব্যে শ্রদ্ধাভাজন ডাক্তার প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়া মহোদয় বলেন, মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে শুদ্ধ সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চার কোনো বিকল্প নেই । করোনারি মহামারিতে আমরা অনেকেই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ।শরীর ভালো রাখতে মনের সুস্থতা সবার আগে। তাই মনের পরিচর্যায় সাহিত্য সাংস্কৃতিক চর্চা অনুশীলন একান্ত আবশ্যক।
সবার বক্তব্যে অনোমার ৪৩ তম সংখ্যার পাঠ পরিক্রমা ছিল মনোমুগ্ধকর সম্পাদকীয় থেকে শুরু করে প্রতিটি লেখার চুলচেরা বিশ্লেষণ আলোচনায় উঠে এসেছে। তাঁদের আলোচনা থেকে যেন বইটির প্রায় পড়ে ফেললাম এক নিমেষে এবং আরো বিস্তারিত জানতে আগ্রহী হলাম। অনোমার ৪৩তম সংখ্যা যখন হাতে পেলাম প্রথমে ভীষণভাবে মুগ্ধ হলাম প্রচ্ছদটি দেখে। বইটির অনন্য অসাধারণ প্রচ্ছদ করেছেন অনোমার সাংস্কৃতিক সচিব শ্রদ্ধাভাজন রঞ্জন বড়ুয়া। পুস্পিত অভিনন্দন জানাই আপনার চমৎকার এই প্রচ্ছদ এর জন্য।
সম্পাদক শ্রদ্ধেয় দাদা আশীষ বড়ুয়া নামটি লিখতেই দুচোখ জলে সিক্ত হয়ে যাচ্ছে। ভীষণ কষ্টে দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে মন। সদা হাস্যোজ্জ্বল সদালাপী গুণী মানুষটিকে করোনার করাল গ্রাসে হারিয়ে ফেলেছি আমরা। ১ অক্টোবর শুধু তাঁর শূন্যতা অনুভব করেছি সারা অনুষ্ঠান জুড়ে। অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর মহাসচিব এবং মুখপত্র অনোমার সম্পাদক শ্রদ্ধেয় দাদা আশীষ কুমার বড়ুয়া সম্পাদিত অনোমার ৪৩ তম সংখ্যাটির কাজ চুড়ান্ত পর্ব পর্যন্ত সম্পন্ন করেছিলেন।
তাঁর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে মরণোত্তর শোকশ্রদ্ধাস্বরূপ তাঁরই উদ্দেশ্যে নিবেদিত হলো অনোমা ৪৩তম সংখ্যা। আলোচকেরা তাঁদের আলোচনায় বারংবার পরম ভালোবাসা শ্রদ্ধায় উচ্চারণ করেছেন আশীষ বড়ুয়া নামটি। সবাই একটি কথাই বলেছেন আশীষ বড়ুয়া অতীত নয় ভবিষ্যত নয় তিনি বর্তমান। তাঁর কর্মে তিনে বর্তমান হয়ে বেঁচে আছেন বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। যেখানে থাকুন দাদা ভালো থাকুন। সুধীজনের জ্ঞাতার্থে বলছি চমৎকার এই সংকলনটি আপনারা সংগ্রহে রাখতে পারেন। ০১অক্টোবর ২১ শুক্রবার চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ডাক্তার প্রভাত চন্দ্র বড়ুয়ার সভাপতিত্বে এডভোকেট জিকু বড়ুয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত হয় অনোমার ৪৩তম প্রকাশনা উৎসব ।
এতে উদ্বোধক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন-রম্য লেখক সত্যব্রত বড়ুয়া, আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রফেসর রীতা দত্ত, কবি ও সাংবাদিক রাশেদ রউফ, কবি ও নাট্যজন অধ্যাপক সনজীব বড়ুয়া। এছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব সুজন কুমার বড়ুয়া, বাবু তুষার কান্তি বড়ুয়া, দীপায়ন বড়ুয়া ।
চমৎকার একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি । এই অনুষ্ঠানে আমি গিয়েছিলাম অনোমার সাংস্কৃতিক সচিব শ্রদ্ধাভাজন রঞ্জন বড়ুয়ার আমন্ত্রণে । অনোমার জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক। সগৌরবে এগিয়ে যাক বহুদূর পর্যন্ত। অনোমা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা শুভেচ্ছা রইল ।